Hot

‘এক ভোটে’ প্রেসিডেন্ট, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস, ঢাকায় উত্তেজনা

“মনে হচ্ছিল এটি যেন এক শবযাত্রা। সবাই যেন পাথর হয়ে গেছে। আড়াইটার সময় আল গোর একা তার স্যুইটের বেডরুমে গিয়ে বুশকে ফোন করলেন এবং পরাজয় স্বীকার করলেন। বুশকে অভিনন্দন জানালেন।’’ আল গোর যখন হার স্বীকার করে বক্তৃতা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন তার টিমের কাছে একটি বার্তা আসলো। “তার দলের একজন কর্মীর কাছে একটা  টেক্সট  মেসেজ আসলো ক্যাম্পেইন ম্যানেজারের কাছ থেকে। বলা হলো, আল গোরকে যেন অনুষ্ঠান মঞ্চে যেতে দেয়া না হয়। কারণ ভোটের লড়াই এখনো শেষ হয়নি।” কিন্তু আল গোর চাচ্ছিলেন, তিনি মঞ্চে গিয়ে বক্তৃতা দেবেন। তার কথা ছিল, “লোকজন বহু ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছে। আমি সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’’ তখন একটা লোক সবার সামনে গিয়ে বললো, মাইক রেডি নয়। কাজেই সবাই আবার বাইরের রুমে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। এরপর লোকটা আল গোরকে গিয়ে বললো, “ফ্লোরিডার ব্যাপারটা এখনো শেষ হয়ে যায়নি।’’
এ বয়ান ক্যালি শেলের। যিনি ২০০০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী আল গোরের অফিসিয়াল ফটোগ্রাফার ছিলেন। পরে কাজ করেছেন বারাক ওবামার সঙ্গেও। কীভাবে মাত্র একটি ইলেক্টোরাল ভোটের ব্যবধানে জর্জ ডাব্লিউ বুশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তার রোমাঞ্চকর, উত্তেজনাপূর্ণ বর্ণনা দেন ক্যালি শেল, বিবিসিতে যা তুলে এনেছিলেন রেবেকা কেসবি। শুধু যুক্তরাষ্ট্র কেন, পৃথিবীতেই সম্ভবত এমন নির্বাচন আর হয়নি। একবার বলা হচ্ছিল আল গোর জিতেছেন। পরে খবর পাওয়া যায় বুশ জিতেছেন। ব্যালট গণনা নিয়ে লড়াই গড়ায় আদালতে। ফ্লোরিডার আদালতের রায় পাল্টে যায় মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে। তাও সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে। এক মাসের আইনি লড়াই শেষে মাত্র একটি ইলেক্টোরাল ভোট প্রেসিডেন্টের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়।

আরেকটি মার্কিন নির্বাচন একেবারেই দোরগোড়ায়। দুইদিন বাদেই ভোট। ২০০০ সনের জনমত জরিপ যেমন লড়াইয়ের আভাস দিয়েছিল এবারো একই রকম খবর পাওয়া যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে ডনাল্ড ট্রাম্প এবং কমালা হ্যারিসের মধ্যে। প্রায় সব জরিপই বলছে তাদের ভোটের ব্যবধান হবে একেবারে সামান্য। কোথাও ট্রাম্প এগিয়ে, কোথাও কমালা। ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান শিবিরের ঘুম হারাম। যদিও ভোটের আগেই উত্তেজনা তৈরি করেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। সিএনএনে একজন ভাষ্যকার বলছিলেন, ট্রাম্প এমন একটি আবহ তৈরি করতে চাচ্ছেন যেন তার জয়ই সত্য, আর সব মিথ্যা। ট্রাম্প এরইমধ্যে দাবি করেছেন, ‘গড যদি ভোট গনণাকারী হন তবে তিনি ভূমিধস জয় পাবেন।’ পুরো দুনিয়ার চোখ এখন মার্কিন মুল্লুকে। পরিবর্তিত পৃথিবীতেও আমেরিকা বিশ্ব নেতা। সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ইউরোপ এবং ইউক্রেন। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে ইউক্রেনের পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র। ডনাল্ড ট্রাম্প যদি ক্ষমতায় আসেন তাতে পরিবর্তন আসবে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ চলছে। মার্কিন নির্বাচনের পর সে অঞ্চলে কী হবে? যুদ্ধ বিস্তৃত হবে? শান্তি ফিরবে? বিশ্ব ব্যবস্থায় কি কোনো পরিবর্তন আসবে? পুতিন যে ট্রাম্পের জয় চাইছেন তা কারও অজানা নয়। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেই হোন চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বড় কোনো হেরফের হবে না।

মার্কিন নির্বাচনের দিকে সবসময় দৃষ্টি থাকে বাংলাদেশেরও। তবে এবার মনে হয় এ ভূমে হাজার হাজার মাইল দূরের নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা কিছুটা বেশিই। শুক্রবার রাতে এক্সে দেয়া ডনাল্ড ট্রাম্পের একটি বার্তা যাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-বিশ্লেষণ। কিছুটা দীর্ঘ বার্তার শুরুতে ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। লিখেছেন, ‘আমি বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দেশটিতে দলবদ্ধভাবে তাদের ওপর হামলা ও লুটপাট চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরিভাবে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে রয়েছে।’ বার্তায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন হিন্দু ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করেছেন তিনি। তবে তার এই বার্তা ঢাকায় কম চাঞ্চল্য তৈরি করেনি। বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গেল বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিবেচনায় এ বার্তা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কেউ কেউ এর পেছনে গুজব, লবিস্ট ফার্মের ভূমিকা এবং হিন্দুত্ববাদী প্রচারণার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করে আসছে। বিশেষত রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা ও পিটার হাস্‌ এ নিয়ে অনেক চেষ্টা করেছিলেন। বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতিও ঘোষণা করেছিল। অবশ্য কাজের কাজ এতে হয়নি। শেখ হাসিনা একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। তবে গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান। নতুন এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যাকে ওয়াশিংটনের পুরনো মিত্র মনে করা হয়। তবে ট্রাম্প শিবিরের ক্ষেত্রে সে মিত্রতার চিত্র কেমন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এরইমধ্যে ভারতের সঙ্গে শীতল সম্পর্ক যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। আমেরিকার ক্ষমতার অন্দরমহলে দিল্লির প্রভাবের বিষয়টিও নতুন করে আলোচনায় রয়েছে।

বাংলাদেশের সামনে এখন বেশকিছু প্রশ্ন রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো কবে, আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি। তবে কিছু ইঙ্গিত মিলছে ২০২৫ সালে নির্বাচন হতে পারে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ ব্যাপারে রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো আওয়ামী লীগ রাজনীতি করার বা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে কি-না? এ দু’টি ক্ষেত্রেই আমেরিকার নির্বাচনের ফল প্রভাব রাখতে পারে। ড. ইউনূস সরকার এক্ষেত্রে কী কৌশল অবলম্বন করে তা হবে দেখার বিষয়। সম্ভবত, ড. ইউনূসের সরকারের চেয়েও বেশি দৃষ্টি নিয়ে মার্কিন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ। তারা কেমন ফল চান তা ধারণা করা কঠিন কিছু নয়। একইরকম ভাবে সে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি, জামায়াত, ছাত্র নেতৃত্বসহ বিভিন্ন দল ও গ্রুপ। 

আমেরিকার কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব কম-বেশি যাই হোক না কেন পুরো বিশ্ব ব্যবস্থার জন্যই এ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। একের পর এক জরিপ হচ্ছে। কোথাও কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে না। একেবারেই কাছাকাছি দুই প্রার্থী। একে অন্যের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন। দুই শিবিরই কি কিছুটা নার্ভাস? প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ তার ‘মে ফ্লাওয়ার’ বইতে লিখেছিলেন, ‘আমরা আমাদের দেশে একজন মহিলা রাষ্ট্র প্রধানের কথা চিন্তা করতে পারি। ভাবতে পারি। ওরা (আমেরিকান) তা পারে না। আসছে একশ’ বছরেও এই আমেরিকায় কোনো মহিলা প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট হবে না। অতি সুসভ্য এই দেশ তা হতে দিবে না।’ হিলারি ক্লিনটনের মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তিনি তা হতে পারেননি। কিন্তু কমালা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এবার কি তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন? তিনি কি নতুন ইতিহাস তৈরি করবেন। নাকি ডনাল্ড ট্রাম্প, যিনি সম্ভবত পুরো আমেরিকার রাজনীতির খোলনলচে বদলে দিয়েছেন তিনি আবার হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হবেন। যেই জয় পান না কেন, লড়াইটা যে খুব কঠিন হবে তা একেবারেই স্পষ্ট।

আবার ২০০০ সনে ফিরে যাই। বিবিসি’র বরাতে ক্যালি শেলের বয়ানে। ফ্লোরিডার আদালত প্রতিটি ভোট গণনার পক্ষে রায় দিলেও সুপ্রিম কোর্ট তা পাল্টে দেয়। ৯ জন বিচারকের ৫ জন ভোট পুনঃগণনা বন্ধ করার পক্ষে, ৪ জন বিপক্ষে মত দেন। আদালতের রায় অনুযায়ী জর্জ বুশই ফ্লোরিডায় জয় পান। তার মোট ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট দাঁড়ায় ২৭১। প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল ২৭০ ভোট। সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার সময় আল গোরের কাছাকাছিই ছিলেন ক্যালি শেল। ‘আইনজীবীরা সবাই তখন ফোনে কথা বলছে। আমার মনে পড়ছে, আল গোর তখন বললেন, সব শেষ হয়ে গেছে, ঠিক? আমরা কি আর কিছু করতে পারি?’ আইনজীবীরা বললো, ‘না, সব শেষ, আর কিছু করার নেই। তখন আল গোর বললেন, তাহলে আর কিছু করার নেই, আমাদের সবার এখন ঘুমাতে যাওয়া উচিত। আমার মনে হচ্ছিল, তিনি বেশ দমে গিয়েছিলেন। আল গোর বেশ নিরাশ হয়েছিলেন, যে সিস্টেমের ওপর তিনি এতটা আস্থা রেখেছিলেন, সেটি শেষ পর্যন্ত কাজ করেনি।’ প্রশ্ন হলো এবারের ভোটও কি এমনই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে?

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d