Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Trending

ঋণের সাগরে দেশ

দেশি-বিদেশি ঋণ ১৮৩৬০০০ কোটি টাকা ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ঋণ ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা :: ২০২৪ সালে ঋণের পরিমাণ বেড়ে বর্তমানে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা :: উন্নয়নের নামে ১৫ বছরে ঋণ নেয়া হয়েছে ১৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা

বিদেশি ঋণের সাগরে ভাসছে দেশ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে গেছেন শেখ হাসিনা। এর আগে ১৫ বছর উন্নয়নের নামে মেগা প্রকল্প করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ নিয়েছেন। প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে ঋণের টাকার বড় অংশ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নানা প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার করা হয়েছে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালানোর সময় বাংলাদেশের জনগণের ঘাড়ে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি (১৮৩৬০০০ কোটি) টাকার বৈদেশিক ঋণ রেখে গেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে অর্থ বছরের বাজেটের প্রায় এক তৃতীয়াংশ টাকা বিদেশি ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়। এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে এ ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। অথচ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল মাত্র ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি (২৭৬০০০ কোটি) টাকা। পতিত শেখ হাসিনার সরকার গত ১৫ বছরে ঋণ দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়েছে ১৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি (১৫৬০০০০ কোটি) টাকা।
বৈদেশিক ঋণ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ঋণ পরিশোধ এবং ভবিষ্যতের ভাবনা থেকেই একটা দুশ্চিন্তা। একশ’ বিলিয়ন ডলারের যে ঋণ এর মধ্যে উনাশি বিলিয়ন ডলারই সরকারের ঋণ। সুদ এবং আসল মিলিয়ে এই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে চাপে থাকবে অন্তর্বর্তী সরকার। আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, রাস্তাঘাট সবকিছু বিদেশি ঋণে। এগুলো এখন ফেরত দিতে হবে।

আওয়ামী সরকারের দুর্নীতি-অনিয়ম ও অর্থ পাচারে দেশের অর্থনীতির বর্তমান বিভিন্ন সূচক, রাজস্ব আহরণ, রফতানি বাণিজ্য, ডলার সঙ্কট ও রিজার্ভ পরিস্থিতি বিপর্যস্ত। গভীর সঙ্কটে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। হাসিনা সরকার দীর্ঘদিন ভোটবিহীন ক্ষমতায় থাকায় দেশে-বিদেশে আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছিল। গত দুই বছর ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমাগত কমেছে। ডলার-সঙ্কটে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। দুই বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষের জীবনযাত্রাকে অসহনীয় করে রেখেছে। যা এখন দুই অঙ্কের ওপরে। খেলাপি ঋণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ব্যাংক থেকে আওয়ামী সরকারের ঋণের পাশাপাশি বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠীকে প্রায় ১০টি ব্যাংকের মালিকানা দিয়ে দেশ থেকে অর্থ লুটপাট করে পাচার করা হয়েছে। বর্তমানে কয়েকটি ব্যাংক বেঁচে আছে বিশেষ ব্যবস্থায়। অপরদিকে বড় অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে ভারতে পলায়নকারী শেখ হাসিনা সরকার ১৫ বছরের বেশি সময়ে দেদার ঋণ নিয়েছে। এ ঋণের বড় অংশই নেওয়া হয়েছে দেশি উৎস থেকে। এর মধ্যে আবার বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে দেশের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে পাওয়া দেশি-বিদেশি ঋণের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পদত্যাগের সময় শেখ হাসিনার সরকার ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এ ঋণ পরিশোধে এখন ব্যবস্থা নিতে হবে। অথচ প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে ঋণের টাকা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আবার পাচার করেছে। পদত্যাগী আওয়ামী সরকার যে ঋণ নিয়েছে তার পরিমাণ মাত্র সাত বছরের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ এখন যে ঋণ করছে, তার একটি বড় অংশও যাচ্ছে সেই ঋণ পরিশোধের পেছনেই। আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বাজেট সহায়তার জন্য বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ঋণ নেয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্যে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় জাপান, চীন, রাশিয়া ও ভারতের কাছ থেকেই সবচে বেশি ঋণ নিয়েছে। পাবলিক ও প্রাইভেট মিলিয়ে ২০১৭ সালের শেষে বাংলাদেশের সার্বিক মোট ঋণ ছিল ৫১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে এটি ১০০ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। এদিকে বর্তমান অর্থনৈতিক দৈন্যদশা এবং ঋণ পরিশোধের চাপ সামলাতে দ্রুতই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে স্বাভাবিক করতে হবে। দেশে এতোদিন চলা অনিয়ম-দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ স্বাভাবিক করতে হবে। অবশ্য গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশে দীর্ঘদিন ঘটে চলা অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তবে সেটা হবে অনিয়মে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে, তাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয়। কারণ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনেক কর্মসংস্থানের বিষয় জড়িত। সেখানে অনেক লোক কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য সুরক্ষাও দেয়া হবে। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ শত বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করার পর পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অর্থনীতিবিদরা বারবার ভারতে পলায়নকারী শেখ হাসিনা সরকারকে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করছেন। বিশ্লেষকদের মতে, সাবেক সরকারের যথাযথ ঋণ ব্যবস্থাপনা না থাকায় দেশি উৎস থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নেওয়া হয়েছে। যদিও বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশি ঋণ নেওয়াকে সব সময় স্বাগত জানান অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। গত ১৫ বছরে অনেক বিদেশি ঋণও নেওয়া হয়েছে। তবে এসব ঋণের বেশির ভাগই নেওয়া হয়েছে দর-কষাকষি ও বাছবিচারহীনভাবে; যা সরকারের দায়দেনা পরিস্থিতিতে চাপ বাড়িয়েছে।

বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধির সাথে সাথে এর সুদ এবং আসল পরিশোধের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়ছে। আওয়ামী সরকারের দুর্নীতি-অনিয়ম ও অর্থ পাচারে দেশের অর্থনীতির বর্তমান বিভিন্ন সূচক, রাজস্ব আহরণ, রফতানি বাণিজ্য, ডলার সঙ্কট ও রিজার্ভ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন ভবিষ্যতে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপের মুখে পড়তে হবে।

সূত্র মতে, শেখ হাসিনা সরকার দেশে লুটপাট-দুর্নীতি অনিয়মের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। আর তাই প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক মালয়েশিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেই ৫ বিলিয়ন ডলার বা ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছেন, টাকার অংকে যা প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা। এভাবে দেশের প্রতিটি ছোট-বড় প্রকল্প থেকে লাখ কোটি টাকা পাচার করেছেন।
অর্থ বিভাগ গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ঋণের প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে। তাতে মোট ঋণের স্থিতি দেখানো হয়েছে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ঋণের হিসাব হালনাগাদ করা হয় তিন মাস পরপর। মার্চ ও জুনের হিসাব আরও কিছুদিন পর তৈরি করা হবে। অর্থ বিভাগ ধারণা করছে, চলতি বছরের জুন শেষে দেশি-বিদেশি ঋণ স্থিতি দাঁড়াবে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে দেশি অংশ হবে ১০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা আর বিদেশি অংশ ৮ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, জুন মাস শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৭৯০ কোটি মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ১১৮ টাকা দরে হিসাব করলে তা ৮ লাখ ১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। গত ডিসেম্বর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৪ লাখ ৫ হাজার ৫২০ কোটি টাকা।

গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের যে স্থিতি ছিল, তা দেশের তিনটি বাজেটের মোট অর্থ বরাদ্দের সমান।
এসব ঋণ সরকারি ও সার্বভৌম নিরাপত্তাপ্রাপ্ত ঋণ হিসেবে পরিচিত। ঋণ নেওয়া, ঋণের সুদ দেওয়া, আসল পরিশোধ করা, আবার ঋণ নেওয়া-বিষয়টি এভাবে চলতে থাকে। স্থিতি হিসেবে উল্লেখ থাকা অর্থ ভবিষ্যতে পরিশোধযোগ্য। ডিসেম্বর শেষে ৯ লাখ ৫৩ হাজার ৮১৪ কোটি টাকার দেশি ঋণের মধ্যে শুধু ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নেওয়া ঋণের স্থিতিই ছিল ৫ লাখ ২৫ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। বাকি ঋণ নেওয়া হয়েছে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র ও সাধারণ ভবিষ্য তহবিলের বিপরীতেও আছে বড় অঙ্কের ঋণ।

