একরতফা নির্বাচনে ভোটারের খরা
০ চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের প্রকাশ্যে গুলি ০ ভোট প্রতিরোধে মাঠে বিএনপি
০ পুলিশের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ গুলি টিয়ারসেল ০ এলাকা রণক্ষেত্র
কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি, ভোট প্রতিরোধে মাঠে নামা বিএনপি কর্মীদের সাথে র্যাব পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্ট বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল, জাল ভোটসহ নানা অনিয়ম ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ছিল সামান্য। দিনভর বেশির ভাগ কেন্দ্র ছিল ফাঁকা। মহানগর ও জেলার কোন কোন কেন্দ্রের সামনে গরুর পাল আর কুকুরের দল দেখা গেছে। দুপুর পর্যন্ত কোন কোন কেন্দ্রে ভোটের হার ছিল পাঁচ শতাংশের নিচে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অভিযোগ করেছে, নৌকার প্রার্থীরা দুপুরের পর কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে গণহারে জাল ভোট দেয়।
ভোটগ্রহণ শেষে চট্টগ্রামের একজন নির্বাচন কর্মকর্তা ভোটারের উপস্থিতি ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ হতে পারে বলে জানিয়েছেন। ভোটারের অংশগ্রহণ বাড়াতে সরকারি দলের তরফে নৌকার বিপরীতে দলীয় ডামি প্রার্থী দেওয়া হলেও তার কোন সুফল মিলেনি। তবে নৌকার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকা আসনগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি অন্য আসনের তুলনায় কিছুটা বেশি ছিল। এসব আসনের ভোটকেন্দ্রগুলোতে উত্তাপ উত্তেজনাও ছিল বেশি।
নগরীর পাহাড়তলী কলেজ কেন্দ্র এলাকায় নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংস ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের সংঘাতে এক মহিলাসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এই ঘটনায় প্রকাশ্যে অস্ত্রহাতে গুলি ছুঁড়েন ছাত্রলীগ নেতা শামীম আজাদ। গুলিতে আহত আশিক বড়–য়া, আশিক বড়–য়ার ছেলে শান্ত বড়–য়া, আমির হোসেনের ছেলে জামালকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মনোয়ারা বেগম নামে ৩৫ বছর বয়সী এক মহিলাকে মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ায় চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এম মনজুর আলমের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘাতের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণকারী ছাত্রলীগ নেতা শামীম স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিনের অনুসারী বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বাঁশখালী, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, হাটহাজারীসহ কয়েকটি এলাকায় নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। ভোট প্রতিরোধ করতে মাঠে নেমে দফায় দফায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘাতে জড়িয়েছে বিএনপি। নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় দুই দফা চার ঘণ্টা সংঘর্ষে পুরো এলাকা দৃশ্যত রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। বিএনপির বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ভাঙচুরের শিকার হয়েছে র্যাবের একটি গাড়ি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের টিয়ারসেল ফাঁকা গুলির জবাবে ইটপাকটেল ছুঁড়েছেন বিএনপির কর্মীরা।
সংর্ঘষ চলাকালে আশপাশের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে মৌলভী পুকুরপাড় এলাকায় বিএনপি কর্মীরা ভোট বর্জনের আহŸান জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় আশপাশের ভোটকেন্দ্রগুলো আতঙ্কে ফাঁকা হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়। বিএনপির কর্মীরা সম্মিলিতভাবে ইট পাটকেল নিয়ে পুলিশকে প্রতিরোধ করে। পুলিশও পাল্টা টিয়ারসেল ও ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। এ সময় থেমে থেমে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রথম দফা সংঘর্ষের দুই ঘণ্টা পর দুপুর সাড়ে ১২টায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সংঘবদ্ধ হয়ে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ সময় তাদের প্রতিহত করতে র্যাব পুলিশ ও বিজিবি সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সেনাবাহিনীর দুটি দলকেও আনা হয়। এ সময় বিএনপি কর্মীদের হামলায় র্যাবের একটি গাড়ি ভাঙচুর হয় এবং গাড়ি চালক আহত হন। নগরীর কয়েকটি এলাকায় ভোটকেন্দ্র ঘিরে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও যুবদলের কর্মীরা। তাদের প্রতিরোধের মুখে ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে কিছুক্ষণ।
পটিয়ায় ৩০টি কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হুইপ সামশুল হকের এজেন্টদের বের করে দিয়ে নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলামের সমর্থকদের বিরুদ্ধে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ করেছেন সামশুল হক। কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে নৌকার কর্মীদের হামলার শিকার হন সামশুল হক।
আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ৩০টি ভোটকেন্দ্র থেকে আমার এজেন্ট বের করে দিয়েছে। রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে ভোটারদের আসতে বাধা দেয়া হয়েছে। রাতভর পটিয়ায় আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর তান্ডব চালানো হয়েছে। কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পথে নৌকার শ’দেড়েক কর্মী তাকে উদ্দেশ্য করে গালি ও সেøাগান দিতে থাকে। এর মধ্যেই সামশুল কেন্দ্র ত্যাগ করেন।
বাঁশখালীতে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান হামলার শিকার হয়েছেন। সরল ইউনিয়নের একটি ভোটকেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা তাকে লাঠিপেটা করেন। এ সময় তার গাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়। দক্ষিণ জলদি আশকরিয়া পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার কারণে প্রায় একঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। সেখান থেকে পৌর কাউন্সিলর আব্দুল গফুরকে আটক করে পুলিশ। নৌকার প্রার্থীর সমর্থক গফুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালটে সিল মারার চেষ্টা করেছিলেন। গফুরকে থানায় নেওয়ার খবর পেয়ে মোস্তাফিজুর আরো কয়েকজনকে নিয়ে থানায় যান। ওসি তোফায়েল আহমেদ অভিযোগ করেছেন, মোস্তাাফিজুর তাকে মারার জন্য তেড়ে গিয়েছেন।
চন্দনাইশ আসনে উপজেলার বদুর পাড়া এলাকায় হাজী বশরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের আব্দুল জব্বারের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় পুলিশের ভাড়া করা একটি গাড়ি ভাঙচুর ও চালককে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বোয়ালখালীর দক্ষিণ সারোয়াতলী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে স্থানীয় ইউপি সদস্য সুরেশ কুমার চৌধুরীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। সুরেশ স্বতন্ত্র প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের সদস্য ফুলকপি প্রতীকের বিজয় কুমার চৌধুরীর অনুসারী। হামলার জন্য তিনি কেটলি প্রতীকের আবদুচ ছালামের সমর্থকদের দায়ী করেছেন। দ্বীপ উপজেলা স›দ্বীপেও নৌকার এবং স্বতন্ত্রদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়।