Hot

উন্নতির চেয়ে বেশি দুর্নীতি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে দুর্নীতিকে টার্গেট করে। বিগত ১৫ বছরে এ মন্ত্রণালয় দেশের ডিজিটালাইজেশনের যত প্রচার ও প্রচারণা হয়েছে তার চেয়ে বেশি হয়েছে দুর্নীতি। এক পর্যায়ে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে, আইসিটি ভবন হলো আসলে দুর্নীতি প্রযুক্তির মন্ত্রণালয়। কারণ, দুর্নীতি কীভাবে, কতটা করা যাবে সেই পরিকল্পনা করা হতো আগে, পরে নেওয়া হতো প্রকল্প। সংশ্লিষ্টরা জানান, ইনফো সরকার ৩ ও এটুআই, আইডিয়া প্রকল্প, অ্যাপ তৈরি নামে দুর্নীতি, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে ভিডিও গেম তৈরি, নিউইয়র্কে কনসার্টসহ প্রায় ৩২৪টি প্রকল্পে কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতি হয়েছে। উন্নয়ন এবং ডিজিটালের গল্প বলে জনগণের পকেট ফাঁকা করা হয়েছে। অপচয় করা হয়েছে রাষ্ট্রের অর্থ।

২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে আইসিটি বিভাগ দুটি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬০০ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে। এ প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। কিন্তু এ ৬০০ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে গুগল প্লেতে এখন মাত্র ৪৪টি পাওয়া যায়। এ ৪৪টি অ্যাপও ঠিকমতো কাজ করে না। এর বাইরে আউটসোর্সিংয়ের নামে হরিলুট করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। প্রায় সব প্রকল্পের আওতায় আউটসোর্সিং করা হয়েছে। মূলত প্রকল্প থেকে অর্থ সরানো ও তা বিদেশে পাচার করতে ওই মাধ্যম ব্যবহার করা   হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এসবই হয়েছে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নেতৃত্বে। অন্যদিকে এসব কাজের ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, ডিজিটাল চিত্র, বিটিভি, মোবাইলে এসএমএস থেকে শুরু করে নানাভাবে প্রচারণা চালানো হয়। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের বাস্তবায়ন করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের ৩৩টি প্রকল্প তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে। যার আর্থিক মূল্য সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পে বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতি ও টাকা পাচারের মতো অভিযোগ ওঠায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পে সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। এর মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পে দফায় দফায় বাজেটের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পে কেনাকাটার নামে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি খরচ না করেও বিল তোলার একাধিক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১০ সাল থেকে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের প্রকল্প নেওয়া শুরু হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক, আইসিটি বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি ও কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটি। প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাজেটের প্রকল্প ২ হাজার ১৪১ কোটি টাকার জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন (ইনফো সরকার তৃতীয় পর্যায়-সংশোধিত)। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ফোর টায়ার জাতীয় ডেটা সেন্টার স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত) এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ হলো ১২৯৬ কোটি টাকার ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ফেইজ-২ (ইনফো সরকার-দ্বিতীয় প্রকল্প)। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও এর অধীন সংস্থা-দপ্তরগুলোতে ২০০৯ সাল হতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নেওয়া ২১টি প্রকল্প মূল্যায়ন করে ১৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি। ৮ আগস্ট ওই কমিটি গঠন করা হয় যার আহ্বায়ক ছিলেন বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুর রহমান। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পগুলোর বরাদ্দের প্রায় অর্ধেকই লুট করা হয়েছে। এ চিত্র দেখে বিস্মিত তদন্ত কমিটি। এসব লুটপাট হয়েছে সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নেতৃত্বে। তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, প্রায় প্রতিটি প্রকল্পে পাওয়া গেছে লুটপাটের তথ্য। কেনাকাটা হয়েছে আকাশচুম্বী দামে। খরচ হয়েছে বেশুমার। তদন্ত কমিটির প্রধান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অনুবিভাগ) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তদন্তর সময়ই বেশির ভাগ প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় টাকার অঙ্ক বাদ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া প্রকল্প থেকে অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিলে সরকারের ৬ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রসঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশ্লেষক এবং ভয়েস ফর রিফর্মের সহসমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত ১০ বছরে দেখা গেছে, আইসিটি ও টেলিকমিউনিকেশন মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রায় সাত-আট গুণ বেড়েছে। এই বাজেট বাড়ানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাদের বলা হয়েছিল, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শহর ও গ্রামের মানুষের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ানোর সমান সুযোগ করা হবে, একটি আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা হবে। যেখান থেকে বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করা যাবে। অথচ হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করার পরও আমাদের ডিজিটাল বৈষম্য দূর হয়নি। গ্রামের মানুষ এখনো ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না। তিনি বলেন, আমাদের আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি মাত্র হাফ বিলিয়ন মানে ৫০০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে। যেখানে পাকিস্তান ৩ বিলিয়ন ও ভারত ২০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে। সবমিলিয়ে বিগত সরকারের আমলে বেশির ভাগ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে অর্থ লুটপাট করার জন্য। একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়নের যত গল্প সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক বলেছেন তার সম্পূর্ণই এক প্রকার ধোঁকাবাজি। যত না উন্নয়ন হয়েছে তার চাইতে দুর্নীতি হয়েছে অনেকাংশে বেশি। এক কথায় বলতে গেলে উন্নয়ন এবং ডিজিটালের গল্প বলে জনগণের পকেট ফাঁকা করা হয়েছে। আমরা এর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের শাস্তি দাবি করছি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d