Hot

এখনই সময় দুষ্ট চক্র ভাঙার, বাংলাদেশের পরমাণু বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি

পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদানের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার (পিও ১৫) এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন গঠিত হয়। কমিশন ভৌত, জীব ও প্রকৌশল শাখার বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারমাণবিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর মৌলিক, ব্যবহারিক গবেষণা ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, পারমাণবিক বিদ্যুৎ বিষয়ক কর্মসূচির বাস্তবায়ন, খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণ, বিকিরণজনিত নিরাপত্তা চর্চা প্রতিষ্ঠাকরণ, কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ ক্ষেত্রে পরমাণু প্রযুক্তির প্রয়োগ ও মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করে থাকে।

১৯৫৬ সালে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে গঠিত পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশন ১৯৬২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে পরমাণু গবেষণা কার্যক্রম শুরু করে। ভারত ও পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশন অদ্যাবধি প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত হওয়ায় রাষ্ট্রীয়ভাবে সে দেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্বপরিমণ্ডলে তারা পরমাণু গবেষণায় সুপ্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে ভারতের কমিশন চেয়ারম্যানের জন্য রাজ্যসভায় একটা আসন সংরক্ষিত এবং চেয়ারম্যান সভায় প্রবেশের সময় স্পিকার ঘোষণা করেন, ভারত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতিনিধি প্রবেশ করছেন, আপনারা সবাই দাঁড়িয়ে পরমাণু বিজ্ঞানীদের সম্মান প্রদর্শন করুন। বাঙালি জাতি যাতে কোনোদিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, তাই স্বাধীনতা-উত্তর  বাংলাদেশের সূচনালগ্নে, বিদেশি পরিকল্পনায় জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানকে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির অধীনে না রেখে আমলা নিয়ন্ত্রিত মন্ত্রণালয়ের অধীন করে বিজ্ঞানীদের প্রাপ্ত সরকারি মর্যাদা চরমভাবে অবনমন করা হয়। এই প্রতিষ্ঠান জ্বালানি মন্ত্রণালয় হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘুরে অবশেষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে থিতু হয়েছে। জানি না, এটা আমলাতান্ত্রিক উন্নয়ন না অবনয়ন?   

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, দেশের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিজ্ঞান চর্চা ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। যাদের ন্যূনতম ৩টা প্রথম শ্রেণি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাতালিকায় যাদের অবস্থান শীর্ষে থাকে সেই সব মেধাবীরাই কমিশনে বিজ্ঞান চর্চা করতে আসে। নামকাওয়াস্ত গবেষণা বরাদ্দ, প্রাগৈতিহাসিক যুগের গবেষণাগার ও যন্ত্রপাতি নিয়ে কমিশনের  এই  নির্মোহ, প্রচারবিমুখ ও বিজ্ঞানপাগল মানুষগুলো নীরবে, নিভৃতে, নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির  লগ্ন থেকেই আমলাতান্ত্রিক জালে আটকে নিরীহ বিজ্ঞানীদের উপর যে ধরনের অন্যায়, অবিচার করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য এই রাষ্ট্রের শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদসহ সকল সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসার এখনই সময়। এখনই সময় এই চক্র ভাঙার। মনে রাখবেন, ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান দুটোই নিউক্লিয়ারধারী দেশ। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এমন একটি নিরাপদ রাষ্ট্র পায়, যেখানে মানসিক সাহস, অত্যাধুনিক জ্ঞান আর মানবিকতা নিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী মাথা উঁচু করে বসবাস করতে পারে।  

বিজ্ঞানের কোনো সীমানা নেই। বিজ্ঞানীরা সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্য বিজ্ঞান চর্চা করে থাকেন। পৃথিবীর যেকোনো বড় আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী সমস্ত বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টার ফল।  বিজ্ঞান চর্চার এই ফল কীভাবে কোন দেশ কাজে লাগাবে সে দায়িত্ব বিজ্ঞানীদের ওপর বর্তায় না। তা নির্ভর করে ঐ জাতি বা রাষ্ট্রের কারিগরি, আর্থিক সক্ষমতা ও নীতিনির্ধারকদের মন-মানসিকতার ওপর। উদাহরণস্বরূপ, চীন গত দুই দশকে এককভাবে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার করেনি। কিন্তু চীন বিশ্বব্যাপী আবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে ব্যবহার করে উন্নতির চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে, বিজ্ঞানীদের প্রশাসনিক হয়রানি মুক্ত রেখে তাদের আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমুখী নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে।  

