Hot

একের পর এক শিক্ষার্থী হত্যায় উদ্বেগ, ক্ষোভ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া একের পর এক শিক্ষার্থীর হত্যার ঘটনা ঘটছে। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত অপরিচিত ফোনকলে হত্যাসহ বিভিন্ন হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই গুপ্তহত্যা, হামলা ও হুমকির প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্র্থীরা। এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও হুমকি প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা। 

এ সকল গুপ্তহত্যা, চোরাগোপ্তা হামলা ও হুমকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে তারা ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে   ডিএমপি কমিশনারের কাছে এই আবেদন জমা দেন। তারা উল্লেখ করেন, কিছুদিন যাবত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের দাবিতে জুলাই বিপ্লবে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী ছাত্র-জনতার ওপর ফ্যাসিবাদের দোসর কর্তৃক সারা দেশে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হামলার ঘটনা ও ফোনকলে হুমকির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর দৃশ্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা জনমনে সংশয় তৈরি করেছে এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের সাহস জোগাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরাও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং মনে করছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষত পুলিশ বাহিনীর এই বিষয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।

এসময় উপস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মাহিন সরকার বলেন, যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তাদের গুপ্তভাবে হামলা চালানো হয়েছে এবং গুপ্তহত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের অনেককেই বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রত্যেকটি ঘটনার পেছনে কোথাও পারিবারিক, কোথাও রাজনৈতিক বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, ডিএমপি কমিশনার আমাদের প্রতি খুব সহানুভূতিশীল। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিবেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তায় সচেষ্ট আছেন।
সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি শাবাব হোসেন মেহের বলেন, আমাকে ১৭ই ডিসেম্বর রাত নয়টায় একটি নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কল করে হুমকি দেয়া হয়েছে। এসময় হুমকিদাতা আমাকে বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারবো না। আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না। আমার পরিবারের কাউকে ভালো থাকতে দিবে না। অন্যদের মতো আমারও একই অবস্থা হবে। এ ধরনের হুমকি দেয়ার পরে ওই নাম্বারটি নিয়ে আমি থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। পুলিশ নাম্বারটি ট্র্যাকিং করে আজ তাকে গ্রেপ্তারও করেছে শুনেছি। তবে এরকম নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পরিচয়ে সরাসরি হুমকি দিচ্ছে। এ ধরনের কার্যক্রমকে যদি প্রশ্রয় দেয়া হয় তাহলে জনগণের মধ্যে ভীতি তৈরি হবে, এটি মোটেই উচিত না। শুধু আমাকে নয়, এরকম আরও অনেককে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়া হচ্ছে।

এদিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া তিন শিক্ষার্থীর  গুপ্তহত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিল থেকে এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানানো হয়। মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মিছিলটি শুরু হয়। ব্যানারে লেখা ছিল ‘জুলাই অভ্যুত্থান ও ভারতীয় অগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনের তিন সহযোদ্ধার গুপ্তহত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ মিছিল। 

এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, যে বিপ্লবীদের কাঁধে ভর দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই বাংলাদেশে বিপ্লবীদের লাশ রাস্তায় পড়ে থাকে। বিপ্লবীদের রক্ত মাড়িয়ে ক্ষমতায় যাওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ ক্ষেত্রে নির্বিকার নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে। এটা অশনি সংকেত। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মঞ্জু বলেন, ভারতীয় অগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চলবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে হবে।  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক বার্তায় বলেন, ‘দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। মাত্র ছয় দিনের ব্যবধানে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামা একজনের নির্মম মৃত্যু আমাদের সমাজের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভয়ানক চিত্র তুলে ধরেছে। গাজীপুরের তাজবির হত্যার ঘটনায় শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি উত্থাপন করেছেন, যা ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত। এই দাবি বাস্তবায়নই পারে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার প্রতি প্রশাসনের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে। অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাই, অপরাধীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করুন। রাজধানীসহ সারা দেশে টহল জোরদার করুন, যাতে আর কোনো মা-বাবার সন্তান এভাবে প্রাণ না হারান।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, আমরা বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এ সকল ঘটনায় অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button