এই কি দেশবাসীর প্রাপ্য ছিল?
কম করে হলেও গত প্রায় এক বছর ধরেই ক্রমাগত উত্তাল বাজার। তা নিত্যপণ্য হোক বা নির্মাণ ও প্রকাশনা উপকরণ-সবকিছুই লাগাম ছেড়েছে। প্রথমদিকে সাধারণ মানুষ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিরূপ প্রভাবের বাস্তবতা মেনে নিলেও এখন মানতে নারাজ। কারণ, এতদিনে এসব সংকট অনেকটা সামাল দেওয়ার কথা। মানুষ অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করতে চায় না। দেখছে দেশ যথেষ্ট ধনী। আমলা আর রাজনীতিকদের আর্থিক সমৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো। গুরুত্বপূর্ণ মানুষেরা বিশাল দল নিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকারি সফর করে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক চেষ্টায় প্রাথমিক ধাক্কা অনেকটা সামাল দেওয়া হলেও এখন আর যুদ্ধ এবং কার্তিকের মন্দার গল্প মানুষ ‘খাবে না’।
এ ‘খাওয়াখাওয়ি’ শব্দটি আমার না-পছন্দ। যেমন কোনো প্রকাশক বলতে পারেন ‘না আপনার উপন্যাসটি পাঠক খাবে না’। অথবা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক বলতে পারেন ‘আপনার গল্পটা পাঠককে খাওয়ানো যাবে না’। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও অনেক সময় বলা হয় ছবিটি ফ্লপ। দর্শক খাচ্ছে না। এসব শব্দ প্রয়োগ খুব বিরক্তিকর বলে আমার মতো অনেকেরই মনে হবে। তবুও আমি আজ ‘খাবে না’ শব্দটি ব্যবহার করলাম খানিকটা ভরসা পেয়ে। ৫ অক্টোবর সাংবাদিকদের সামনে মতবিনিময় করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিষ্কার করলেন তিনি কেন ‘তলে তলে’ আপস হয়েছে বা ‘খেলা হবে’ কথাগুলো বলেন। বলেন, কারণ এসব শব্দ ‘দর্শকরা খায়’। এ তো একরকম ভালোই। নিত্যপণ্যের মূল্য ক্রমাগত নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় মানুষ যদি শব্দ খেয়ে বাঁচতে পারে তবে মন্দ কী!
আমি আমার পরিবারের জীবনযাত্রা দেখে দেশের মানুষের সামগ্রিক জীবনযাত্রার সংকট অনুধাবনের চেষ্টা করি। আমি অর্থনীতিবিদ নই। বাজারের অবস্থা গাণিতিক এবং সূচকের হিসাব দিয়ে মূল্যায়ন করতে অক্ষম। আমি জীবনযাত্রার সরল হিসাবটিই করি। নিজের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ব্যবধান দেখে শঙ্কিত হই। এখান থেকে অনুভব করতে চেষ্টা করি, আমার চেয়ে অনেকগুণ কম আয়ের মানুষের জীবন চলছে কীভাবে!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আমি বাড়ি করেছি। আমার চারপাশের বেশিরভাগ মানুষ নিম্নআয়ের। বিগত কয়েক মাস আমি গভীরভাবে তাদের যাপিতজীবন বোঝার চেষ্টা করেছি। বাজারে গিয়ে আমি সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া অনুভবের চেষ্টা করি। সমাজ-ইতিহাস চর্চা করি বলেই আমার এমন অনুসন্ধান আগ্রহের বিষয়। আমার অনুসন্ধানে একটি অদ্ভুত জিনিস বেরিয়ে এসেছে। তা থেকে আমি চলমান রাজনীতিকে যুক্ত করতে পারছি।