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দীর্ঘমেয়াদি সুফল অনুধাবনে অক্ষমতা এবং বাজেটের ঘাটতির কারণে বাংলাদেশে মৌলিক গবেষণা ও প্রকাশনার প্রতি দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনিক অশ্রদ্ধা ও অবহেলা লক্ষ্য করা যায়। এরপরও কমিশনের বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে শত শত গবেষণাপত্র প্রকাশের মাধ্যমে অবদান রাখলেও, প্রশাসনিক জটিলতায় অনেক উদ্ভাবন ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে না। উদাহরণস্বরূপ, কমিশনের উদ্ভাবিত জুটন ও সোনালী ব্যাগ ইতিমধ্যে ইউরোপ-আমেরিকায় বাণিজ্যিকীকরণের উৎসাহ দেখালেও বাংলাদেশে তা এখনো দেখা যাচ্ছে না। বিজ্ঞানীরা প্রশ্ন তুলেছেনÑস্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে দেশের চাহিদা অনুযায়ী যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে? জিডিপি’র কতো শতাংশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ব্যয় হয়েছে? ঔপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক হয়রানি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষকদের কতোটা সম্মান দেয়া হয়েছে? 

কমিশনের পিএইচডি/পোস্টডকধারী বিজ্ঞানীরা কি বিষয়ের ওপর গবেষণা করছেন এবং তা কোন পর্যায়ে আছে যাচাই তদারকি করবেন কলা ও বাণিজ্য অনুষদের মাস্টার্স পাস আমলারা। এটি এক ধরনের হাস্যকর এবং অসুস্থ মানসিকতার পরিচয়। বিগত ১৫ বছরে এমন নজিরও আছে, যেখানে পোস্টডক বা পিএইচডিধারী বিজ্ঞানীদের নির্বাচন অফিসার বানিয়ে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়েছে। ভীতি দেখিয়ে তাদের দিয়ে কাজ করানো হয়েছে গবেষণার বাইরে, শুধুমাত্র এই কারণেই যে তারা নরম, ভদ্র ও নিরীহ। এর মাধ্যমে রাষ্ট্র নিজের মেধাসম্পদকে  বিপদগ্রস্ত ও অপচয় করেছে, বিজ্ঞানীরা এখনো মানসিক ট্রমাগ্রস্ত। বিগত দুই দশকে দেখা যায় মন্ত্রণালয় থেকে শুধু বিভিন্ন প্রকল্পের নামে বিজ্ঞানীদের দিয়ে বিল্ডিং বানানোর কর্মসূচি চালিয়েছেন। মোদ্দাকথা, তুমি বিজ্ঞানী না হয়ে রাজমিস্ত্রি হও। এটা এমন এক রাষ্ট্র ব্যবস্থা যেখানে একজন জুনিয়র বিজ্ঞানীর ফুলব্রাইট ও জেএসপিএস ফেলোশিপের অধীনে পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা মানুষের আইপিএস কোষ থেকে মাথার খুলি/সুচার তৈরি নিয়ে গবেষণায় বাধা দেয়া হয়। বিদেশি ল্যাবের সঙ্গে বিদেশি অর্থায়নে যৌথ গবেষণায় অনুমতি দেয়া হয় না। এমনকি এনআইএইচ ফেলোশিপের অর্থায়নে হার্ভার্ড ইউনিভারসিটির Stem cell and ADA forsyth কেন্দ্রে শিশুদের Craniosynostosis নিয়ে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ প্রশাসনিক জটিলতার মাধ্যমে আটকে দেয়া হয়। এই বাধা দেয়ার মাধ্যমে এই রাষ্ট্র বিজ্ঞান চর্চার পথ রুদ্ধ করে রাখে এবং বিজ্ঞানীদের শাসন-শোষণের মাধ্যমে তার বড়ত্ব জাহির করেন। 