অর্থ বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরেও দেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। ক্ষমতায় তখন আওয়ামী লীগই ছিল। কিন্তু ছয় বছরের ব্যবধানে এ ঋণ বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়।

প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে বিপুল ঋণ নেওয়ার কারণে আসল ও সুদ পরিশোধের চাপ এখন বর্তমান সরকারের ঘাড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে সুদের হারও অনেক বেড়েছে। দুই বছর আগেও সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার ছিল ১ থেকে ৬ শতাংশ। বর্তমানে গড় সুদহার ১২ শতাংশ। সঞ্চয়পত্র নতুন করে বিক্রি হচ্ছে কম। তাই সেখান থেকেও টাকা আসার সুযোগ কম। বরং রয়েছে আগের সঞ্চয়পত্রের সুদ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে দেশি ঋণের সুদই ৯৩ হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণের মধ্যে একটি উৎস হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, আরেকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের অর্থই হচ্ছে টাকা ছাপানো। এতে বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়ে যায়, যা উসকে দেয় মূল্যস্ফীতিকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বেশি, তা ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশি ও বিদেশি দুই ধরনের ঋণের প্রতিই ঝুঁকেছিল আগের সরকার। শেষ ছয়-সাত বছরে দ্রুত হারে উভয় ধরনের ঋণ নেওয়া বেড়েছে এবং বেশি বেড়েছে দেশি ঋণ। পদ্মা সেতুও বিদেশি ঋণ নিয়েই হয়েছে। সামনে আসছে ঋণ পরিশোধের চাপ। দুই বছর পর থেকেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সুদ দেওয়া শুরু করতে হবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ১৫ বছরে বিদেশি ঋণের বোঝা বেড়েছে তিন গুণের বেশি। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে পুঞ্জীভূত বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮৫ কোটি ডলার। আওয়ামী লীগ সরকার কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পাশাপাশি রেল ও বিদ্যুৎ খাতে ভারত, চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে কঠিন শর্তের ঋণও নেয়।

সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ গত জুন মাস শেষে সরকারের পুঞ্জীভূত বিদেশি ঋণ দাঁড়ায় ৬ হাজার ৭৯০ কোটি ডলারে। সে হিসাবে বর্তমানে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মাথার ওপর গড়ে ৪০০ ডলারের মতো বিদেশি ঋণের বোঝা রয়েছে।

দেশের অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের কথা বললেও বিপুল পরিমাণ বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে কয়েক বছর ধরেই চাপে ছিল আওয়ামী লীগের সরকার। এ চাপ শুরু হয় এমন সময়ে, যখন দেশে দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট চলছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে রিজার্ভের পাশাপাশি বাজেটেও বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।

সূত্রগুলো জানায়, প্রতিবছর যত বিদেশি ঋণ পায় সরকার, তার এক-তৃতীয়াংশ অর্থই চলে যায় ঋণের সুদ ও আসল শোধ করতে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি বিদেশি ঋণ শোধ করতে হয়েছে।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল মিলিয়ে রেকর্ড প্রায় ৩৩৬ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মধ্যে আসল ২০১ কোটি ডলার ও সুদ প্রায় ১৩৫ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুদ ও আসল মিলিয়ে ২৬৮ কোটি ডলার পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। অথচ এর ঠিক এক দশক আগে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১১০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ।

রূপপুর প্রকল্পের ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে ২০২৬ সালে। এ সময় আরও দুই বছর পিছিয়ে দেওয়ার জন্য দেনদরবার চলছে। বিভিন্ন প্রকল্পে চীনের ঋণের কিস্তি কমানোর আলোচনাও চলমান। প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ঋণ চীনা মুদ্রায় নেওয়ার উদ্যোগেও ‘ধীরে চলো’ নীতি অবলম্বন করছে ঢাকা। এ ঋণ নিয়ে আলোচনা করতে চলতি মাসেই চীনের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসার কথা ছিল। তবে এখন তা অনিশ্চিত।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto