Bangladesh

উন্নয়ন প্রকল্প শেষ ১২২৬ গাড়ি জমা মাত্র ১৩৮,অবৈধভাবে চলছে কমপক্ষে ২০ হাজার

বিগত ৪ অর্থবছরে ১২২৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কাজ সমাপ্ত হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে প্রকল্পের গাড়ি জমা দিতে হয় সরকারি পরিবহণ পুলে। সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের তথ্যমতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত একই সময়ে (বিগত অর্থবছরে) প্রকল্পের গাড়ি জমা পড়েছে মাত্র ১৩৮টি। সংশ্লিষ্টদের মতে কমপক্ষে ২০ হাজার গাড়ি এখন অবৈধভাবে চলছে। কোনো ধরনের তোয়াক্কা না করেই যে যার মতো করে ব্যবহার করছেন। আর ব্যবহৃত গাড়ি জমা না হওয়ায় সৃষ্ট সংকটের কারণে নতুন গাড়ি কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি এসব গাড়ির পেছনে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থে জ্বালানি ও চালকসহ মেইনটেন্যান্স ব্যয় বাবদ যাচ্ছে কয়েকশ কোটি টাকা।

সূত্রমতে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে প্রকল্পের গাড়ি প্রসঙ্গে সম্প্রতি অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুশাসনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সমাপ্ত প্রকল্পের ব্যবহার করা গাড়িগুলো আছে এবং সেগুলো কি কি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে জানতে চাই।’

সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর এই অনুশাসনের পর সম্প্রতি সব মন্ত্রণালয়ের কাছে সমাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্পের গাড়ির তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিবহণ শাখা। ওই চিঠিতে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহৃত গাড়ি সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে জমাকরণ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পরিপত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, এ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি অবশ্য প্রতিপালিত হওয়া দরকার। এটি পালন করা হলে নতুন গাড়ি কেনার খাতে ব্যয় কমানো যেত। এই মুহূর্তে আমাদের ব্যয় কমানো এক নম্বর অগ্রাধিকার। অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় কমাতে হবে। কিন্তু কতিপয় কর্মকর্তা এসব গাড়ি ফেরত দেন না, লুকিয়ে রাখার প্রবণতাও আছে।

ঘটনার সূত্রপাত ঘটে চলতি অর্থবছরে ডিসি ও ইউএনওদের জন্য ২৬১টি জিপ গাড়ি কেনাকে কেন্দ্র করে। আসন্ন নির্বাচনসহ মাঠপর্যায়ে কাজের জন্য এই গাড়ি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে। প্রতিটি গাড়ির মূল্য ধরা হয়েছে এক কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন ফি ৮০ হাজার ৫০০ টাকা। এ হিসাবে একটি গাড়ি কিনতে মোট ব্যয় হবে এক কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা। এই বৈঠকের কার্যবিবরণীর সিদ্ধান্ত সারসংক্ষেপ আকারে পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য। প্রধানমন্ত্রী সে প্রস্তাবে অনুমোদন না দিয়ে কয়েকটি অনুশাসন দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘২৬১টি গাড়ি কিনতে কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন? জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ে কি কোনো গাড়ি নেই? কোথায় কটা গাড়ি আছে? সমাপ্ত প্রকল্পের ব্যবহার করা গাড়িগুলো আছে এবং সেগুলো কি কি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে জানতে চাই। গাড়ি ক্রয়ের প্রস্তাবে মূল্য উল্লেখ করা হয়নি কেন?’

সমাপ্ত প্রকল্পের গাড়ি নিয়ে পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করা হয়। দেখা গেছে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৯৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। আইন অনুযায়ী ৬ মাসের মধ্যে অর্থাৎ পরবর্তী অর্থবছরের মাঝামাঝিতে এসব প্রকল্পের কয়েক হাজার গাড়ি সরকারি পরিবহণ পুলে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি পরিবহণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে গাড়ি জমা পড়েছে ৪১টি, এরমধ্যে কার ২৪টি, জিপ ১০টি, মাইক্রোবাস ৪টি ও পিকআপ ৩টি। আইএমইডির তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৫০টি উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হয়। কিন্তু পরবর্তী অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২১-২২ এ জমা পড়েছে মাত্র ৩৩টি গাড়ি, যার মধ্যে কার ৫টি, জিপ ১৫টি, মাইক্রোবাস ৬টি, পিকআপ ৫টি ও মোটরসাইকেল ২টি। আইএমইডির রিপোর্টে দেখা গেছে-২০২১-২২ অর্থবছরে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৩৪৬টি। এসব প্রকল্পের ব্যবহৃত গাড়ির মধ্যে পরবর্তী অর্থবছরে (২০২২-২৩) জমা পড়েছে ৩৫টি, যেখানে কার ২০টি, জিপ ১০টি, মাইক্রোবাস ৩টি ও মোটরসাইকেল ২টি। গেল অর্থবছরে (২০২২-২৩) উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হয়েছে ৩৩৭টি। এসব প্রকল্পের কোনো গাড়ি এখনো জমা পড়েনি। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে গাড়ি জমা পড়েছিল ২৯টি।

সরকারি পরিবহণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি গাড়ি ব্যবহার হয়। এক্ষেত্রে সমাপ্ত প্রকল্পের পিডিকে অন্যত্র বদলি করার আগে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের গাড়ি জমা দেওয়া এবং পরিবহণ পুলের ছাড়পত্র দাখিল বাধ্যতামূলক করা হলে গাড়ির অপব্যবহার রোধ হবে। এছাড়া প্রকল্পের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আইএমইডি গাড়ির হিসাবটি নিশ্চিত করতে পারে। নতুবা সমস্যার সমাধান হবে না।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদ্যুৎ, দুর্যোগ ও রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পে ব্যবহৃত চারশ গাড়ি আইন অনুযায়ী সরকারি পরিবহণ পুলে জমা দেওয়ার কথা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গাড়িগুলো জমা হয়নি। পাশাপাশি এসব গাড়ির মধ্যে ৬৯টির হদিসও নেই। একইভাবে দেখা গেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের অধীন দুটি প্রকল্পের মেয়াদ ৪ বছর আগে শেষ হলেও শতাধিক গাড়ি সরকারি পরিবহণ পুলে জমা দেওয়া হয়নি। প্রকল্পের অর্থে কেনা গাড়িগুলো বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে। এ বিষয়ে অডিট বা নিরীক্ষা আপত্তি দিয়েছে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের অধীন বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অডিট অধিদপ্তর। সেই আপত্তি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

প্রকল্পের গাড়ি জমা না দেওয়া প্রসঙ্গে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহণ কমিশনার মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর বলেন, প্রকল্প শেষে ৬০ দিনের মধ্যে গাড়ি জমা না দেওয়া সরকারি নির্দেশনার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। এ বিষয়ে একাধিকবার দপ্তরগুলোকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিগত ৫ অর্থবছরে (২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪) পর্যন্ত সরকারি যানবাহন কেনা বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৫ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। একই সময়ে জ্বালানি তেল খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের মতে, পুরোনো গাড়িগুলো যথাসময়ে পরিবহণ পুলে জমা হলে সম্প্রতি ডিসি ও ইউএনওদের জন্য ২৬১টি গাড়ি কেনার প্রয়োজন হতো না। পুরোনো গাড়িগুলোই সংস্কার করে ব্যবহার সম্ভব হতো। যার মাধ্যমে এই মুহূর্তে গাড়ি কেনার ৩৮০ কোটি টাকা সাশ্রয় হতো।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d