একটা অভিযোগ আছে, বিজ্ঞানীরা দেশের টাকায় বিদেশে পিএইচ.ডি/পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করে। দয়া করে বলবেন, কমিশনের ক’জন বিজ্ঞানী তথাকথিত প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ ও বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ নিয়ে দেশের টাকা খরচ করে বিদেশে গেছেন। কমিশনের ৯৯% বিজ্ঞানীরা মেক্সট, ইরাসমাস, জেএসপিএস, হাম্বোল্ট, ডিএএডি, কমনওয়েলথ, ফুলব্রাইট- এর মতো প্রেস্টিজিয়াস বৃত্তি নিয়ে বিদেশি অর্থায়নে গবেষণা করে থাকেন। এখানে বাংলাদেশ সরকারের ন্যূনতম আর্থিক সংশ্লেষ থাকে না। এতে দেশের বিজ্ঞানীদের গবেষণা দক্ষতা, মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, যৌথ গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি হয় এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। দেশে একশ্রেণির আমলা এই মেধাবী বিজ্ঞানীদের প্রশাসনিকভাবে অবিচারের মাধ্যমে মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে হতাশ ব্রেইনলেস স্লেভ এক জাতির সৃষ্টির আন্তর্জাতিক চক্রান্তে লিপ্ত। এই জাতিকে ধ্বংস করতে বহিঃশত্রুর প্রয়োজন হবে নাÑ তারাই যথেষ্ট।   
খুবই হাস্যকর যে, কেউ পিএইচ.ডি গবেষণা করে আসার পরে ড. উপাধি লেখার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। এটা বিজ্ঞানীদের জন্য অত্যন্ত অসম্মানজনক। খুব জানতে ইচ্ছে হয়, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বা বিজ্ঞান উপদেষ্টাকে কেউ যদি পত্রের মাধ্যমে জানতে চায় আপনার নামের আগে ড. লেখার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েছেন তো, কেমন লাগবে বলেন? ইদানীং দেখা যাচ্ছে যে, বিজ্ঞানীদের দেশের বাইরের পিএইচ.ডি ও উচ্চতর গবেষণা করার অনুমতি না দিয়ে পক্ষান্তরে দেশের  ভেতরের সন্ধ্যাকালীন, খণ্ডকালীন পিএইচ.ডি’র জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। এই রাষ্ট্রের বুঝতে হবে পিএইচ.ডি ও পোস্ট ডক্টরাল শুধুই ডিগ্রি নয় বা নামের সামনে ড. লেখা নয়। এই গবেষণা প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই একজন বিজ্ঞানীর বিজ্ঞান চর্চায় স্ব-নির্ভরভাবে নিজস্ব ল্যাব ও গবেষণা গ্রুপ চালানোর মতো দক্ষতা অর্জন করেন। এটাই আন্তর্জাতিক স্বীকৃত রীতি। সহযোগিতার পরিবর্তে আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী, অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে মেধাবী ছাত্ররা কমিশনে গবেষণা করতে এসে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে- Brain in drain. 
আমরা জানি আমলারা দেশ ও জাতির কল্যাণে অনেক কাজ করে থাকেন। এই দেশের গত পনেরো বছর তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে কী অবদান রেখেছেন মাঠ পর্যায়ে তা এদেশের জনগণ মূল্যায়ন করবে। তাদের একটি কষ্টের বিষয়, নিয়মিতভাবে কর্মস্থল পরিবর্তন হয়। এই মাসে বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় তো পরের মাসে অর্থ মন্ত্রণালয় অথবা পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। আমলারা অবশ্যই অনেক মেধাবী তা না হলে এভাবে খাপ-খাইয়ে নিতে পারতেন না। তাদের কাছে প্রশ্নÑ এক মন্ত্রণালয়ে থাকা অবস্থায় বিশেষায়িত ট্রেনিংগুলো যাদের দরকার তাদের না দিয়ে আপনারা কেন করেন? যেমন ধরা যায়, বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় একজন তার শিক্ষাগত যোগ্যতা মানবিক বিভাগ থেকে স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হয়ে নিউক্লিয়ার রিসার্চ প্রোগ্রামে ট্রেনিং করে কিছুদিন পর পাটবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়ে যায়। সবিনয়ে জানতে আগ্রহী দেশের টাকা খরচ করে এই বৈদেশিক ট্রেনিং আপনার বা দেশের কী কাজে লাগবে? যেমনটি আপনারা বিজ্ঞানীদের কাছে পত্রের মাধ্যমে জানতে চান। সবাই গর্ববোধ করি যখন দেখি বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা বিদেশে কাজ করেন, তখন তাদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে বিশ্বের উন্নত প্রযুক্তি ও চিকিৎসা ব্যবস্থার অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখেন। অথচ একই বিজ্ঞানী নিজ দেশে ফিরে আসলে, তাকে পড়তে হয় প্রশাসনিক জটিলতা, দাপ্তরিক অবহেলা ও পেশাগত অসম্মানের মুখে। এদেশের নীতিনির্ধারকগণ ভাবেন উন্নত ও বিলাসবহুল জীবনযাপনের আশায় এই মেধাবীরা বিদেশে চলে যায়, এ কথাটি সঠিক নয় এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইৎধরহ ফৎধরহ কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। যারা বিদেশে অবস্থান করে তারাই শুধু বলতে পারবে তারা এই ব-দ্বীপকে কতোটা স্মরণ করে। পরদেশে বসবাস করার মানসিক কষ্ট তারাই বুঝতে পারে যারা পরবাসী হয়। যোগ্য শিক্ষিত মেধাবী মানুষদের জন্য এটা যেমন কষ্টের তেমন হতাশার। কারণ তাকে প্রতি মুহূর্তে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা কেন অন্য দেশে? এই পরবাসী হওয়ার চেয়ে বড় বেদনা আর কিছু হতে পারে না। চরম সত্যটা হলো কেউ স্বীকার করুক বা না করুক এই রাষ্ট্রের আমলাতান্ত্রিক ও প্রশাসনিক অবিচার ও নির্যাতন থেকে স্বাধীন ও বাধাহীনভাবে চাকরি জীবন ও সরল জীবনযাপন করার জন্য তারা দেশ ছাড়েন বা দেশে কাজ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। ইৎধরহ ফৎধরহ রং নবরহম যধঢ়ঢ়বহবফ ঃড় ধাড়রফ নৎধরহ রহ ফৎধরহ. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ গঠন ইৎধরহ রহ ফৎধরহ ও ইৎধরহ ফৎধরহ  রোধের স্বার্থে বিজ্ঞানীদের প্রতিপক্ষ না ভেবে, তাদেরকে সাচিবিকভাবে সহযোগিতা করুন। তাহলেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।  

