Hot

এক ঘণ্টায় এভালন এভিয়েশন দখল করেন তারিক সিদ্দিক

মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক। পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা। ভিন্নমত দমন, গুম, খুন, ক্রসফায়ার, নির্যাতন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল ও বিরোধী দলের ওপর মামলা, হামলার অন্যতম নির্দেশদাতা তিনি। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সকল গোপনীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে যাদের নাম উঠে এসেছে সেখানে প্রথম সারিতে তারিক সিদ্দিক। সামরিক বাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও সামরিক প্রশাসনে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল তার। এই সুযোগে দেশে-বিদেশে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। তারিক সিদ্দিক বেসরকারি খাতে লুটপাটের অর্ধেকটাই করতেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাবেক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আলমগীর হোসেনের মাধ্যমে। এই আলমগীরকে দিয়েই নামে-বেনামে হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন তারিক সিদ্দিক ও তার পরিবার। তারিক সিদ্দিকির স্ত্রী শাহনাজ সিদ্দিকির পরামর্শে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও দেশের এভিয়েশন খাত পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করতেন আলমগীর হোসেন। এই খাতে আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতাও কখনো তারিক সিদ্দিকির বিরুদ্ধে যাননি। তিনি যা চেয়েছেন ১৫ বছর এভিয়েশন খাতে তাই হয়েছে। মানবজমিন অনুসন্ধানে তারিক আহমেদ সিদ্দিকির এভিয়েশন খাতে দখলবাজির কিছু তথ্য উঠে এসেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭ সালের পহেলা জানুয়ারি ব্যবসায়িক পার্টনার আলমগীরকে ব্যবহার করে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এমএ মান্নানের ছেলে ব্যারিস্টার মঞ্জুরুল করিম রনির ৪০ কোটি টাকার প্রতিষ্ঠান এভালন এভিয়েশন দখল করে নেন তারিক সিদ্দিক। শুধু দখল করেই থেমে যাননি। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ডজন খানেক নাশকতা ও বিস্ফোরকের পেন্ডিং মামলা দিয়ে দেশ ছাড়া করেন। কাউকে কাউকে থানায় ধরে নিয়ে সীমাহীন নির্যাতন করা হয়। ডিবি পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন। এখনো মামলার জালে ফেঁসে আছেন এভালন কর্তারা। এমন অন্তত ৫ জনের সঙ্গে কথা বলেছে মানবজমিন। দখলের ঘটনার সবিস্তর বর্ণনা করেছেন ওই কর্মকর্তারা।

এভালন সূত্রে জানা গেছে, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর হ্যাঙ্গার গেটের অ্যাপ্রোন এরিয়ার ৮১০ বর্গফুট ও বোডিং ব্রিজের নিচে ১২০ বর্গফুট জায়গা ইজারা পায় এভালন এভিয়েশন। বাংলাদেশে তারাই প্রথম বিদেশি এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স এন্ড সার্ভিসিং সেবা চালু করে। অনুমোদন পাওয়ার পরে ২০০৯ সালের এপ্রিল থেকে প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিদিন অন্তত ২০ থেকে ২৫টি বিদেশি বিমানের মেইনটেন্যান্স সেবা দিতো প্রতিষ্ঠানটি। তাদের বিনিয়োগ ছিল প্রায় ৪০ কোটি টাকার উপরে। প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ প্রকৌশলী ছিলেন বিদেশি। মেইনটেন্যান্স প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশও বিদেশে থেকে আমদানি করা হতো। মূলত এভালন এভিয়েশনের কাজ ছিল বিমানবন্দরে আসা বিভিন্ন দেশের পরিবহন ও যাত্রীবাহী বিমানের কারিগরি ত্রুটি পরীক্ষা- নিরীক্ষা করা। বিমান অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই এভালনের কর্মীরা এয়ারক্রাপ্টের ইঞ্জিন, যন্ত্রপাতি, ফুয়েল, ককপিট, ওয়াশরুম পর্যবেক্ষণ করে ছাড়পত্র দিতেন। প্রতিটি এয়ারক্রাফটের উড্ডয়নের আগে সব ধরনের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও মেরামত কাজ করেছে এভালন।