অনেকদিন পর বিএনপি জমজমাট মাঠের রাজনীতি শুরু করতে পেরেছে। কিন্তু যে কোনো সচেতন মানুষ দেখবেন সব জনসমাগমে দলীয় কর্মী-সমর্থক ও ভাড়াটে ‘জনতা’ ছাড়া নিরেট আমজনতার অংশগ্রহণ নেই। অথচ থাকতে পারত। কারণ ভয়ানক প্রশাসনিক-রাজনৈতিক দুর্নীতি কঠিন সংকটে ফেলেছে সাধারণ মানুষকে। সরকারি দলের শক্তিতে সন্ত্রাস-দখলদারত্বের খেসারতে ধুঁকছে মানুষ। কঠিন দলীয়করণের কারণে যোগ্যতা থাকার পরও অধিকারবঞ্চিত হচ্ছে অনেকেই। তাই ‘সরকার পতন’ ঘটাতে এসব ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের তো বিএনপির আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু মানুষ বিএনপি নেতাদের ‘গণঅভ্যুত্থান’ ঘটানোর আশা পূরণ করতে দিচ্ছে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের জনসভা বা শান্তি সমাবেশেও দলীয় কর্মী-সমর্থক এবং ভাড়াটে জনতার বাইরে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তো সরকারের উন্নয়নের সুবিধা ভোগ করছে অথবা বাস্তব উন্নয়ন দেখে আনন্দিত। তাহলে সরকারের পাশে দাঁড়াচ্ছে না কেন!
আমার মনে হয়েছে, অসংখ্য কারণের মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত বাজারে মানুষের নিত্যদিনের কষ্ট। বাজারের এ অবস্থার জন্য মানুষ সরকারি আমলা, দুষ্ট-ব্যবসায়ী, রাজনীতিকদের সীমাহীন দুর্নীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছে। কষ্টের কশাঘাতে উন্নয়নের বাস্তবতা তাদের খুব বেশি ছুঁয়ে যাচ্ছে না। আমি অনেককে এমনও বলতে শুনেছি, ‘আমাদের মেট্রোরেলের দরকার নেই, প্রয়োজন নেই বড় বড় ফ্লাইওভারের। মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করলেও ভালো’, তবে যা আয় করি, তা দিয়ে যেন দুমুঠো খেতে পারি।
আমি গত এক বছরে আমার অনেক কলামে নিজ ঘরের কথা লিখেছিলাম। আমার গৃহকর্ত্রী বাজার সামলান। এখন মহাবিরক্ত। প্রতি মাসেই তার বাজেট ঘাটতি হচ্ছে। গত এক বছরে একটু একটু করে তার বাজারের বাজেট বাড়াতে হচ্ছে। তবে এতে দ্রব্যের গুণগত মান কিন্তু বাড়ছে না। একে একে অতিরিক্ত সাত হাজার টাকা বাড়ানোর পরও ম্যাডাম এ মাসে আর অঙ্ক মেলাতে পারছেন না। বাজার থেকে ফিরে তিনি হাল ছেড়ে দিয়েছেন। তার পক্ষে আর সম্ভব নয়। সংসার চালানোর টাকা তিনি আর নেবেন না। আমাকেই বাজারে যেতে হবে।
আমার ভাবনা অন্য জায়গায়। প্রায় ১৭-১৮ বছর আগে আমি বেতন স্কেলের ১নং গ্রেডে চলে গেছি। এখন বার্ষিক ইনক্রিমেন্টে আর বেতন বৃদ্ধিরও সুযোগ নেই। সহিভাবে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া মানুষ আমি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমাদের শিক্ষকদের তো আর গাড়িভাতা এবং মাসে পাঁচ-দশটি মিটিং দেখিয়ে সিটিং অ্যালাউন্স পাওয়ার সুযোগ নেই। নেই অন্যান্য আর্থিক সামর্থ্য বাড়ানোর সুযোগ। অধিকাংশ মধ্যবিত্তের মতো আমাকেও মাথাগোঁজার ঠাঁই বানাতে এবং বড় কোনো সাংসারিক প্রয়োজন মেটাতে ঋণ করতে হয়। মাসে মাসে ঋণ পরিশোধের পর টান পড়ে সংসার চালানোর বাজেটে। এটিই সাধারণ মধ্যবিত্তের চালচিত্র। অন্যদিকে আমার চেয়ে যারা অনেকগুণ কম আয় করেন, তাদেরও তো এ অগ্নিমূল্য বাজারে যেতে হচ্ছে। আমাদের একজন অফিস সহকারী আক্ষেপ করে বলছিলেন, স্যার আমরা খাব কী? গরিবের জন্য ছিল ডিম, ব্রয়লার মুরগি আর চাষ করা পাঙাশ মাছ। ওসবও এখন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আলুভর্তা আর ডাল খাব, তা-ও তো এখন জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছি।
এমন বাস্তবতায় আমি অনেককে প্রশ্ন করেছি-‘তাহলে সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন না কেন?’ সবার উত্তরই প্রায় এক রকম। বিএনপি সরকারকে তারা অতীতেও দেখেছে। এ দলের নেতাদের কথায় ভরসা নেই তাদের। নিজেদের শাসনামলে তারা বলার মতো কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি বলে এখন ঘটা করে বলতেও পারছেন না। কেবল সরকারের নিন্দা গাওয়া তাদের একমাত্র কাজ। তারা পদ্মা সেতুর সমালোচনা করেন, মেট্রোরেলে খুশি নন। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প তাদের সমালোচনার বিষয়। এখন সাধারণ মানুষ দুমুঠো খাবারের জন্য অহর্নিশি ছুটছে। কোনো দল ক্ষমতায় এসে তাদের উদ্ধার করবেন এ ভরসা অনেকেরই নেই। তাই তাদের মাথায় নেই কোনো আন্দোলন।
সবচেয়ে হতাশ হই যখন সরকারের অসহায়ত্ব দেখতে পাই। মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী নিজে বণিক বলেই বোধহয় সত্যটা বুঝতে পেরেছেন। জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব নয়। সজ্জন সরল মানুষ মাননীয় কৃষিমন্ত্রী গত ৫ অক্টোবর ফরিদপুরে একটি ওয়ার্কশপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলুর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বলতে গিয়ে খোলামেলাভাবে সরকারের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। সরকারযন্ত্র বড় পদক্ষেপ নিতে গেলে ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে পণ্য উধাও করে দেয়।
কী সাংঘাতিক কথা! আগে জানতাম আইন ও সরকারের হাত খুব লম্বা। এখন তা ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। এখন বলতে হবে ব্যবসায়ী আর দুর্নীতিবাজদের হাত সবচেয়ে লম্বা। এরাই নিয়ন্ত্রণ করছে সবকিছু। তা হলে কি সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা ও টিকে থাকার জন্য তাদের মাথার ওপর কোনো আশ্রয় নেই? এসব কারণেই সম্ভবত রাজনৈতিক যে কোনো ইস্যুতেই মানুষ ক্রমাগত আগ্রহ হারাচ্ছে। তাই প্রতিদিন বিএনপি নেতাদের তর্জন-গর্জন আর গণঅভ্যুত্থানের হুমকি থেকে মানুষ কৌতুকের আনন্দ ছাড়া বাড়তি কিছুই পায় না।
অভূতপূর্ব উন্নয়নের সাফল্য থাকার পরও কেন স্বস্তিতে থাকতে পারছে না আওয়ামী লীগ সরকার? আজ এঁদো কাদা মাড়িয়ে উগ্রতা ছড়িয়ে আসা বিএনপি যখন মানুষের অন্তর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, তখন ঐতিহ্যের পথ ধরে আসা-মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগেরই স্বস্তি থাকার কথা ছিল; কিন্তু ভুল ও স্বার্থবাদী রাজনৈতিক বলয়ে আটকে থেকে সাধারণ সচেতন মানুষদের কাছ থেকে দলটি দূরে সরে যাচ্ছে। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার উগ্র চিন্তার বদলে গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলে আজ দেশের মানুষ ও বিশ্বনেতাদের চোখে নিন্দিত হতে হতো না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনের রেশ না কাটতেই প্রায় অভিন্ন কারণ দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট মেম্বাররা তাদের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশের কোনো কোনো ব্যক্তি এবং সংগঠনের ওপর স্যাংশন আরোপ করতে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন দেশের গর্বিত বাঙালি স্বার্থবাদী রাজনীতিকদের কারণে আজ কলঙ্কিত হচ্ছে। এই কি এদেশবাসীর প্রাপ্য ছিল? একুশ শতকের সাধারণ মানুষ এতটা সাধারণ নয় যে, তারা দুষ্ট মানুষদের চিনতে পারবে না।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। আতঙ্ক বাড়ছে সাধারণ সচেতন মানুষের মনে। সুবিধাবাদী মানুষদের ফুঁতে না যেন গণতন্ত্রের নিবুনিবু শিখাটি পাকাপাকি নির্বাপিত হয়। চলমান রাজনীতির ব্যর্থতায় যেন দেশি-বিদেশি চক্রান্তে নতুন কোনো ঝড় না আসে! এদেশের রাজনীতির অঙ্গনে মানুষের প্রার্থনা এমনটিই। এ ধারার চমক আমরা অতীতেও দেখেছি। রাজনীতি অসুস্থ হয়ে পড়লে সুস্থতার জন্য অবশ্য মাঝেমধ্যে হাওয়া বদল করতে হয়।
