International

উ. কোরীয় সেনারা ‘সুশৃঙ্খল’ ও অত্যাধুনিক গোলাবারুদে সুসজ্জিত, বলছে ইউক্রেন

দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া রাশিয়ায় আরও সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। নতুন এই সেনারা ইউক্রেনের মাটিতেই রুশ সেনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়বে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তিন বছরে পা রাখতে চলেছে, এরমধ্যে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী একের পর এক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। কিয়েভের সামনে আরেকটি প্রতিকূলতা আসার কথা ইতোমধ্যে জানা যাচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া রাশিয়ায় আরও সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। নতুন এই সেনারা ইউক্রেনের মাটিতেই রুশ সেনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়বে।

সম্প্রতি কিছু উত্তর কোরীয় সেনাকে আটক করতে পেরেছে ইউক্রেন। তারা জানিয়েছে, যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে শিখছে উ. কোরীয় সেনারা, এবং আরও সুশৃঙ্খল হয়ে উঠছে।

এদিকে গত শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জানান, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উ. কোরিয়ার সেনা মোতায়েনের প্রায় চার মাস পার হয়েছে। এরমধ্যেই অনেকে হতাহত ও যুদ্ধবন্দি হওয়ায়— আরও সেনা মোতায়েনের পদক্ষেপ ও প্রস্তুতি জোরকদমে চলছে বলে আমরা ধারণা করছি।’

এদিকে ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (জিইউআর) এর তথ্যমতে, যুদ্ধহতদের শূন্যস্থান পূরণ করতে গত ২ জানুয়ারি যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থানগুলোয় উত্তর কোরীয় সেনাদের মধ্যে রদবদল করা হয়েছে। অর্থাৎ, যেসব অবস্থানে সেনা সংখ্যায় ঘাটতি হয়েছিল— সেখানে সংখ্যায় বেশি থাকা ইউনিট থেকে সেনাদের মোতায়েন করা হয়।

জিইউআর অনুমান করছে, রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে লড়তে এপর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার সেনা পাঠিয়েছে উ. কোরিয়া। গত ৪ নভেম্বরে এই সেনারা রাশিয়ায় পৌঁছায়, এর ১০ দিন পরে তাঁরা যুদ্ধে যোগ দেয়।

উত্তর কোরীয়রা যুদ্ধে যোগ দেওয়ার পর থেকে তাঁদের অনেককে হতাহত করার দাবি করেছে ইউক্রেন, তবে ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা কমে এসেছে, কারণ উ. কোরীয়রাও আত্মরক্ষার কৌশল রপ্ত করছে। আধুনিক এ যুদ্ধের বাস্তবতা থেকেও তাঁরা শিখছে।

ইউক্রেনের দাবিমতে, যুদ্ধে যোগদানের প্রথম ৪০ দিনে ৩ হাজার উ. কোরীয় হতাহত হয়, অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৭৫ জন করে। কিন্তু, এরপরের ২০ দিনে মাত্র এক হাজার জন হতাহত হয়েছে, অর্থাৎ দৈনিক হতাহতের গড় সংখ্যা ৫০ জনে নেমে এসেছে।

আল জাজিরা জানায়, এসব সংখ্যা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি, তবে পশ্চিমা কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক সময়ে এসব তথ্যের পক্ষেই মত দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া বিশেষজ্ঞ কেইর গিলেস বলেন, ‘যুদ্ধে হতাহতদের শূন্যস্থান পূরণে উত্তর কোরিয়ার নতুন সেনা না পাঠানোর কোনো কারণ নেই। তাঁরা রাশিয়ায় উ. কোরীয় বাহিনীর সম্প্রসারণ চায়।’

আল জাজিরাকে তিনি আরও বলেন, ‘(হতাহতের) যেসব সংখ্যা জানা যাচ্ছে, সেগুলো সঠিক হলে— (রাশিয়ায়) উত্তর কোরীয় বাহিনীর আরো জনবল দরকার। এর বিনিময়ে (রাশিয়ার থেকে) উত্তর কোরিয়া যা পাচ্ছে, সেটিও তাদের কাছে মূল্যবান। ফলে বর্তমানে যে বাহিনী রয়েছে— সেটি ভবিষ্যতে আরও বড় সেনা মোতায়েনেরই ইঙ্গিত কেন হবে না?’

