উধাও হাসিনার দুর্নীতি!
ভারত পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার নানা কাণ্ডকীর্তির ভিড়ে চাপা পড়তে শুরু করেছে ‘দুর্নীতি’ ইস্যু। ফ্যাসিজম নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। ‘রং হেডেড’ শেখ হাসিনার মানুষ হত্যায় নিষ্ঠুরতা নিয়ে গবেষণা চলছে। হয়তো যুগ যুগ ধরে চলবে এ গবেষণা। কিন্তু তার বহুমাত্রিক যে অপরাধ, সেটির শ্রেণিবিন্যাস করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছে মানুষ। কোনটি রেখে কোনটি বলবে! এর সুফল যার ঘরে উঠছে সেটিও শেখ হাসিনা। শেয়ালের নদী পারাপারের গল্পের মতো মানুষ ঠ্যাঙ রেখে লাঠি নিয়ে ব্যস্ত।
বিভিন্ন সেক্টরে যে নৈরাজ্য, অর্থনীতির যে হাল, সেটি হাসিনার দুর্নীতিরই ‘চেইন-রিঅ্যাকশন’। হঠাৎ করেই মানুষ সর্বত্র ‘সুশাসন’ চাইছে। দ্রব্যমূল্যের লাগাম ধরার কথা বলছে। কিন্তু সম্ভব হচ্ছে নাÑ সেই গোড়ার প্রশ্নে যাচ্ছে না মানুষ; বরং এ দাবি সে দাবি তুলে টাইম ফ্রেম বেঁধে দিচ্ছে। ফ্যাসিস্ট, লুটেরা হাসিনা সরকারের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘তুলনা’ খুঁজে দুই সরকারের ‘অপরাধ’ সমান্তরালে নামিয়ে আনার ধৃষ্টতা দেখানোর চেষ্টা চলছে। গোড়ায় হাত দিচ্ছে না কেউ। এমনকি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলির অনেকে সেই বিতর্কের খোরাক জোগান দিচ্ছেন। কর্মপ্রক্রিয়া ও পরিধির বাইরের বিষয় নিয়ে ব্যস্ত তারা। অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্য, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় ছাড়া বাকিদের কর্মকাণ্ড ধোঁয়াশা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের কার্যক্রম পরিষ্কার নয়। যতটা চোখে পড়ছে, বিভিন্ন সভা-সেমিনার-রাউন্ড টেবিলে তারা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। যেমনটি তারা নিজ নিজ এনজিওর বৈঠকগুলোতে আগে থেকেই দিয়ে আসছেন। এনজিওসুলভ আচরণ থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারেননি। সাদা চামড়ার মানুষ পেলেই ডোনেশন চাইছেন। ভুলেই গেছেন যে, তারা এখন একটি সরকার চালাচ্ছেন।
একই সঙ্গে তারা ভুলে যেতে বসেছেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান কেন হয়েছিল? কী ছিল তাদের দায়িত্ব লাভের প্রতিশ্রুতি? বক্তৃতা-বিবৃতিতে কেবল ‘হাসিনা’ শব্দের আগে ‘ফ্যাসিস্ট’ কথাটি যোগ করেই তারা ‘হাসিনা-বিরোধী’ মনোভাব প্রদর্শনকে যথেষ্ট মনে করছেন। হাসিনা খুনি! হাসিনা ফ্যাসিস্ট! সন্দেহাতীত রকম সত্য। কিন্তু তার নিষ্ঠুরতা, গণহত্যা, দেড় দশকের গুম-খুন নিয়ে কাজ করছে মাত্র দুটি মন্ত্রণালয়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আরেকটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু বাদ বাকি মন্ত্রণালয়গুলো হাসিনার ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে কী করছে? রেগুলার রুটিন-কর্ম ছাড়া তাদের তো তেমন কিছুই করতে দেখা যাচ্ছে না। অথচ হাসিনা যে ‘লুট-তন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করেছিল সেটির মূল বৈশিষ্ট্য ছিল দুর্নীতি। জবাবদিহিহীনতা। হাসিনার সে সব দুর্নীতি নিয়ে কাউকে কিছু করতে দেখা যাচ্ছে না। লিপ সার্ভিস দিচ্ছেন। অথচ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো অ্যাকশন নেই। ক’টি দফতরের কথা বলা যাবে?
বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খনিজসম্পদ। ডাক ও টেলিযোগাযোগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, সড়ক, সেতু ও রেলপথ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়সহ এমন একটি মন্ত্রণালয় কিংবা দফতর নেই যেখানে লুটেরা শেখ হাসিনা লোভের থাবা বসায়নি।
শেখ হাসিনা সরকার আমলে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নামে-বেনামে কত টাকার ঋণ আত্মসাৎ করেছেন। পাচার করেছেন তার হিসাব করছে সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ধারণা দুর্নীতিলব্ধ অর্থ এবং পরবর্তীতে সেটি পাচারের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
শুধু এস আলম গ্রুপই সিস্টেমেটিক্যালি বাংক থেকে অর্থ লুট করেছে। আমি জানি না এমন পরিকল্পনার মাধ্যমে বিশ্বে কেউ এত অর্থ ডাকাতি করেছেন কি-না। হাসিনা ও তার অলিগার্কদের দুর্নীতি প্রসঙ্গে এ মন্তব্য খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের। অথচ হাসিনার গ্র্যান্ড করাপশনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কোনো অ্যাকশন নেই। একজন উপদেষ্টাকেও দেখা যায়নি হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেনো ব্যবস্থা নিতে। এ প্রশ্নে অবশ্য একটি ‘কু-তর্ক’র অবকাশ রয়েছে। বলা হতে পারে, ‘হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তো দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক রয়েছে। এটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়।’ উদ্দেশ্য যদি ‘হাসিনা-সুরক্ষা’ হয় তাহলে প্রশ্ন অবশ্যই যৌক্তিক। কারণ এখন দুদকে কোনো কমিশন নেই। গত ২৯ অক্টোবর হাসিনার দাসানুদাস তিন সদস্যের কমিশন বিদায় নিয়েছে। ৫ আগস্ট হাসিনা উৎখাত এবং ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর হাসিনার তিন দাস দুদকের দণ্ডমুণ্ডে ছিলেন। তারা হাসিনার বিরুদ্ধে একটি অনুসন্ধানও করেনি। মামলা দায়ের তো দূরের কথা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হাসিনার দাসত্ব করে যাওয়ায় তাদের বরং ‘ঈমানদার দাস’ উপাধি দেয়া যেতে পারে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে যেসব উপদেষ্টারা বসে আছেন তারাও কি তাই? তারাও কি হাসিনাকে সুরক্ষার ইজারা নিয়েছেন? যদি তা-ই না হয়ে থাকে তাহলে হাসিনার বিরুদ্ধে একটি তদন্তও তারা নিজ উদ্যোগে শুরু করলেন না কেন?
দুর্নীতি একটি ফৌজদারি অপরাধ। তাই দুদক ছাড়াও এ অপরাধে সরাসরি মামলা করার সুযোগ রয়েছে। একটি হতে পারে থানায়। আরেকটি আদালতে। যেখানেই দায়ের হোক, মামলাগুলো তদন্তের দায়িত্ব দুদকের।
ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যার দায়ে হাসিনার বিরুদ্ধে এ যাবত দুই শতাধিক মামলা হয়েছে। এর একটি মামলাও সরকার বাদি হয়ে করেনি। কিন্তু দুর্নীতির দায়ে হাসিনার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত একটি মামলাও দায়ের হয়নি। না ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ মামলা করেছে। না সরকার বাদি হয়ে করেছে। যা থেকে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, তাহলে কি শেখ হাসিনা দেড় দশকে কোনো দুর্নীতিই করেনি?
আজকে কৃত্রিম বিদ্যুৎ সংকট সৃষ্টি করে আদানির ৭৩২ মিলিয়ন ডলার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে চাপ করা হয়েছে। অথচ বিদ্যুৎ বিভাগ বেসরকারি খাতে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রসহ মোট চায়না প্রযুক্তিতে ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১০টি গ্রিড সংযুক্ত সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ উদ্যোগ ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্ল্যাক মেইলিংয়ের মাধ্যমে আদানির পাওনা পরিশোধে চাপ সৃষ্টির সঙ্গে বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতিবাজ আমলা এবং হাসিনার দোসররাই সম্পৃক্ত কি নাÑ সেই প্রশ্ন উঠেছে। দেড় দশকে বেশি লুটতরাজ হয়েছে বিদ্যুৎ সেক্টরে। রেন্টাল-কুইক রেন্টালের নামে দেশি-বিদেশি কোম্পানিকে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা দেয়া হয়েছে। অথচ হাসিনা এবং তার দোসরদের সেই দুর্নীতি নিয়ে মন্ত্রণালয় কোনো কাজ করছে বলে জানা যায় না। যদিও মানুষের দীর্ঘদিনের দাবিÑ বিদ্যুৎ খাতে হাসিনার দুর্নীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা (মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান) তিনি একাধারে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়েরও উপদেষ্টা। দাবি আদায়ের নামে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি (নাকি শ্রমিক নামধারী আওয়ামী প্রেতাত্মা) ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক টানা তিন দিন অবরুদ্ধে করে রাখে। এতে ওই সড়কে ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। সড়কপরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা কিছুই করেননি কিংবা করতে পারেননি।
অথচ হাসিনা আমলের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কী না করেছেন? প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন। ১০ গুণ বেশি অর্থ খরচ করে নির্মিত রাস্তা রোদে গলে যেত। বৃষ্টিতে ধুয়ে যেত। অন্যদিকে মঞ্চে উঠে যাত্রাপালাকারের ভাষায় বক্তৃতা করতেন। হাসিনা বন্দনা করতেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা হাসিনা-ওবায়দুল কাদেরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণতো দূরে থাক, টুঁ শব্দটি করছেন না।
যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা সেতু দেশের বহু সেতুতে এখনো টোল আদায় করছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার আমলে নিয়োগ পাওয়া ঠিকাদাররা। বলা বাহুল্য, এসব ঠিকাদার সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কার্যাদেশ পেয়েছে। হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদের এদের বসিয়ে গেছেন। আন্তর্জাতিক ও ডমেস্টিক এয়ারপোর্টগুলোর হাসিনার পছন্দের ঠিকাদাররা নিযুক্ত। এছাড়া সিভিল এভিয়েশন, কাস্টমস, ইমিগ্রেশনগুলো এখনো হাসিনা নিযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে। তাদের সহযোগিতায় গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত হাসিনা দোসররা নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়ছে। এসব দফতরে সংঘটিত দুর্নীতির নিয়েও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এখন অবধি নীরব। যাতে এটিই প্রমাণিত হয় যে, শেখ হাসিনা এসব খাতে কোনো দুর্নীতি করেননি।
দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৪ আগস্ট ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি’ ঘোষণা (যা হাসিনার অতি প্রচারিত একটি আপ্তবাক্য) করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি খুচরা বাজারে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন। যদিও তিনিই এ বিষয়ে প্রথম পদক্ষেপ নেননি। এর আগে বিএনপি সরকারের আমলে তৎকালীন বন ও পরিবেশমন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ পলিথিন উৎপাদন বন্ধে ব্যপক সফলতা লাভ করেন। পলিথিন উৎপাদন এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ বিএনপি সরকারই করে গিয়েছিল। সে সময় নেয়া পদক্ষেপগুলোই তিনি বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে পারতেন।
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত হাসিনার মেগা দুর্নীতির বড় পার্টনার ছিলেন ড. হাছান মাহমুদ। কাগুজে প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে জলবায়ু পরিবর্তনের তহবিল তছরূপসহ বনভূমি ইজারা দান এবং বিভিন্ন প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটেছেন হাসিনা। টাটকা সেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেননি এই উপদেষ্টা। অথচ তিনি ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা দিয়ে বসে আছেন।
পাট-বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বহু পাটকল বিক্রি করে দেয়া হয়েছে পানির দামে। পাটকলের মেশিনপত্র, যন্ত্রাংশ, জমিÑ এমনকি মাটি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছে হাসিনার সর্বগ্রাসী সরকার। এ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন ব্রি. জে. (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন। কী উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি? বর্তমান উপদেষ্টা বহুল বিতর্কিত শেখ বশিরউদ্দিন নিজেই পাটকল ব্যবসায়ী। শ্রমিকদের আইনানুগ বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে বন্ধ ঘোষণা করেছেন নিজের পাটকলটি। একটি পাটকলই যেখানে চালু রাখতে পারেন নাÑ তিনি কি করে পারবেন গোটা একটি মন্ত্রণালয় সামাল দিতে? একাধারে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও উপদেষ্টা বটে। হাসিনাঘনিষ্ঠ এ উপদেষ্টা এ দুই সেক্টরে সংঘটিত হাসিনার দুর্নীতি নিয়ে কী ব্যবস্থা নেবেন?
হাসিনা আমলে বড় দুর্নীতিপ্রবণ খাত ছিল স্বাস্থ্য খাত। এ খাতে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু এবং আবজালের মতো মাফিয়া সৃষ্টি করে গেছেন তিনি। একই মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরে সৃষ্টি করে গেছেন কাজী মামুনুর রশিদসহ বেশ কয়েকজন মাফিয়া। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতাকে দেখতে সম্প্রতি তিনি পঙ্গু হাসপাতালে যান। আহত ছাত্রদের না দেখে, কোনো কথা বলেই চলে আসেন তিনি। এই ক্ষোভে চিকিৎসাধীন আহত ছাত্র-জনতা তাকে অবরুদ্ধ করে। এ কারণে জুলাই-অভ্যুত্থানের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। তার কীর্তি-কলাপ দেখে নিজ ডিপার্টমেন্টের লোকজনই হাসি-তামাশা করছেন। উপদেষ্টা নিজেই যখন নিত্যনতুন সংকট সৃষ্টি করছেন, তখন তিনি কি করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন?
হাসিনার দুর্নীতি প্রশ্নে এখন পর্যন্ত কার্যকর ঘোষণা প্রদান কিংবা ব্যবস্থা না নেয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনেক উপদেষ্টার উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। হাসিনার গণহত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে আইন মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু পদক্ষেপ প্রশংসা কুড়াচ্ছে। কিন্তু কোনো দফতরেই হাসিনার দুর্নীতির বিচারের লক্ষণ পরিদৃষ্ট হচ্ছে না। সচেতন নাগরিক সমাজের দাবি, সরকার যেন অবিলম্বে হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে মানুষের সন্দেহ-সংশয় দূর করে। না হলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনেক অর্জনকেই ম্লান করে দিতে পারে হাসিনার দুর্নীতির সঙ্গে আপসকামী মানসিকতা।