এক বছরে ১০০ টাকা বাড়ল আমদানি করা ফলের দাম
ঋণপত্র খোলায় জটিলতা, ডলারের দাম বৃদ্ধি ও শুল্ক বাড়ানোর কারণে বিদেশ থেকে ফল আমদানি কমছে। এতে বাড়ছে দামও। বছরের ব্যবধানে কমলা, মাল্টা, আঙুর ও আপেলের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত। আমদানি ফলের মধ্যে কমলা, মাল্টা, আঙুর ও আপেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এই চার ফলের দামই এখন বাড়তি। তবে বিদেশি ফলের বাজার চড়া হওয়ায় দেশি ফল সেই বাজার দখল করছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, দেশের বাজারে ৬০-৬৫ শতাংশ ফল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। কয়েক বছর আগে দেশের ফলের বাজার ছিল আমদানি করা বিদেশি ফলের দখলে।
তবে ডলার সংকটের পাশাপাশি কাস্টমস শুল্কহার বাড়িয়ে দেওয়ায় সেই আমদানি করা ফলের বাজারে ধস নেমেছে।
দেশে কৃষি পণ্য আমদানির ছাড়পত্র দিয়ে থাকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য মতে, দেশের সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, ভুটান, মিসর, ব্রাজিল, তিউনিশিয়া, আর্জেন্টিনা, তুরস্ক, পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ফ্রান্স থেকে ফল আমদানি করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে তিন লাখ ৭৮ হাজার টন ফল আমদানি করা হয়।
২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি করা হয় পাঁচ লাখ ছয় হাজার টন। আমদানি কম হয়েছে এক লাখ ২২ লাখ ছয় হাজার টন। এ ছাড়া জুলাই ২০২২ থেকে নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত পাঁচ মাসে এক লাখ ৫৮ হাজার টন ফল আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। একই সময়ে ২০২১ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর ২০২২ সালে দেশে ফল আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা এক লাখ ৬২ হাজার টন। কমেছে পাঁচ হাজার টন। আর ২০২২ জুলাই থেকে ২০২৩ এর নভেম্বর পর্যন্ত কমলা আমদানি করা হয়েছে ৪১ হাজার ৮৯২ টন, মাল্টা ৩০ হাজার ২২ টন, আপেল ৫৬ হাজার ২৭৭ টন ও আঙুর ২৫ হাজার ৪০৭ টন।
আমদানি কম হওয়ার কারণে চাহিদার শীর্ষে থাকা আপেল, কমলা, মাল্টা ও আঙুরের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন ফলের বাজার সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ২০২২ সালে আপেলের কেজি ছিল ১৭০-১৮০ টাকা। সেটা এখন ২৬০-২৭০ টাকা। বছরের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিতে ৮০-৯০ টাকা। কমলা ছিল ১৫০-১৬০ টাকা কেজি। এখন ২৪০-২৬০ টাকা। বেড়েছে ৯০-১০০ টাকা। মাল্টার কেজি ছিল ১৬০-১৭০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৭০ টাকা। বেড়েছে ১০০ টাকা। আর আঙুরের দাম ছিল ৩৫০-৩৬০ টাকা কেজি। এখন ৪৪০-৪৫০ টাকা। কেজিতে বেড়েছে ৯০ টাকা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই আমদানি করা বিদেশি ফলের ওপর শুল্কহার বাড়িয়ে ফলের বাজারকে অস্থির করে তুলেছে। বিশেষ করে আগে প্রতি কেজি আপেল, কমলা এবং মাল্টায় ৬২ টাকা শুল্ক আদায় করলেও এখন তা ঠেকেছে ৮৮ টাকায়। একইভাবে ৯৮ টাকার আঙুরের শুল্কহার ১১৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে বিদেশি ফলের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কহার ছিল ৩ শতাংশ, তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ শতাংশে। এ ছাড়া এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এলসি খুলতে চায় না ব্যাংকগুলো। সেই সঙ্গে আছে অন্যান্য ভ্যাট ও কর। এতে বিদেশি ফলের বাজার এখন অনেকটা ক্রেতাশূন্য।
অসুস্থ ছেলের জন্য নগরীর চকবাজারে মাল্টা কিনতে গিয়েছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মীর কাসেম। কিন্তু মাল্টার দাম বেশি চাওয়ায় না কিনে এক কেজি দেশি পেয়ারা কিনে বাড়ি ফিরলেন তিনি।
চকবাজারের খুচরা ফল ব্যবসায়ী মনির উল্লাহ বলেন, আগের মতো বিদেশি ফলের ক্রেতা নেই। এ ছাড়া এখন দেশি অনেক ফলই বাজারে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বিদেশি ফল মানুষ কিনছে কম।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে ‘ফ্রেশ ফ্রুটস’ ও ‘ড্রাই ফ্রুটস’ এই দুই ক্যাটাগরিতে প্রায় ৫২টির মতো ফল আমদানি করা হয়। শুল্ক না কমলে এসব ফলের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, ‘ফল আমদানির ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়েছে। এতে আমরা ফল আমদানি করতে হিমশিম খাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে যদি কাস্টমস কর কমানো হয়, তাহলেই সাধারণ মানুষ বাজার থেকে ফল কিনতে পারবে। আর সেটি না হলে ফলের দাম নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালে আসবে না।’