Trending

উন্নয়নের ৪০ শতাংশ টাকাই লুট

জনগণের ভোটাধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী সরকার ক্ষমতাকে মনে করেছিল অর্থপাচার, লুটপাট, অনিয়মের প্রতিষ্ঠিত লাইসেন্স। এই সময়ের ব্যবধানে শেখ হাসিনা ও তার পরিবার এবং তাদের সরাসরি প্রশ্রয়ে রাজনীতিবিদ, আমলা, এমপি, মন্ত্রী, পুলিশসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিরা শুধু দেশের বাইরে টাকাই পাচার করেছেন ৩০ লাখ কোটিরও বেশি। ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র’ শিরোনামের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এ ছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক ভারসাম্য, ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি, সরকারের ঋণ, পরিসংখ্যানের মান, বাণিজ্য, রাজস্ব, ব্যয়, মেগাপ্রকল্প, ব্যবসার পরিবেশ, দারিদ্র্য ও সমতা, পুঁজিবাজার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী, জলবায়ু ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে কমিটি।

পদ্মা সেতু, রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগাপ্রকল্পের ওপর তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। কমিটির পর্যবেক্ষণ বলছে, রাষ্ট্রীয় ভুল নীতি ও ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সীমাহীন লুটপাট ও অনিয়ম হয়েছে।

গতকাল রবিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিটির প্রধান গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন সাথী, সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদসহ অন্যরা।

প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি একটা ঐতিহাসিক দলিল। আর্থিক খাতে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তা ছিল একটি আতঙ্কিত বিষয়। আমাদের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে।

কিন্তু কেউ এটা নিয়ে কথা বলেনি।’

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কমিটির প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে। আগামীকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিষয়ে তারা বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবে। প্রতিবেদন জমার সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তিনি অর্থনীতি সংস্কারে কিছু পদক্ষেপ সমন্বিতভাবে পূর্ণাঙ্গ উপস্থাপনের সুপারিশ করেছেন।

তিনি বলেন, আগামী বাজেট পর্যন্ত একটি অর্থনৈতিক স্থিতায়ন কর্মসূচি দরকার। এর সঙ্গে বাজার ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও যুক্ত করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে আলাদাভাবে সংস্কারের যে বিভিন্ন পদক্ষেপ চলছে, এগুলো সময়-নির্দিষ্ট ও সমন্বিতভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। তাহলে বাজার এবং আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত দেশের মানুষের ও বিদেশিদের মধ্যে এক ধরনের আস্থা আসবে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই মাসের শেষ সপ্তাহে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটি বিভিন্ন দলিলপত্র পর্যালোচনা করে এবং নানা অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। সেই ধারাবাহিতায় গতকাল ওই কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

বিভিন্ন খাতে ২৮ ধরনের দুর্নীতি করা হয়েছে

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক খাত ছিল সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত খাত। এর পর রয়েছে ভৌত অবকাঠামো এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতটিও সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে একটি। প্রতিবেদনে বিভিন্ন খাতে ২৮ ধরনের দুর্নীতির উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যাংক খাতে ঋণ জালিয়াতি, ব্যাংকঋণ জারির ক্ষেত্রে জালিয়াতি, অনিয়ম ও ঋণের অপব্যবহার ইত্যাদি চিত্র উঠে এসেছে। রাষ্ট্রীয় শক্তির অন্যায্য ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের মালিকানা দখলে নেওয়া হয়েছিল।

এ ছাড়া অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া অবাস্তব প্রকল্প; অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয় এমন সব প্রকল্প গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়ও বারবার বাড়ানো হয়েছে।

ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো

প্রকল্পের বরাদ্দ আত্মসাৎ করে তা পাচারের জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের পর কৃত্রিমভাবে ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো হয়, যাতে নতুন বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করা যায়। একচেটিয়া দরপত্র প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক সমর্থক, অনুগত ও তোষণকারীরা যেন দরপত্র পায়, তা নিশ্চিত করা হয়, এতে বাদ পড়ে যান যোগ্য ঠিকাদাররা। অদরকারি ও দুর্বল প্রকল্প প্রণয়ন; প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সঠিকভাবে না করার ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের অপচয় হয়েছে, বেড়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ও ব্যয়।

নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণ

প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, বিশেষত প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়েই তাদের মেধা বা যোগ্যতার পরিবর্তে রাজনৈতিক পরিচয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে জমি ও সম্পত্তি দখল; অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ জমি ও অন্যান্য সম্পদ দখল বা কিনেছেন বিগত সরকারের লোকজন। ভূমি অধিগ্রহণের তহবিলের নয়ছয়; রাজনৈতিকভাবে দুর্বল বা যাদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্রব নেই এমন জমির মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কম দামে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছে, অন্যদিকে সরকারি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের টাকা নিয়ে দুর্নীতি করা হয়েছে।

