Bangladesh

ঋণ শোধে চীনের সিস্টেম ব্যবহারের প্রস্তাব, বেলারুশের সঙ্গে লেনদেন জটিলতায় সরকার

বেলারুশের অর্থমন্ত্রীর চিঠি অর্থ বিভাগে * ডলারের বিপরীতে ইয়েন বা রুবলে পরিশোধের চিন্তা

ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য চীনের আন্তঃব্যাংক লেনদেন পদ্ধতি ‘সিএফএক্সপিএস’ ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে বেলারুশ। কারণ আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুইফট থেকে বেলারুশকে বিচ্ছিন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলো। ফলে বাংলাদেশ সুইফট ব্যবহার করে বেলারুশের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করতে পারছে না। এতে বেলারুশ থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিকল্প চ্যানেলে লেনদেন করতে সম্প্রতি বেলারুশের অর্থমন্ত্রী ইউরি সেলিভারসাতু এ প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়কে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

সিএফএক্সপিএস হচ্ছে চায়না ফরেন এক্সচেঞ্জ পেমেন্ট সিস্টেম। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে চীন তাদের বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

সূত্র মতে, নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকেও এ বিষয়ে একটি কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে দিল্লির বেলারুশ দূতাবাস।

জানা গেছে, এ বিষয় নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) কাজ করছে। চীনের আন্তঃব্যাংক লেনদেন পদ্ধতি ‘সিএফএক্সপিএস’ ব্যবহারের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি সংশ্লিষ্ট ডেস্ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

এ বিষয়ে ইআরডি একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছেন অর্থমন্ত্রীর জন্য। এখন অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের পর কাজ শুরু করা হবে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ইআরডির এক কর্মকর্তা জানান, মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইয়েন বা রুবল ব্যবহার করলে বাংলাদেশ এবং বেলারুশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তি সংশোধন করতে হবে। ইতোমধ্যে সংশোধিত চুক্তির প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। ওই সংশোধিত চুক্তিতে বলা আছে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের পাশাপাশি চীনের ইয়েন ও রুবলস ব্যবহার করা যাবে। এটি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

সূত্র মতে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো চিঠিতে ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য চীনের ‘সিএফএক্সপিএস’ পদ্ধতিতে প্রথমে মার্কিন ডলার ব্যবহারের কথা বলেছে বেলারুশ। যদি ডলারে সেটি সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে চীনা মুদ্রা ইয়েন বা রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের মাধ্যমে পরিশোধের কথা বলা হয়।

জানা গেছে, বর্তমান বাংলাদেশ এবং বেলারুশের মধ্যে ঋণসংক্রান্ত বাণিজ্য চুক্তি আছে। চুক্তির এক নম্বর ধারায় বলা আছে, বছরে দুটি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। ঋণ পরিশোধের মুদ্রার ব্যবহার হবে মার্কিন ডলার, ইউরো, রাশিয়ান রুবলস, চীনের ইয়েন। এই চুক্তির আওতায় ঋণের কিস্তি ও ঋণের সুদ মার্কিন ডলারে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। সেটি সম্ভব না হলে চীনের মুদ্রা পরিশোধ করা যাবে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। তবে লেনদেনের ক্ষেত্রে চীনের আন্তঃব্যাংক লেনদেন সিস্টেম সিএফএক্সপিএস ব্যবহারের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখতে বলা হয়।

সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলারুশ সফরের সময় বেলারুশ থেকে সহজ শর্তে পণ্য ক্রয় ঋণ (কমোডিটি লোন) গ্রহণের মাধ্যমে পণ্য আমদানির বিষয়ে ওই বছরের ৯ জুলাই একটি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন প্রভিশনস অব এক্সপোর্ট কমোডিটি ক্রেডিট শীর্ষক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির শর্তের আওতায় স্থানীয় সরকার বিভাগ বেলারুশ থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার পণ্য (যান ও যন্ত্রপাতি) আমদানি করে। এসব যন্ত্রপাতি পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহণ ও পরিষ্কার, ড্রেন নির্মাণ, মেরামত ও পরিষ্কার, রাস্তা নির্মাণ ও মেরামত ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। মোট ঋণের মধ্যে বেলারুশ থেকে যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৩৩১ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে ১৩টি কিস্তি পরিশোধ হয়েছে। ১৪ নম্বর কিস্তি পরিশোধের আগেই আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুইফট থেকে বেলারুশের কয়েকটি ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলো। ২০২২ সালের ১২ মার্চ শনিবার থেকে এটি কার্যকর হয়। এতে ওই দুই দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো আর সরাসরি লেনদেন করছে না। ফলে ১৪ নম্বর কিস্তির অঙ্ক ২৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯৩ মার্কিন ডলার এবং ঋণের সুদ এক লাখ ২১ হাজার ৬১২ ডলার মিলে মোট ২৭ লাখ ৭০ হাজার ৫০৫ ডলার পরিশোধ করা যাচ্ছে না।

বেলারুশ থেকে পাঠানো নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সুইফটের মাধ্যমে লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পর গত ২৫ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে একটি চিঠি দিয়েছেন বেলারুশের অর্থমন্ত্রী। ওই চিঠির সঙ্গে বাংলাদেশ এবং বেলারুশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ঋণ চুক্তিও প্রেরণ করেছেন। বেলারুশের অর্থমন্ত্রী সেখানে এই চুক্তির আওতায় ঋণ পরিশোধের কথা উল্লেখ করেন। এরপর গত অক্টোবরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে ঋণ পরিশোধের বিকল্প পথের কথা উল্লেখ করে বেলারুশ সরকারকে চিঠি দেয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ নভেম্বর বেলারুশের পণ্য সরবারহকারী প্রতিষ্ঠান প্রোমাগরোলিসিং ওজেএসসি একটি জবাব দিয়েছে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীকে। সেখানে বলা হয়, আমরা বেলারুশ ব্যাংক থেকে রিপোর্ট নিয়ে দেখছি চীনের লেনদেন সিস্টেম সিএফএক্সপিএস ব্যবহার করে বাংলাদেশ ডলারে এই ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধ করতে পারে। কারণ চীনের ওই সিস্টেমের অংশগ্রহণকারী তালিকার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম রয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়, চীনের ওই সিস্টেমে মার্কিন ডলার ব্যবহার করা গেলে সেক্ষেত্রে চীনের ইয়েন মুদ্রায় প্রেরণ করা যাবে। সেক্ষেত্রে ঋণের কিস্তি চীনের ইয়েন মুদ্রায় প্রেরণ করলে আমাদের অবহিত করতে হবে। তাহলে কোম্পানির পক্ষ থেকে নতুন করে ইয়েন কিস্তির অর্থ রূপান্তর করে নতুন স্টেটমেন্ট প্রেরণ করা হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button