Hot

উদ্যোগ নেই পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তের

পিলখানা হত্যাকাণ্ড শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্ব ইতিহাসে একটি জঘন্যতম ঘটনা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর বহুলআলোচিত এ হত্যাকান্ডের পুন:তদন্তের জন্য বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হলেও গত দু’মাসের কোন উদ্য্গো নেয়া হয়নি। দীর্ঘ ১৬ বছরেও পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা কলকাটি নেড়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। যাদের বিচারের মুখোমুখি হয়েছে, তারা আসলে নেপথ্যের কারিগর নয়। যারা এ ঘটনার আসল কারিগর তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি না করা পর্যন্ত রাষ্টের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের বের করা সম্ভব হবে না। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডে প্রাণ হারান ৫৭ জন সেনা সদস্যসহ ৭৪ জন। আহত হন কয়েক শত। এখনই সময় পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মতো বিশ্ব ইতিহাসে একটি জঘন্যতম ঘটনা তদন্ত করে নেপথ্যে জড়িতদের বের করা। সম্প্রতি রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া কনভেনশন হলে বৈষম্যমুক্ত সশস্ত্রবাহিনী বাংলাদেশ ২.০ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রূপরেখা শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনেও পিলখানা হত্যাকান্ডের নেপথ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে পুন:তদন্তের দাবি জানান অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা। ওই সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির (অব.)।

গত আগস্ট মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য মেজর জেনারেল (অব:) আবদুল মতিন বলেছিলেন, পিলখাখা হত্যাকান্ডের নেপথ্যে দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিলো। এ হত্যাকান্ড অপারেশন ডালভাতের জন্য হয়নি। এটি একটি দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। এছাড়া এ ঘটনায় সহযোগিতা করেছেন আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা। ভারতের মদদে পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানানোর উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনায় যুক্ত ছিল দেশের কিছু বিশ্বাসঘাতক, ছিল ভারতের চক্রান্ত। পুন:তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বের করতে হবে।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিয়ে শহীদ কর্নেল কুদরত-ই-এলাহীর ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এ ঘটনার নেপথ্যে যারা ছিল তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তবে এ রহস্য উদঘাটনের জন্য আমরা মনে করছি একটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটি গঠন করা দরকার। এই কমিটির নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে ঘটনার প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করবে। এ ঘটনার পর আর্মি ও বেসামরিক প্রশাসন আলাদা আলাদা দুইটি তদন্ত করেছে। সেই তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। এই তদন্ত প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করতে হবে।

নেপথ্যের কারিগররা অনেক শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, নেপথ্যে যারা ছিল তারা অনেক শক্তিশালী এতে কোনো সন্দেহ নেই। হাইকোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ঘটনার পেছনে আরও লোক আছে। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে, কিন্তু নেপথ্যের কারিগরদের সমাপ্ত করার জন্য কোনো উদ্যোগ নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সেই বীভৎস দৃশ্যাবলি এদেশের মানুষের মন থেকে আজও মুছে যায়নি। কতিপয় বিডিআর সদস্য যে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করতে পারে, সে কথাও মানুষ বিশ্বাস করে না। তাদের অনেকেই মনে করেন, পর্দার আড়াল থেকে কেউ না কেউ এ ঘটনায় ইন্ধন জুগিয়েছে। সেই ইন্ধনদাতা কারা? তারা কি এদেশেরই লোক? পিলখানা হত্যাকাণ্ডের অনেক আগে ঘটে যাওয়া কিছু কিছু ঘটনা বিচার-বিশ্লেষণ করে অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন, কেবল কিছুসংখ্যক মধ্যম ও নিম্ন সারির বিডিআর সদস্য দ্বারা এতবড় ঘটনার পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়। এ ঘটনায় স্বার্থান্বেষী মহলের কোনো না কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে। আদালতও পূর্ণাঙ্গ রায়ে তারই প্রতিধ্বনি করে বলেছেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে ছিল স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র। দেশ-বিদেশে আলোচিত এই পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে উচ্চ আদালত বলেছেন, ওই ঘটনা ছিল রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক-সামাজিক নিরাপত্তায় বিঘ্ন সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র। শুধু তাই নয়, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একটি দক্ষ, প্রশিক্ষিত বাহিনীকে ধ্বংসেরও চেষ্টা। বিডিআর জওয়ানরা দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়াসহ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর প্রত্যক্ষ হুমকির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে যে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে, সেই কলঙ্কের চিহ্ন তাদের বহুকাল বহন করতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button