অতিমূল্যায়িত ঠিকাদারি চুক্তি

প্রতিযোগিতামূলক দর আহ্বান না করে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব থাকা ঠিকাদারদের বেশি দরে সরকারি কাজের ঠিকাদারি দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের সম্পদের অপব্যবহার; প্রকল্পের জন্য কেনা গাড়ি, ভ্রমণের বাজেট ও অন্যান্য সম্পদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিজেদের ব্যক্তিগত কাজে এবং রাজনৈতিক ফায়দা নিতে ব্যবহার করেছেন। ঘুষ হয়ে পড়েছিল স্বাভাবিক; সরকারি কাজ পাইয়ে দেওয়া বা দ্রুত কোনো কাজ করাতে হলে সেবাপ্রার্থীদের ঘুষ প্রদান করতে হয়েছে।

সরকারি তহবিলের অপব্যবহার

উন্নয়নের জন্য অভীষ্ট তহবিল নিজেদের রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন রাজনৈতিক নেতারা। অভিজাতদের কর অব্যাহতি প্রদান; প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোকে সুবিধা দিতেই প্রণীত বিভিন্ন রকম অব্যাহতিমূলক করনীতির মাধ্যমে দুর্নীতি করা হয়েছে।

সাড়ে ১৫ বছরে প্রায় ৩০ লাখ কোটি টাকা পাচার

শেখ হাসিনার শাসনামলের গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। অর্থাৎ সাড়ে ১৫ বছরে প্রায় ৩০ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে কর ফাঁকি, কর অব্যাহতির অপব্যবহার ও সরকারি তহবিলের দুর্বল ব্যবস্থাপনার ফলে রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, ব্যাহত হয়েছে উন্নয়ন। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে, যা কিনা এই সময়ের বার্ষিক প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ও প্রকৃত বিদেশি বিনিয়োগের দ্বিগুণেরও বেশি। এ ছাড়া যেসব কর অব্যাহতির সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো অর্ধেক কমানো গেলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দ্বিগুণ বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব বলে উল্লেখ করা হয়েছে অর্থনীতির শ্বেতপত্রে।   

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ভুল ব্যক্তিদের বরাদ্দ দেওয়ায় লাখ লাখ মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের ৭৩ শতাংশ দরিদ্র নয় বলে চিহ্নিত করা হয়, ২০১৬ সালে যাদের হার ছিল ৬৬ শতাংশ। এদিকে মাত্র দুই দিন কাজ না করলে দারিদ্র্যে নিপতিত হবে, দেশে এমন মানুষের সংখ্যা দুই কোটির বেশি। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম এ ধরনের বৈষম্যকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তীব্র করে তুলেছে।

মন্দ ঋণ দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব

শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব স্পষ্ট ছিল। আর এই প্রভাব ব্যাংকিং খাতের সংকটকে আরো গভীর করেছে। আলোচ্য সময়ে যে পরিমাণ ঋণ মন্দ বা বিপর্যস্ত হয়েছে, তা ১৪টি ঢাকা মেট্রো সিস্টেম অথবা ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণের খরচের সমতুল্য। ক্রমাগত ঋণখেলাপি এবং হাই প্রফাইল কেলেঙ্কারি আর্থিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে এবং মূলধনকে উৎপাদনশীল খাত থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।

৭ মেগাপ্রকল্পের ৭০ শতাংশ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে

প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্বেতপত্র কমিটির সদস্যরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, দেশের বড় ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে সাতটির প্রতিটিতে ১০ হাজার কোটি টাকা করে বেশি ব্যয় হয়েছে। ২৯টি বড় প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৭ বিলিয়ন ডলার বা সাত লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরীক্ষা করা সাতটি প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ছিল এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে, জমির দাম বেশি দেখিয়ে এবং ক্রয়ের ক্ষেত্রে হেরফের করে প্রকল্পের ব্যয় সংশোধন করে এক লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। ব্যয়ের সুবিধা বিশ্লেষণ না করেই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

উন্নয়নের ৪০ শতাংশ লুটপাট হয়েছে

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ১৭ লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে এবং এর ৪০ শতাংশ বা প্রায় সাত লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। ১০ শতাংশ যদি অবৈধ লেনদেন ধরা হয় তাহলে এর পরিমাণ হবে কমপক্ষে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor