Trending

ঋণের সুদহার ও ডলার ভোক্তাকে আরও ভোগাবে

আগামীতে ডলারের দাম ও ঋণের সুদহার আরও বাড়বে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে আমদানি ব্যয় ও পণ্যের উৎপাদন খরচ। ফলে বাড়বে পণ্যের দামও। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় উদ্যোক্তারা। এদিকে পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে মানুষের আয় বাড়ছে না। করোনার পর থেকেই অর্থনৈতিক মন্দায় ভোক্তারা ভুগছেন। পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জাঁতাকল থেকে এই মুহূর্তে উপশম পাওয়ার কোনো উপায় মিলছে না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঋণের সুদহার ও ডলার ভোক্তাকে আরও ভোগাবে।

বৃহস্পতিবার থেকে ডলারের দাম এক লাফে ৮ টাকা বেড়ে ১১০ থেকে ১১৮ টাকা হয়েছে। এতে আমদানি খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি উৎপাদন খরচও বাড়বে। একই সঙ্গে কমে গেছে টাকার মান। এতে ভোক্তার ওপর চাপ বাড়বে। এই ধকল এখনো ভোক্তার ওপর পুরোপুরি আসেনি। তা আসার আগেই আরও একটি দুঃসংবাদ পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দামে যে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করেছে তা সাময়িক। এ পদ্ধতি বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার পর ডলারের দামকে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হবে। 

আগের পদ্ধতি থেকে ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করার সময় এক লাফে ডলারের দাম বাড়ানো হয়েছে ৮ টাকা। ক্রলিং পেগ থেকে বাজারভিত্তিক করা হলে দাম কত বাড়বে- সেটি নিয়ে এখন চিন্তিত উদ্যোক্তারা। কারণ ব্যবসায়ীদের আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। ডলারের দাম বেড়ে গেলে তাদের আমদানি খরচও বেড়ে যায়। ডলারের দাম ৮ টাকা বাড়ার ধকল এখনো বাজারে সমন্বয় হয়নি। এখন আবার ডলারের দাম বৃদ্ধির আগাম বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যবসার কোনো পরিকল্পনা করা যাচ্ছে না। 

গত দুই বছরে ডলারের দাম ৮৫ থেকে বেড়ে ১১৮ টাকা হয়েছে। তারপরও ওই দামে বাজারে ডলার মিলছে না। আমদানির ডলার এখনো কিনতে হচ্ছে ১২৫ টাকায়। আগাম ডলার কিনতে হচ্ছে ১২৫ থেকে ১২৯ টাকায়। 

এদিকে ব্যাংকগুলো এখনো বাড়তি দরে রেমিট্যান্স কিনছে। ফলে তারা কম দামে ডলার বিক্রি করতে পারছে না। ২০২১ সালের জুনে ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা। ২০২২ সালের জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯২ টাকায়। ২০২৩ সালের জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫ টাকায়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে হয় ১১০ টাকা। বৃহস্পতিবার থেকে তা বেড়ে হয়েছে ১১৮ টাকা।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ডলারের দাম বাড়ানোর একটি স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি দরকার। যেটি বাজারের সঙ্গে সয়ে সয়ে কাজ করবে। হঠাৎ করে ৭-৮ টাকা ডলারের দাম বাড়ানো হলে বাজারে নেতিবাচক বার্তা যায়। অনেকেই মনে করতে পারেন ডলারের সংকট হয়তো খুব বেশি। এতে বাজারে গুজব তৈরি হয়। যা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ডলারের দাম ধীরে ধীরে বাড়ানো হলে বাজারে এর খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। একসঙ্গে বেশি বাড়ানোর ফলে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা কিছুটা উপকৃত হবেন। কিন্তু আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের আমদানি অনেক বেশি। এছাড়া বৈদেশিক দায়দেনাও রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ডলারের দাম একসঙ্গে বেশি বাড়ালে বাজারে আরও একটি নেতিবাচক বার্তা যায়, অনেকেই মনে করতে পারেন ডলারের দাম আরও বাড়বে। তখন রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা রেমিট্যান্স বাড়ানোর গতি কমিয়ে দিতে পারেন।

এদিকে ১ জুলাই থেকে ঋণের সুদহারের করিডর ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের ভিত্তিতে ঋণের সুদ নির্ধারিত হয়েছে। ওই সময়ে ঋণের সুদ ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশে ওঠেছে। বৃহস্পতিবার থেকে এই পদ্ধতি বাতিল করে ঋণের সুদ বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের তহবিল ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে সুদহার নির্ধারণ করবে। এ ঘোষণার পর এখন ব্যাংকগুলো নতুন করে সুদহার নির্ধারণ করছে। বিভিন্ন সুদহার নির্ধারণ করে তা পর্ষদ সভায় অনুমোদনের পর জুন থেকে কার্যকর করবে। তখন সুদহার আরও বেড়ে যাবে। 

বাণিজ্যিক ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলো এখন তারল্য সংকটে ভুগছে। এ সংকট মেটাতে এখন চড়া সুদে আমানত নেবে। ফলে বাধ্য হয়ে ঋণের সুদ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে ভোক্তা ঋণের সুদ বেশি বাড়বে। এ হার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে ঋণের সুদহার উৎপাদন ও কৃষি খাতে যাতে বেশি না বাড়ানো হয়। জুলাইয়ের আগে উৎপাদন খাতে ঋণের সুদ হার ছিল ৮ শতাংশ। এখন তা বেড়ে কৃষিতে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ ও শিল্পে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয়েছে। আগামীতে এ হার আরও কিছুটা বাড়তে পারে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে এসব ঋণের সুদহার এর মধ্যেই রাখার জন্য।

সূত্র জানায়, ডলারের দাম ও ঋণের সুদহার বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ। ফলে বাধ্য হয়ে উদ্যোক্তারা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। এতে অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়ছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার আবার ডবল ডিজিটে এসেছে। ঋণের সুদহার ও ডলারের দামের প্রভাব বাজারে এলে মূল্যস্ফীতিতে আরও চাপ বাড়বে। এবার দুদিক থেকে মূল্যস্ফীতিতে চাপ বাড়বে। একদিক হচ্ছে, ডলারের দাম বাড়ার কারণে টাকার মান কমে যাওয়া এবং দ্বিতীয় দিক হচ্ছে, ডলারের দাম ও ঋণের সুদ বাড়ায় পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto