Bangladesh

একদিনে গ্রাহকের গচ্চা ৪০ কোটি টাকা, ট্রেনের টিকিট কাটতে অনলাইনে ৪ কোটি হিট

৩০ মিনিটেই শেষ ৯৫ শতাংশ টিকিট * আজ অগ্রিম টিকিট কাটার সর্বশেষ যুদ্ধ

বাংলাদেশ রেলওয়ে শুক্রবার ঢাকা থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছে ৩৩ হাজার ৫০০টি। তবে এই টিকিটের জন্য এদিন প্রথম ৩০ মিনিটেই অনলাইন/অ্যাপে হিট (গ্রাহকের টিকিট কাটার চেষ্টা) হয়েছে দুই কোটি ৭২ লাখ। সারা দিনে এ সংখ্যা চার কোটির বেশি। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রমতেই অনলাইনে এ চেষ্টা করতে গিয়ে একজন গ্রাহকের এদিন ন্যূনতম ১০ টাকা খরচ হয়েছে। এরপরও ৯৯ শতাংশের বেশি গ্রাহকই ফিরেছেন খালি হাতে। এ হিসাবে অনলাইনে টিকিট পাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে এদিন গ্রাহকের গচ্চা গেছে অন্তত ৪০ কোটি টাকা। তবে গ্রাহকদের দাবি, প্রতি চেষ্টায় ২০ টাকা করে ৮০ কোটি টাকা গচ্চা গেছে। অথচ এ সময়ে টিকিট বিক্রি করে রেলওয়ে আয় করেছে মাত্র ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা (গড়ে প্রতি টিকিট ৫০০ টাকা ধরে)। সারা দেশের হিসাব করলে এ ব্যয় আরও অনেক বেশি। এছাড়া মাত্র ১০ হাজার গ্রাহক যে ৩৩ হাজার ৫০০ টিকিট পেয়েছেন তাদের অনলাইন/সার্ভিস চার্জ বাবদ টিকিটপ্রতি অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ২০ টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলের এত উন্নয়ন ও এত সক্ষমতা অর্জনের পরও টিকিট বিক্রয়ের পুরো বিষয়টি বেসরকারি খাতে দেওয়ায় গ্রাহককে এই টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। অথচ এ ব্যবস্থা রেলের থাকলে (পৃথিবীর সব দেশেই নিজস্ব ব্যবস্থা রয়েছে) এ থেকে সংস্থাটি যেমন আরও বেশি টাকা আয় করতে পারত, তেমনি গ্রাহকের এত টাকা গচ্চা দিতে হতো না। রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, সরকার ইচ্ছে করলেই পুরো বিষয়টা রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারে। কারণ, টিকিট বিক্রয়ের স্থান থেকে শুরু করে যাবতীয় সবকিছুই রেলের।

শুক্রবার ছিল ৮ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট কাটার দিন। রেলওয়ে সূত্র বলছে, এ দিন নির্ধারিত টিকিটের বিপরীতে সর্বাধিক মানুষ অনলাইনে টিকিট কাটতে চেষ্টা চালিয়েছেন। সকাল ৮টায় পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট ছাড়ার মাত্র ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়। ওই সময়ের মধ্যে ২ কোটি ৭২ লাখ বার টিকিট কাটার জন্য ওয়েবসাইটে চেষ্টা (হিট) চালানো হয়। এরপর দিনভর আরও লাখ লাখ মানুষ হিট করেছেন। এদিন পশ্চিমাঞ্চলের মোট ১৫ হাজার ৮৯০টি টিকিট ছাড়া হয়েছিল। দুপুর ২টা থেকে পূর্বাঞ্চল রেলের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিটসহ এ অঞ্চলে ১৬ হাজার ৬৯৬টি টিকিটের বিপরীতে আধা ঘণ্টায় প্রায় দুই কোটি মানুষ অনলাইনে হিট করেন। রেলওয়ে অপারেশন ও পরিবহণ দপ্তর সূত্র বলছে, মুহূর্তেই এসি চেয়ার ও কেবিনের টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এরপর নন-এসি চেয়ার ও এসি-চেয়ারের টিকিটও শেষ হয়ে যায় আধা ঘণ্টার মধ্যে। এরপরও লাখো মানুষ অনলাইনে টিকিট কাটতে অ্যাপে প্রবেশ করেন।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, সীমিত টিকিটের বিপরীতে হাজার হাজার মানুষ অনলাইনে হিট করছেন। কেউ কেউ ১৫-২০ বারও চেষ্টা করেন। কেউ আবার একবার চেষ্টা করেই কাঙ্ক্ষিত টিকিট কেটে ফেলছেন। সব টিকিট উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। ১৬ হাজার টিকিটের বিপরীতে লাখ লাখ মানুষ অনলাইনে হিট করছেন। একজন মানুষ ৪টি করে টিকিট কাটলে মাত্র ৪ হাজার মানুষই যথেষ্ট-সব টিকিট কেটে নিতে। আমরা দিন দিন ট্রেন ও কোচের সংখ্যা বাড়াচ্ছি।

পূর্বাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. নাজমুল হোসেন বলেন, কাউন্টারে যখন অগ্রিম টিকিট বিক্রি হতো-তখন লম্বা লাইন দেখে অনেকেই টিকিট কাটার সারিতে দাঁড়াতেন না। কারণ, সাধারণ মানুষ জেনে যেত, লাইনে যারা দাঁড়িয়ে আছেন তারাই টিকিট পাবেন না। কারণ, নির্ধারিত টিকিটের সংখ্যা কাউন্টারের সামনে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। এখন সবই অনলাইনে। অনলাইনে টিকিট পেতে লাখ লাখ মানুষ চেষ্টা করছেন।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী ট্রেনের সংখ্যা বর্তমানের চেয়ে ন্যূনতম ১০ গুণ করা উচিত। লাইন বাড়ছে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের সংখ্যা বাড়ছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০টি আন্তঃনগর ট্রেন চালানো সম্ভব, চলছে মাত্র ৯টি।

রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ঈদযাত্রায় প্রতিবছরই আমরা যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অতিরিক্ত ট্রেন ও কোচ সংযোজন করি। স্যারের (রেলপথমন্ত্রী) নির্দেশনায় এবারও আমরা ১৬টি ঈদ স্পেশাল ট্রেন এবং প্রায় শতাধিক কোচ যুক্ত করেছি। যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী টিকিট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সরকার ট্রেনের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। বর্তমানে বছরে প্রায় ১১ কোটি যাত্রী পরিবহণ করছে রেল। আমরা পর্যাপ্ত ট্রেন চালু করতে পারলে বছরে প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী পরিবহণ করতে পারব। তখন হয়তো অনলাইনে যাত্রীরা টিকিট বেশি কাটতে পারবেন।

এদিকে আজ অগ্রিম টিকিট কাটার সর্বশেষ যুদ্ধ। আজ বিক্রি হবে ৯ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট। এদিনও যথাযথ নিয়মে অনলাইনে শতভাগ টিকিট বিক্রি হবে। ২৪ মার্চ থেকে যারা অগ্রিম টিকিট কেটেছেন-তারা ৩ এপ্রিল থেকে ট্রেনে যাত্রা শুরু করবেন। ৩ এপ্রিল থেকে ঈদ ফেরত অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে যথাযথ নিয়মেই।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d