সেনা পাঠিয়ে উত্তর কোরিয়ার লাভ

রাশিয়াকে সেনা দিয়ে পিয়ংইয়ং বেশকিছু সুবিধা পাচ্ছে। এরমধ্যে রাশিয়ার থেকে অর্থ আয় করা ছাড়াও, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও দৃঢ় করার সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনিভাবে আধুনিক যুদ্ধ লড়ার অভিজ্ঞতাও অর্জন করছে।

১৯৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে কোনো ধরনের বড় সংঘাতে অংশ নেয়নি উত্তর কোরীয় সেনারা। ফলে আধুনিক যুদ্ধের বিষয়ে দেশটির সেনাদের ব্যাপক অনভিজ্ঞতা রয়ে যায়। ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করা যাচ্ছে। আবার ন্যাটো মানের সমরাস্ত্র ও যুদ্ধ কৌশলের বিরুদ্ধে নিজেদের শক্তি পরীক্ষাও করতে পারছে। রাশিয়ার আধুনিক অস্ত্রগুলোর সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কেও জ্ঞানলাভ করছে উত্তর কোরীয় সেনারা। এসব অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কোরীয় উপদ্বীপের যেকোনো সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে পারবে তারা।

গত বছরের অক্টোবরে দ. কোরিয়ার হানকুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেন স্টাডিজের প্রভাষক ও বিশেষজ্ঞ ওলেনা গুসেইনোভা বলেন, তাঁর মতে অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে উত্তর কোরিয়া ২০ হাজার সেনা পাঠাতে পারে, যেটি তাদের জন্য বাস্তবসম্মত। তিনি একথা ফ্রেডরিখ নোম্যান ফাউন্ডেশনের একটি গবেষণাপত্রে। 

ওলেনার ধারণা করছেন, রাশিয়ার কাছে ৫৫০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে উ. কোরিয়া। এরমধ্যে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। তিনি লিখেছেন, রাশিয়ার যুদ্ধ উদ্যোগে ৫ থেকে ২০ হাজার সেনা মোতায়েন করলে— কিম জং উন বছরে সাড়ে ১৪ কোটি থেকে ৫৭ কোটি ডলারের বেশি রাজস্ব আয় করতে পারবেন।’

‘এছাড়া, উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর সক্ষমতা অনুযায়ী, তাত্ত্বিকভাবে তিনি সর্বোচ্চ এক লাখ সেনা পাঠাতে পারেন। তবে প্রকৃতঅর্থে এত বিপুল সেনা মোতায়েন সম্ভব নয়। কারণ তাতে করে উ. কোরীয় সেনাদের ওপর বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবটাও ব্যাপকভাবে পড়ার ঝুঁকি থাকবে।’ 

উচ্চ মানের গোলাবারুদ রয়েছে উত্তর কোরীয় সেনাদের কাছে

কুর্স্কে যুদ্ধরত ইউক্রেনের ১৭তম হেভি মেকানাইজড ব্রিগেডের একজন সার্জেন্ট ওলেগ চাউস বলেন, বড়দিনের আগে রুশ বাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ করেছিল, তবে সেটা ছিল বিশৃঙ্খল ও বিচ্ছিন্নভাবে। অন্যদিকে উ. কোরীয় সেনাদের তিনটি ইউনিট অত্যন্ত সুগঠিত ও সুশৃঙ্খলভাবে আক্রমণ করে, তাঁরা বিমানশক্তির সাহায্যও নেয়। 

তিনি বলেন, এসব ইউনিটের কাছে উচ্চ মানের গোলাবারুদ (অ্যামুনিশন) ছিল। প্রত্যেকের কাছে ছিল গ্রেনেড লঞ্চার, নাইট ভিশন-সহ অত্যাধুনিক সরঞ্জাম। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d