জানতে চাওয়া হলে এভালনের এডমিন অফিসার মাহমুদ হোসেন রাজু মানবজমিনকে বলেন, ঘটনার দিন তারিক সিদ্দিকির বন্ধু আলমগীর হোসেন নিজেই হ্যাঙ্গার গেটে উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি ট্যাগ দিয়েই ৫০ থেকে ৬০ জন লোক এসে ২০১৭ সালের পহেলা জানুয়ারি ১ ঘণ্টার মধ্যে এভালন এভিয়েশন দখল করে নেয়। সেদিন বহিরাগত বিপুলসংখ্যক লোক নিয়ে এভালনের কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। মারধর করে বিমানবন্দর থেকে বের করে দেয়া হয়। তারা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে এভালন অফিসে ঢুকে পড়ে এবং ভাঙচুর করে। এর একটু পরে আমরা জানতে পারি তারা তারিক সিদ্দিকির বন্ধু বিএস টেকনিক্যাল সার্ভিসের ভাড়া করা লোকজন। পরে এভালনের অফিসে কোনো নোটিশ ছাড়াই তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। আমরা আমাদের মালামাল উদ্ধার ও যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিতে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বেবিচকের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েও পাইনি। তারা জবাবে বলেছে উপরের নির্দেশ আছে। আমরা কিছু করতে পারবো না। উপর থেকে আদেশ এলে মালামাল ফেরত দেয়া হবে। তবে ৮ বছরে কিছু জানানো হয়নি।

এভালন বলছে, তাদের প্রতিষ্ঠান দখলের পরে ২ ঘণ্টার মধ্যে বিএস টেকনিক্যাল সার্ভিস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ওই জায়গার ইজারা দেয় বিমান কর্তৃপক্ষ। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক তারিক সিদ্দিকির বন্ধু গ্রুপ ক্যাপ্টেন আলমগীর হোসেন। বিএস টেকনিক্যাল সার্ভিস মূলত তখন থেকেই এভালন এভিয়েশনের অফিস, গাড়ি, প্রযুক্তি, যন্ত্রাংশ ব্যবহার শুরু করেন। তারা উড়ে এসে রেডিমেট অফিসে বসে পড়ে। কোনো বিনিয়োগ করতে হয়নি বলে দাবি করেছেন এভালনের জেনারেল ম্যানেজার ওমর ফারুক। তাদের নতুন করে কিছু করতে হয়নি। শুধু বেবিচকের ছাড়পত্র নিয়ে দখল করা মালামাল দিয়েই তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ওখানে শুধুমাত্র এভালনের নামটি মুছে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাকি সবকিছুই বিএস টেকনিক্যাল ব্যবহার করেছে। এভালনের দাবি, প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়ার সময় তারা তাদের কোনো মালামাল আনতে পারেনি। মালামাল ও যন্ত্রপাতির অনুমানিক মূল্য ছিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এমনকি স্টাফদের ব্যবহৃত দুটি মাইক্রোবাসও ছিনতাই করে নেয়া হয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেবিচকের এক সাবেক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, সাবেক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আলমগীরকে ২০০১ সালে অনিয়ম দুর্নীতির কারণে বরখাস্ত করেছিল বিএনপি সরকার। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে তিনি আবারো চাকরি ফিরে পান। মূলত তারিক আহমেদ সিদ্দিক তাকে আবার বিমান বাহিনীতে ফিরিয়ে আনেন এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন বানান। আলমগীর হোসেন ও তারিক আহমেদ সিদ্দিক দু’জনে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। আলমগীর তারিক সিদ্দিকীর সঙ্গে দেশ বিদেশ ভ্রমণ করেন। আর এভিয়েশন ও বিমান খাতের এমন কেউ নেই যে তাদের বন্ধুত্বের বিষয়ে জানেন না। এজন্য আলমগীর বিমানবন্দরে একচ্ছত্র ক্ষমতা খাটান। কেউ তাকে কিছু বলার সাহস পান না। বিমান কর্তৃপক্ষও এই আলমগীরের কাছে অসহায় ছিলেন। 