কপাল মন্দ হলে সে হাওয়া বিষাক্তও হতে পারে। তেমনটি হলে মানুষ কিন্তু শাপশাপান্ত করবে চলমান রাজনীতির বিধায়কদেরই। সব সীমাদ্ধতার পরও মন্দের ভালো বিবেচনায় আওয়ামী লীগের প্রতি এখনো বেশিরভাগ মানুষের আস্থা রয়েছে বলে আমরা বিবেচনা করি। তাই প্রার্থনা করি, লাভ-লোভ আর দাপট দেখানোর রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগ ফিরে আসুক। বিএনপির পক্ষে যদি সুস্থ ধারায় ফিরে আসা সম্ভব হয়, তবে এ দলের নেতারাও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। সব পক্ষের রাজনীতির গ্যাংগ্রিন ধরা অঙ্গ ছেঁটে সুস্থতায় ফিরে আসা প্রয়োজন।
My brother recommended I might like this website. He was
totally right. This post truly made my day. You can not imagine just how much time
I had spent for this information! Thanks!
my homepage; vpn special coupon code 2024
After looking into a number of the blog posts on your web page, I really like your technique of
blogging. I added it to my bookmark site list and will be
checking back soon. Please visit my web site too
and let me know how you feel.
Feel free to surf to my web-site – vpn special coupon code 2024 (vpnspecialcouponcode.wordpress.com)
Everyone loves it when folks get together and share views.
Great site, stick with it!
my web site; what is vpn meaning
I think this is among the such a lot significant info for me.
And i’m satisfied studying your article.
But want to remark on some basic issues, The website
taste is wonderful, the articles is really excellent :
D. Just right job, cheers
Feel free to visit my blog post; vpn special coupon code
Great beat ! I wish to apprentice while you amend your website, how can i subscribe
for a blog web site? The account aided me a acceptable deal.
I had been a little bit acquainted of this
your broadcast offered bright clear idea
Here is my web-site :: vpn ucecf
When some one searches for his necessary thing, therefore he/she wants facebook vs eharmony to find love online be
available that in detail, therefore that thing is maintained over
here.
you’re in point of fact a excellent webmaster. The website loading pace is incredible.
It kind of feels that you’re doing any distinctive trick. Also,
The contents are masterwork. you’ve performed a fantastic
activity on this subject!
My web blog eharmony special coupon code 2024
This post gives clear idea in favor of the new users of blogging,
that really how to do blogging and site-building.
Feel free to visit my webpage … nordvpn special coupon code 2024