এক বছরে মূলধন কমেছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা

টানা দরপতনের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা। প্রতিদিন শেয়ারের দর কমছে। কমতে কমতে একেবারে তলানিতে ঠেকেছে সূচক। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের মূলধন হারিয়ে গেছে ৫৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। ধারাবাহিকভাবে এখনো কমছে মূল্যসূচক। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে লগ্নিকারীরা কোনো সুফল দেখতে পাননি এই এক বছরে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজার ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা শুধু বক্তৃতা করছেন। বাস্তবে বাজার উন্নতির পরিবর্তে বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। ব্রোকারেজ হাউসগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে শেয়ারবাজার পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।
জানা গেছে, গত বছরের জুন পর্যন্ত শেয়ারবাজার স্থিতিশীল ছিল। জুনের পর দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে শেয়ারবাজারেও অস্থিরতা তৈরি হয়। তবে আগস্টের পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি দেখা যায়। ওই সময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বা সব সিকিউরিটিজের দাম ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। যা সর্বশেষ চলতি ১৯ জুন কমে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এই সরল হিসাবে এক বছরে বিনিয়োগকারীদের সিকিউরিটিজের দাম কমেছে ৫৮ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। প্রকৃতপক্ষে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছেন আরও অনেক বেশি। বর্তমান সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে ১৫টি ট্রেজারি বন্ড শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন শুরু করে। যেগুলোর দর বাজার মূলধনে যোগ হয়েছে। এখন ওইসব ট্রেজারি বন্ড যদি বাজার মূলধন থেকে বাদ দেওয়া হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছেন অনেক বেশি। এগুলো বাদ দিলে বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত পুঁজি কমেছে ১ লাখ ৮ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। গত বছরের ১৮ আগস্ট খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে চেয়ারম্যান করে নতুন সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন গঠনের পর ১৯ জুন পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১ হাজার ১৫০ পয়েন্ট। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার দিন লেনদেনের শুরুতে ডিএসইএক্স সূচকটি ছিল ৫৯০৪ পয়েন্ট। যে সূচকটি সর্বশেষ ১৯ জুন বৃহস্পতিবার ১ হাজার ১৫০ পয়েন্ট কমে ৪৭৫৪ পয়েন্টে। অর্থাৎ নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে সূচক কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এদিকে বাজার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি করতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। সর্বশেষ গত ঈদের আগে মতিঝিলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
কাফন মিছিল করে বিনিয়োগকারীরা বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসারণের দাবি জানান। এর আগেও একাধিক দিন তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। বাজারে ধারাবাহিক পতনের জন্য বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অযোগ্যতা ও শেয়ারবাজার নিয়ে জ্ঞানশূন্যতাকে দায়ী করে আসছেন বিনিয়োগকারীরা। জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা শেষ হয়ে গেছেন। ব্রোকারেজ হাউসগুলোর টানা লোকসানে অস্তিত্ব না থাকার মতো অবস্থা। এরই মধ্যে অনেক ব্রোকার হাউসে কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে। তবে সব কর্মী ছাঁটাই করেও টিকে থাকা যাবে না যদি বিদ্যমান মন্দা চলতে থাকে। বাজারে কোনো ধরনের পজিটিভ কিছু দেখা যাচ্ছে না। বাজার নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে বলে কর্তৃপক্ষের আচরণে বোঝা যায় না।