Bangladesh

এক দশকে বাংলাদেশের ফল ও সবজি রপ্তানি কমেছে ৬৮.৭%

ফল, সবজি ও সহযোগী পণ্য রপ্তানিকারক সমিতি-এর তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানির ৩২% গিয়েছে ইউরোপে। অথচ, ২০১৩-১৪ তে কৃষিপণ্য রপ্তানির ৫৪.৮% গিয়েছিল ইউরোপে। 

উচ্চ রপ্তানি ব্যয়, গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসের (গ্যাপ) ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে গত এক দশকে বাংলাদেশের ফল ও সবজি রপ্তানি কমেছে ৬৮.৭%। বাংলাদেশ ফল, সবজি ও সহযোগী পণ্য রপ্তানিকারক সমিতি জানিয়েছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে যেখানে ফল ও সবজি রপ্তানি হয় ২৩৯.১৯ মিলিয়ন ডলারের; সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৭৪.৯৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। 

আবার, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই পণ্যগুলোর রপ্তানি ইউরোপীয় বাজারে যেমন কমেছে, তেমনি বেড়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। 

ফল, সবজি ও সহযোগী পণ্য রপ্তানিকারক সমিতি-এর তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানির ৩২% গিয়েছে ইউরোপে। অথচ, ২০১৩-১৪ তে কৃষিপণ্য রপ্তানির ৫৪.৮% গিয়েছিল ইউরোপে। 

অন্যদিকে, বর্তমানে কৃষিপণ্য রপ্তানির ৪৯% যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য; যা এক দশক আগে ছিল ৩০.৭%। 

রপ্তানিকারকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত এ খাতের রপ্তানির মার্কেট পুরোটাই প্রবাসীদের টার্গেট করে হয়ে থাকে। তবে এই মার্কেটেও দেশের রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগীতা সক্ষমতা কম। 

কারণ এদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের রপ্তানিমূল্য প্রতিবেশি দেশের তুলনায় বেশি। ভারত যেখানে সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে রপ্তানি করতে পারে, সেখানে বাংলাদেশের একমাত্র উপায় আকাশ পথ। আবার আকাশ পথের খরচও প্রতিবেশি দেশটির তুলনায় বেশি।

এছাড়া বিমানবন্দরে কুলিং হাউজ না থাকা, স্ক্যানার নিয়ে জটিলতা, দুই দফায় পণ্য স্ক্যানিং এর বিল নেওয়া, বিলম্বিত শিপমেন্টে পণ্যের মান খারাপ হওয়া, রপ্তানি মূল্য দেশে আসায় ধীরগতি সহ বেশকিছু বড় কারণে সামগ্রিক রপ্তানি বাড়ানো যাচ্ছে না বলে জানান রপ্তানিকারকরা।

এছাড়া আমদানিকারক দেশগুলোর সুপার শপে এখনো বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের রপ্তানি হয় না। কারণ উৎপাদন থেকে শুরু করে কৃষিপণ্য রপ্তানি পর্যন্ত ট্রেসিবিলিটির তথ্য সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই। 

গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসের (গ্যাপ) মাধ্যমে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যবস্থা না থাকায় এসব পণ্যে ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করতে পারছে না। ইউরোপের সুপার শপে পণ্য রপ্তানির পূর্বশর্তই হলো গ্যাপ মেনে পণ্য উৎপাদন করা।

এদেশে গ্যাপ এর মাধ্যমে কৃষি পণ্যের উৎপাদন না থাকায় এই ট্রেসিবিলিটি সংরক্ষণের ব্যবস্থাও এখনো তৈরি হয়নি। এছাড়া প্যাকেজিং দুর্বলতা, পচনশীল এসব পণ্যের শেলফ লাইফ বাড়ানো এবং ব্যাকটেরিয়া মুক্ত করার প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ না হওয়ায় রপ্তানি বাজার ধরে রাখা যাচ্ছে না।

ফল, সবজি ও সহযোগী পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং রপ্তানিকারক মো. মনসুর বলেন, বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশের রপ্তানিকারকদের তুলনায় প্রতিযোগীতা সক্ষমতায় অনেক পিছিয়ে। 

তিনি বলেন, “পণ্যের বাড়তি দাম, স্ক্যানার নিয়ে জটিলতা, বিমানবন্দরে কুলিং রুম না থাকা, সময়মত শিপমেন্ট জটিলতা, বাড়তি এয়ার ফ্রেইট চার্জ এবং রপ্তানি মূল্য দেশে আসতে বিলম্ব হওয়ার মত কারণগুলোতে আমরা পিছিয়ে পড়ছি।”

তিনি আরও বলেন, “ভারতের মুম্বাই থেকে দুবাইয়ে সমুদ্রপথে পণ্য পাঠাতে সময় লাগে ৪ দিন। যেখানে আমাদের লাগে ৩০ দিন। পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজম্যান্ট না থাকায় আমরা সমুদ্র পথ ব্যবহারই করতে পারি না।”

সমিতির অ্যাডভাইজর মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, “উৎপাদন থেকে শুরু করে শিপমেন্ট পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই আমরা সমস্যার মুখে পড়ি।”

কৃষিপণ্য হিসেবে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফলমূল ও পান রপ্তানি করা হয়।

করলা, বেগুন, ওকড়া, কাঁচামরিচ, সবুজ পেঁপে, সবুজ কলা, মুলা, মিষ্টি আলু, ফুলকপি সহ ৫৪ ধরনেরও বেশি সবজি রপ্তানি করা হয়। ফলের মধ্যে কাঁঠাল, আনারস, লিচু, আম, লেবু, পেয়ারা, ড্রাগন ফলসহ ৩৪ ধরনের ফল রপ্তানি করা হয়।

রপ্তানিকারকরা জানান, ইউরোপের মধ্যে প্রধানত যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও রাশিয়াতে রপ্তানিত করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যে আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান ও বাহরাইন। কিছু পণ্য কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং শ্রীলঙ্কায়ও রপ্তানি করা হয়।

এদিকে, বাংলাদেশ থেকে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ১,১৬১ মিলিয়ন ডলার; ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮২৯ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সহ বেশ কয়েকটি কারণে এই পতন ঘটেছে।

উচ্চ রপ্তানি সম্ভাবনা

সমিতির অনুমান অনুযায়ী, বাংলাদেশের কৃষি রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করে এমন সমস্যাগুলোর সমাধান করলে ২০৩০ সাল নাগাদ এথনিক মার্কেটে বার্ষিক চাহিদা ৭০ লাখ টন হতে পারে, বর্তমান যে পরিমাণ ৯০ হাজার টন। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেশের ৩ লাখ হেক্টর জমিতে ৬,৯১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের গুণমান এবং নিরাপত্তা উন্নত করা, রপ্তানি বাজারে এসব পণ্য আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা।

একইসঙ্গে গাজীপুরে একটি ই-রেডিয়েশন সেন্টার নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিনা)। 

বিনার মহাপরিচালক ডক্টর মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেছেন, কৃষিপণ্যের শেলফ লাইফ বাড়ানো রপ্তানি বাড়াতে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখতে সহায়তা করবে।

স্টেকহোল্ডাররা বলছেন, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে পচনশীল পণ্য রপ্তানিকারকদের জন্য কুলিং রুম সুবিধা থাকবে। ঢাকার শ্যামপুর প্যাকিং হাউসের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার প্রক্রিয়াও চলছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d