উল্টো চ্যালেঞ্জের মুখে মার্কিন সংস্থাগুলো: চীনের বিকল্প প্রযুক্তি উদ্বেগ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের
এ সপ্তাহের শুরুতে যখন মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমন্ডো চীন সফর করেন, তখন চীনের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি নির্মাতা ‘হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কোং’ তার নতুন স্মার্টফোন ‘মেট ৬০ প্রো’ বাজারে ছাড়ে। সোমবার অনলাইনে উদ্বোধনকৃত মেট ৬০ প্রো কোনো সাধারণ মোবাইল নয়। ফোনটির ভেতর একটি অত্যাধুনিক চিপ রয়েছে, যা সম্পূর্ণভাবে চীনে পরিকল্পনা এবং তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে চীন মার্কিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তার প্রযুক্তিগত ক্ষমতার একটি নতুন উচ্চমাত্রা উপস্থাপন করেছে এবং বাজারে এটির আবির্ভাব ওয়াশিংটনে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে যে, মার্কিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা চীনের এ প্রযুক্তিগত সফলতা আটকাতে সক্ষম নয়। বরং এটি মার্কিন প্রযুক্তির বিকল্প তৈরি করার প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করতে উৎসাহিত করেছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ঘোষণা করেছে যে, ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রকে দেখিয়ে দিয়েছে যে, চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ একটি ব্যর্থতা ছিল। চীনের সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম সিজিটিএন এক্স এর একটি পোস্টে, যা পূর্বে টুইটার নামে পরিচিত ছিল, বলা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর হুয়াওয়ের এটি প্রথম উচ্চতর ক্ষমতা সম্পন্ন ফোন। ওয়াশিংটনভিত্তিক ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান অ্যালব্রাইট স্টোনব্রিজ গ্রুপের প্রযুক্তি নীতির নেতৃত্বদানকারী পল ট্রিওলো নতুন ফোনটিকে হুয়াওয়ের প্রাক্তন প্রযুক্তি সরবরাহকারীদের, তথা বেশিরভাগ মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি বড় ধাক্কা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‹এর একটি প্রধান ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য হল এটি দেখানো যে, মার্কিন প্রযুক্তি ছাড়া সম্পূর্ণভাবে ডিজাইন করা এবং এমন একটি পণ্য তৈরি করা সম্ভব, যা আধুনিক পশ্চিমা মডেলের মতো ভালো নাও হতে পারে, তবে যথেষ্ট দক্ষ।
অনলাইনে ক্রেতাদের পোস্টগুলো বলছে যে, মেট ৬০ প্রো এর দ্রুততা এবং দক্ষতা অন্যান্য সেরা ৫জি স্মার্টফোগুলোর মতোই। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জাপানের সংবাদপত্র ‘নিক্কে এশিয়া’ জানিয়েছে যে, সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন (এসএমআইসি) হুয়াওয়ের জন্য চিপগুলো তৈরি করতে ৭ন্যানোমিটার পরু চিপ ব্যবহার করেছে, যেখানে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির তৈরি অ্যাপলের সর্বশেষ মডেলের আইফোন চিপগুলো ৪ন্যানোমিটার পুরু। ন্যানোমিটার হল চিপের পুরুত্বের একটি পরিমাপ, যা যত কম হবে, তত ভাল। একটি সাধারণ কাগজের পাতা প্রায় ১লাখ ন্যানোমিটার পুরু হয়ে থাকে।
হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের অর্থনীতিবিদ উইলি শিহ্ বলেছেন যে, হুয়াওয়ের অগ্রগতি গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যা ঘটেছিল, তার উদাহরণ। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ প্রযুক্তিটি তৈরি করেছিল এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের দূরে রাখতে এর রপ্তানি সীমিত করে দিয়েছিল। কিন্তু রফতানি বিধিনিষেধ মস্কো এবং অন্যান্য সরকারকে তাদের নিজস্ব জিপিএস সংস্করণ তৈরি করতে বাধ্য করেছিল। উইলি বলেছেন, ‘আপনাকে ভাবতে হবে যে হুয়াওয়ের ক্ষেত্রেও এখন একই বিষয় ঘটছে কিনা।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বড় তথ্যভান্ডারগুলোর মতো উদীয়মান ক্ষেত্রগুলোতে চীনের অগ্রগতি ব্যাহত করার জন্য দেশটির উন্নত সেমিকন্ডাক্টর কেনা বা তৈরি করার ক্ষমতা হ্রাস করা, যেটিকে এই প্রযুক্তিগুলোর মস্তিষ্ক বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এর বিপরীতে, ইন্টেল এবং কুয়ালকমের মতো মার্কিন সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন বাজেটে সঙ্কোচন ঘটেছে এবং তারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি হারিয়েছে। মার্কিন ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন যে, এটি তাদের দীর্ঘমেয়াদী সামর্থ্যরে উপর চাপ তৈরি করবে, এমন একটি শিল্পে যেখানে প্রযুক্তির দৌড়ে শুধুমাত্র গুটিকয়েক সর্বোচ্চ শক্তিশালী এবং দ্রুততম প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারে।