Hot

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের সম্পদের তথ্য অনুসন্ধান করতে পারে ইসি এনবিআর ও দুদক

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় ৬৭ শতাংশের পেশা ব্যবসা। প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৯০ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১১ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন কোটিপতি। ঋণগ্রস্ত প্রার্থী ৩১৫ জন। এ ধাপের প্রার্থীদের আয় ও সম্পদের তথ্য (হলফনামার ভিত্তিতে) বিশ্লেষণ করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল সোমবার ধানমন্ডিতে সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

টিআইবি বলছে, জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় পর্যায়েও রাজনৈতিকভাবে একদলীয় আধিপত্যের বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি ব্যবসায়ী স্বার্থ প্রাধান্য পাচ্ছে। এ ধাপে মন্ত্রী-এমপিদের অন্তত ১৮ স্বজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রার্থীদের হলফনামায় প্রদর্শিত আয় ও সম্পদ স্বপ্রণোদিতভাবে খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

২১ মে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ৭১ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি ছিলেন ১০৫ জন। এর আগে ৮ মে অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ৭০ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী এবং কোটিপতি প্রার্থী ছিলেন ৯৪ জন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রার্থীদের হলফনামায় অস্থাবর সম্পদের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, তার ভিত্তিতে কোটিপতির হিসাব করা হয়েছে। ভূমির মতো স্থাবর সম্পদের মূল্য নির্ধারণ কঠিন হওয়ায় তা হিসাবে আনা হয়নি।

টিআইবি বলছে, এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনের অংশগ্রহণ থামাতে পারেনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সংস্থার বিশ্লেষণে দেখা যায়, তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৬৬ দশমিক ৫৩ শতাংশই ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন কৃষিকাজ। পেশার ক্ষেত্রে তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে আইন পেশা (৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ) ও শিক্ষকতা (৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ)।

ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৬৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ নিজেদের ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ গৃহিণী। গৃহস্থালির কাজকে তারা পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রার্থীদের প্রায় ৩২ শতাংশ পেশায় ব্যবসায়ী। টিআইবির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট বাড়ছে। অন্যদিকে কৃষিজীবী ও শিক্ষকতায় যুক্ত প্রার্থী কমছে। 

তৃতীয় ধাপে আগামীকাল বুধবার ৯০ উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে। এ ধাপে ১১২ উপজেলায় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় সব পদে একক প্রার্থী থাকায় ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। দুটি উপজেলায় ভোট আগে স্থগিত করা হয়। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে ১৯ উপজেলায় ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।

ঋণগ্রস্ত ও সম্পদশালীর শীর্ষে এমপির স্ত্রী ফেরদৌসী
প্রার্থীদের মধ্যে অস্থাবর সম্পদশালীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন নরসিংদীর শিবপুরের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফেরদৌসী ইসলাম। তিনি সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লার স্ত্রী। তাঁর মোট অস্থাবর সম্পদ ১৭৪ কোটি ১১ লাখ টাকার। পাশাপাশি ১৮৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ঋণগ্রস্তদের তালিকায়ও শীর্ষে তিনি। তাঁর পরেই রয়েছেন ১২৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ঋণ থাকা মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আওলাদ হোসেন মৃধা। এ তালিকায় ৩ নম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ, তাঁর ঋণ ৭৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। তৃতীয় ধাপে ঋণগ্রস্ত ৩১৫ জনের মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ১৭৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ১১২ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩৫ জন।

এ ধাপের প্রার্থীদের মধ্যে ফেরদৌসী ইসলামের পরেই সর্বোচ্চ সম্পদের মালিক চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর জাহেদুল হক, তাঁর সম্পদ ৩১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার প্রার্থী মোখলেছুর রহমান। তাঁর অস্থাবর সম্পদের মূল্য ১৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

আয় বেশি বেড়েছে কক্সবাজারের নুরুল আলমের
২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময়ের তুলনায় আয় বাড়ার দিক দিয়ে সবার ওপরে কক্সবাজারের টেকনাফের চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আলম। তাঁর আয় বেড়েছে ১০৪ গুণ। ২০১৯ সালের নির্বাচনের সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহমুদুল হাসানের। তাঁর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ৯৮ গুণ।

‘জনস্বার্থের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে না’
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বৈধভাবে আয় বৃদ্ধি পাবে, এটিই প্রত্যাশিত। কিন্তু ক্ষমতায় থাকলে অস্বাভাবিকভাবে আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় আসছেন কিনা এবং মুনাফা করার উদ্দেশ্যে আসছেন কিনা– সেটিই বড় প্রশ্ন। তথ্য বলছে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতায় থাকলে অনেকের আয় ও সম্পদ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এ থেকে বোঝা যায়, জনস্বার্থের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে না।
বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কালো টাকা বৈধ করতে দেওয়ার সুযোগ দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনে নেই। এর মধ্য দিয়ে সরকার জনগণকে বার্তা দিচ্ছে– আপনারা চুরি করেন, দুর্নীতি করেন, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেন। বছর শেষে আমাদের কাছে আসেন, আমরা ক্লিন সার্টিফিকেট দিয়ে দেব। এর মধ্য দিয়ে দুর্নীতিকে উৎসাহিত ও অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) সুমাইয়া খায়ের, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর ইকরামুল হক ও ডেটা ভিজুয়ালাইজেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর কে এম রফিকুল আলম। হলফনামা বিশ্লেষণের তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের ডেটা ভিজুয়ালাইজেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর রিফাত রহমান।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d