এআই যেভাবে ফেইক নিউজ ছড়ানোয় এখন ‘সুপারস্প্রেডার’-এর ভূমিকায়
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে প্রপাগান্ডা ছড়ানো বা এমন বিষয়বস্তু তৈরির সুযোগ, যা থেকে সঠিক তথ্য আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে প্রপাগান্ডা ছড়ানো বা এমন বিষয়বস্তু তৈরির সুযোগ, যা থেকে সঠিক তথ্য আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
এআই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করছে ফেইক নিউজ বা ভুয়া খবর, যা নির্বাচন, যুদ্ধ কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বিষয়গুলো নিয়ে সত্য ঘটনার আদলে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।
গত মে মাস থেকে এআই দিয়ে তৈরি অনলাইন কন্টেন্ট প্রায় ১ হাজার শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ৪৯টি সাইট থেকে ফুলেফেঁপে এর সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে, প্রপাগান্ডা কার্যক্রম সাধারণত চালানো হয় কিছু স্বল্প বেতনভুক্ত কর্মী অথবা সুসংহত কোনো গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে। কিন্তু এআই একে প্রায় সবার জন্য উন্মুক্ত করতে চলেছে—সে হোক কোনো গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা নিজের ঘরে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা কোনো তরুণের জন্য।
তথ্যের মেরুকরণ ও বিভ্রান্তিকর উপস্থাপনের ফলে তা সঠিক তথ্য জানা কঠিন করে তুলতে পারে। এতে ক্ষতি হচ্ছে রাজনৈতিক প্রার্থী, সামরিক নেতৃত্ব ও বিভিন্ন সাহায্য প্রচেষ্টা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে ভুয়া তথ্য ছড়ানো এসব ওয়েবসাইট।
এ-সংক্রান্ত তদন্ত করেছেন নিউজগার্ডের গবেষক জ্যাক ব্রুয়েস্টার। তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু সাইট হাজার না হলেও প্রতিদিন প্রায় শত শত নিবন্ধ তৈরি করছে। এ কারণেই একে পরবর্তী প্রজন্মের ভুয়া তথ্যের বাহক বলা যায়।’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন এক যুগে প্রবেশ করেছে যেখানে চ্যাট বট, ইমেজ মেকার ও কণ্ঠস্বর ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে এমন কন্টেন্ট সৃষ্টি করা যাবে যা হুবহু মানুষের তৈরি বলেই মনে হবে।
এআইয়ের তৈরি সংবাদ উপস্থাপক চীনপন্থি প্রপাগান্ডা অনর্গল বলে চলেছেন। কিংবা স্লোভাকিয়ার রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নির্বাচনের আগে দেখেন, তাদের কণ্ঠস্বর ক্লোন করে এমন সব বিতর্কিত কথা বলানো হয়েছে, যা তারা কখনো উচ্চারণই করেননি।
ভুয়া খবরকে একেবারে আসল খবরের আদলে সাজিয়ে আরবি, থাইসহ কয়েক ডজন ভাষায় পরিবেশন করছে অনেক ওয়েবসাইট। ভুয়া খবরগুলোকে আসল বলে চালানোর জন্য এই ওয়েবসাইটগুলোর নাম দেওয়া হয়ে মূলধারার অনেক নির্ভরযোগ্য নিউজ পোর্টালের নামের সঙ্গে মিলিয়ে।
পাঠকরা খুব সহজেই এসব ওয়েবসাইটের ভুয়া খবর পড়ে প্রতারিত হতে পারেন।
এসব ওয়েবসাইট ভুয়া সব বিশেষজ্ঞদের দিয়ে মতামতও লেখাচ্ছে। বাস্তবে এসব লেখক-বিশেষজ্ঞের অস্তিত্বও নেই।
একই সাথে সত্য এবং এআইয়ের বানানো খবর পাশাপাশি থাকাটা আরও বিভ্রান্তির জন্ম দেয়।
এ ধরনের ওয়েবসাইট দুভাবে কাজ করে। কিছু গল্প তৈরি করা হয় মানুষের সাহায্যে, যেখানে মানুষ চ্যাটবটকে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বয়ানকে প্রাধান্য দিয়ে নিবন্ধ লিখে দিতে বলে। এরপর সেটি পোস্ট করা হয় কোনো ওয়েবসাইটে। আবার পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবেও এআইকে দিয়ে নিবন্ধ লিখিয়ে নেওয়া যায়। এ প্রক্রিয়ায় কিছু নির্দিষ্ট কিওয়ার্ডযুক্ত নিবন্ধ খুঁজে বের করা হয়, তারপর ওই লেখাগুলোতে বড় একটি ‘ল্যাংগুয়েজ মডেল’ প্রয়োগ করা হয়। ওই মডেল নিবন্ধটিকে পুনর্লিখন করে—এতে লেখাটিকে নতুন মনে হয়, পাশাপাশি লেখা চুরি ধরা পড়ার ঝুঁকি থেকেও মুক্ত থাকা যায়। এই লেখা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনলাইনে পোস্ট করা হয়।
নিউজগার্ড এই ধরনের এআইচালিত ওয়েবসাইটকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এ ধরনের নিবন্ধ শনাক্ত করার উপায় হলো ‘অদ্ভুত ব্যাকরণের ব্যবহার’, ‘ভুল বাক্যগঠন’ কিংবা ‘বানান ভুল’-এর মতো বিষয়গুলো খেয়াল রাখা।
কিন্তু পাঠককে এই জাল বা ভুয়া খবরের ব্যাপারে আরও সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই। কোনো খবরের সাইট যা কিছুই লিখুক, তা পুরোপুরি বিশ্বাস করার আগে সেটার সত্যতা অবশ্যই যাচাই করে নেয়া উচিত। যেখানে একটি সাইট খুঁজে বের করে বন্ধ করা হলে আবার নতুন একটি সাইট তৈরি করে ফের এসব ভুয়া খবর প্রচার করা যেতে পারে, সেখানে মিথ্যা খবর প্রচার কিংবা প্রপাগান্ডা ছড়ানো ঠেকাতে পাঠকের সচেতনতাই সবচেয়ে বড় ভরসা।