দখলের বিষয়ে এভালন এভিয়েশনের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ ওমর ফারুক মানবজমিনকে বলেন, আসলে ওরা প্ল্যান মাফিক কাজ করেছে। প্রথমে আমাদের ইজারা বাতিল করিয়েছে। পরে আমাদের ফরেন পার্টনারকেও ওরা বুঝিয়ে নিয়ে গেছে। তখন গাজীপুরের সাবেক এসপি হারুন অর রশিদ আমাদের সবচেয়ে বেশি হয়রানি করে। আমাকে তারেক রহমানের রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। আমাকে নাশকতার পেন্ডিং মামলায় বাসা থেকে তুলে আনে পুলিশ। পরে থানায় এনে তৎকালীন জয়দেবপুর থানার ওসি মাহমুদুল হাসান ঘুষ দাবি করেন। ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়। ২ থেকে ৩ দিন আমাকে একটি অজ্ঞাত স্থানে আটক করে রেখে পরিবারের সদস্যদের চাপ দেয়া হয়। এটা ২০১৭ সালের জুন-জুলাই মাসে হবে। পরে ওসিকে আমার পরিবার ১ কোটি ১১ লাখ টাকা দেয়। পরদিন চোখ বন্ধ অবস্থায় আমাকে মাওনা ফেলে রেখে যায় পুলিশ। ওসি মাহমুদুলের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো। মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার শর্তে টাকা নিলেও পরে তা মানেনি। আরও কয়েকটি মামলা দিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে যা হয়েছে এই এভালনকে কেন্দ্র করেই করেছে। গাড়ি পোড়ানো, রাজনৈতিক মামলা। আমার নামে ৭টি মামলা ছিল। আমি কখনো রাজনীতি করিনি কিন্তু তারপরেও আমাকে এমন করা হয়েছে। আমি সহ এভালনের আরও ৩ জনের সঙ্গে এই কাজ করা হয়েছে।  

মোহাম্মদ ওমর ফারুক আরও বলেন, এভালন এভিয়েশন লিমিটেডের এমডি এম মঞ্জুরুল করিম রনি। তিনি বিএনপি নেতা গাজীপুর সিটি করপোরেশন সাবেক মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের পুত্র। প্রতিষ্ঠান মালিকের রাজনৈতিক পরিচয়ই তারিক সিদ্দিকির ভালো লাগেনি। এজন্য তিনি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে দিয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি করেছেন। এভালন বন্ধ করতে এমন কোনো কাজ নেই যা তারিক সিদ্দিক করেননি। আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নাশকতার পেন্ডিং মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। তবুও আমরা বিমানবন্দর ছেড়ে আসিনি। পরে তারেক সিদ্দিকির নির্দেশনায় তার ব্যবসায়িক পার্টনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর হোসাইন ও সিভিল এভিয়েশনের তৎকালীন তাদের দোসর কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮নং হ্যাঙ্গার গেটস্থ এভালন এভিয়েশন লিমিটেডের আসবাবপত্র, মেরামত কাজে ব্যবহৃত টুলস অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট ও ২টি গাড়িসহ পুরো প্রতিষ্ঠানটি দখলে নিয়ে নেন। তারা আমোদের মারধর করে বের করে দেন। 

এভিয়েশন দখলের পরে নির্যাতন থামেনি উল্লেখ করে ওমর ফারুক বলেন, ডিবি প্রধান হারুনকে দিয়ে বারিধারাস্থ অফিস থেকে আমাকে গ্রেপ্তার পূর্বক শারীরিক নির্যাতন করে। তখন আমাদের অফিস তছনছ করা হয়। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। বর্তমানে আমরা এই দখল বাণিজ্যে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।  
অভিযোগের বিষয়ে তারিক সিদ্দিকির বন্ধু বিএস টেকনিক্যাল সার্ভিসের মালিক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আলমগীর হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে তার বনানীর বাসা বাড়ি নং-৯৫, রোড নং-৬, ব্লক সি’তে গেলে সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন তাও কেউ বলতে পারেনি। তার মুঠোফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। 

মানা হয়নি উচ্চ আদালতের আদেশ: দখলের পরের মাসেই বাংলাদেশ বেসমামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এভালন এভিয়েশনের ইজারা বাতিল করে এভালন কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে তারা উল্লেখ করেন, ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন্স বিভাগ হতে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী আপনারা অত্র কর্তৃপক্ষের অনুমতি এএমও, এমআরও নীতিমালা অনুসরণ না করে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য এফএসআর বিভাগের অনুমতিপত্র ছাড়া ইজারা নবায়ন করা যাচ্ছে না। পরে এফএসআর বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেও এভালন কর্তৃপক্ষ তাদের ইজারা ফেরত পাননি। সেইসঙ্গে তাদের দখল হওয়া মালামালও ফেরত পায়নি। পরে ওই বছরই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বেআইনি কর্মকাণ্ড ও দখল হওয়া মালামাল ফেরত চেয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করা হয়। পিটিশন নম্বর ৫৬৯/১৭। পরে শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ দখল হওয়া এভালন এভিয়েশনের জায়গায় উপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। এবং ওই জমি অন্য কাউকে ইজারা না দিতে আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের আদেশ মানা হয়নি। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto