উষ্ণতম বছরের রেকর্ড ভাঙবে ২০২৪ সাল
![](https://miprobashi.com/wp-content/uploads/2024/06/in-4-2406261514-780x450.jpg)
পৃথিবীর উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার কথা জানিয়ে চরম বিপদের সংকেত দিয়েছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা। এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, পৃথিবীর উষ্ণতম বছরের রেকর্ড ভাঙতে পারে ২০২৪ সাল। আবহাওয়া সংক্রান্ত বার্ষিক রিপোর্টে সবচেয়ে উষ্ণ দশক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ২০১৪ থেকে ২০২৩-এর সময়সীমাকে। ২০২৩ সাল উষ্ণায়নের পুরনো সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে।
চলতি বছর ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখেছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে ৬২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানীরা বলেছেন, গত বছরের তুলনায় ২০২৪ সাল আরও বেশি রেকর্ড গরম পড়ার এক-তৃতীয়াংশ আশঙ্কা রয়েছে। গত ২০২৩ সাল ছিল বিশ্বে ১০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ গরমের বছর। ইউরোপ থেকে আমেরিকা তীব্র দাবানল, মধ্যপাচ্যের দেশগুলোতে রেকর্ড ভাঙা দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়। এশিয়ার দেশগুলোতে খরায় পুড়েছে ফসলের মাঠ। তবে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার এমন পরিবর্তন হঠাৎ করে ঘটেনি। বরং গত এক দশক ধরেই পৃথিবীর আবহাওয়া উষ্ণতার দিকে মোড় নিচ্ছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা গত বছরে গড়ে প্রায় ১ দশমিক ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়া ছিল উদ্বেগের একটি বিষয়।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার প্রধান আন্দ্রিয়া সাওলো একে বিশ্বের জন্য রেড অ্যালার্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের দিকটি আরও ব্যাপক হয়ে উঠবে। সাওলোর মতে, ২০২৩ সালটি সমুদ্রের পানির তাপমাত্রার অভূতপূর্ব পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে। তিনি বলেন, হিমবাহ গলে যাওয়ার মাত্রা ব্যাপক বৃদ্ধি হয়েছে। উষ্ণায়নের এই ধাক্কায় গত বছর সমুদ্রের পানির উচ্চতার সর্বোচ্চ বৃদ্ধি হয়েছে। আর সাগরের পানি গরম হয়ে সেখানকার বাস্তুতন্ত্রে বিরাট ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, উষ্ণায়নের এই প্রভাব দুনিয়াজুড়ে মানুষের জীবনে যে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে চলেছে, বিশেষ করে বন্যা ও খরা, চরম তাপমাত্রার প্রভাবে মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা কিংবা খাদ্য সংকটের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের চারটি মহাদেশের বিভিন্ন শহরে তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তাপমাত্রা রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। সৌদি আরবে এবার প্রায় ২০ লাখ মানুষ পবিত্র হজ পালন করেছেন। হজের সময় কয়েকটি এলাকায় তাপমাত্রা ছিল ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে প্রায় এক হাজার হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ভূমধ্যসাগর অঞ্চলেও গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন। তাপপ্রবাহের কারণে সেখানে দাবানল সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, দাবানলের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে পর্তুগাল থেকে গ্রিস পর্যন্ত। আলজিরিয়ায় আফ্রিকার উত্তর উপকূলেও সৃষ্টি হয়েছে দাবানল। ইউরোপের কয়েকটি দেশে চরম তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। গরমের কারণে এ বছর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বহু পর্যটকের মৃত্যু ও নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চলতি সপ্তাহে সার্বিয়ায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। দেশটিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মানুষকে ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। মন্টেনেগ্রোর অবস্থাও ভয়াবহ। সেখানকার মানুষদের বিকেলের আগ পর্যন্ত ছায়ার নিচে থাকতে বলেছে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।