আমলারা প্রশ্ন তোলেন-কমিশন জনগণকে কী সেবা দেয়? ইনকাম কতো? ইনকাম বাড়াও? অথচ কমিশন দেশের নিউক্লিয়ার মেডিসিন, রেডিয়েশন চিকিৎসা, আমদানি-রপ্তানিকৃত খাদ্যে তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি যাচাই, ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা, এবং হাড়-মাথার খুলি প্রতিস্থাপনসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ জীবনরক্ষাকারী সেবা দিয়ে যাচ্ছে নামমাত্র মূল্যে। কমিশনের মাধ্যমে পরিচালিত ২০টিরও বেশি নিউক্লিয়ার মেডিসিন কেন্দ্র থেকে দেশের হাজার হাজার ক্যান্সার, থাইরয়েড ও বার্ন রোগী সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন। এসব সেবা ইউরোপ-আমেরিকায় যে দামে দেয়া হয়, বাংলাদেশে তার তুলনায় ১৫-২০ গুণ কম মূল্যে দেয়া হয়Ñশুধু দেশের হতদরিদ্র জনগণের কথা মাথায় রেখে। শুধু রাজধানীর অভিজাত হাসপাতাল নয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরকারি হাসপাতালেও এই সেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।  কমিশন চাইলে এইসব সেবা দিয়ে বছরে হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারতো, কিন্তু তারা বাণিজ্যিক লাভের চেয়ে মানুষের সেবা ও জীবনের গুরুত্বকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে। অথচ আজও জনগণ, এমনকি অনেক নীতিনির্ধারক জানেন না, এই গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা অবকাঠামো গড়ে তুলেছে পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানীরা। তবে দুঃখের বিষয় এই যে, নিউক্লিয়ার মেডিসিন কেন্দ্রগুলো সরকারি হাসপাতাল সংলগ্ন হওয়ায় অনেকেই মনে করে এগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান। 

বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি কমিশনের চলমান গবেষণা ও সেবা কার্যক্রমে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, টেকনোলজিস্ট ও কর্মচারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেনÑ যাদের কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। রেডিওঅ্যাকটিভ পদার্থ নিয়ে কাজের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও তারা ২৪/৭ কর্মঘণ্টায় নিরাপত্তা বিধি মেনে গবেষণা ও সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। গামা সোর্চ, ড্রাগ রেসিডিউ অ্যানালাইসিস, মানব টিস্যু, পারমাণবিক গবেষণা চুল্লি, হটল্যাব, সাইক্লোট্রন, ইন-ভিট্রো, রেডিও ফার্মেসি ও ইমেজিং, ইত্যাদি বিভাগে তাদের দক্ষতা ও নিবেদিত শ্রম ছাড়া সেবা কার্যক্রম অচল হয়ে পড়তো। তাদের পেশাদারিত্ব ও অক্লান্ত পরিশ্রম এ খাতকে নির্ভরযোগ্য ও কার্যকর করে তুলেছে। কিন্তু সরকারিভাবে তাদের কোনো  স্বীকৃতি ও প্রণোদনা আজও দেয়া হয়নি। উল্লেখ্য যে, একসময় কমিশনে রেডিয়েশন ভাতা দেয়া হতো, অদৃশ্য কারণে যা এখন বন্ধ।  
দেশের ৫ই আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে অনেক রাজনৈতিক দল, বিজ্ঞ সমাজ দেশের বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে ২৪/৭ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছেন। দুঃখের বিষয় তাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে ভবিষ্যৎ তারুণ্যনির্ভর আধুনিক বাংলাদেশের কী পলিসি হবে তার কোনো পরিষ্কার ধারণা বা পরিকল্পনা নাই। ১৬ জন উপদেষ্টার মধ্যে একজনও বিজ্ঞানের নাই। অন্তত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য হলেও বিজ্ঞানের একজন উপদেষ্টা দরকার ছিল। বর্তমান বিশ্বে আপনি যাই করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যদি পিছিয়ে পড়েন তাহলে আপনি আর টিকতে পারবেন না। ভয় হয়- না জানি আগের মতোই সবার ধান্ধা হবে বিল্ডিং বানাও, যন্ত্রপাতি  কেনো। মন্ত্রণালয়ের লোকজন নিয়ে ট্রেনিংয়ের নামে বিদেশে গিয়ে ঘোরাফেরা/আমোদ-প্রমোদ ও কেনাকাটা করো দেশের প্রকল্প/ঠিকাদারের টাকায়। সেই বিখ্যাত আমলার কথা মনে পড়ে। গবেষণা প্রকল্প বা প্রকাশনার কথা আমার কাছে বলবা না, ৫০ কোটির উপরে প্রজেক্ট আনো, বিল্ডিং বানাও, এভাবেই দেশের উন্নয়ন ও বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন করো। আমরা এই বাস্তবতাকে ইতিহাস হিসেবে দেখতে চাই।       

আমরা কথায় কথায় ইউরোপ-আমেরিকার বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও তারুণ্যনির্ভর সমাজের কথা বলি। ফেসবুক, স্টারলিংক, রিজেনারেটিভ মেডিসিন, এআই-এর যুগে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনিষ্ঠ শিক্ষক বা কমিশনের কনিষ্ঠ বিজ্ঞানীদের দেশের কোনো সায়েন্টিফিক বিষয়ে (বিজ্ঞান প্রযুক্তি পরিকল্পনা) কোনো মতামত গ্রহণ করা হয়েছে বলে আদৌ জানা নেই। দুঃখিত আধুনিক এই যুগে প্রশাসনিক অভিজ্ঞজনের পাশাপাশি ক্রেজি জুনিয়র শিক্ষক ও বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞান পরিকল্পনায় সংযুক্ত না করলে এই দেশকে ভবিষ্যতে ভুগতে হবে। আর পঞ্চগড়ে ইলন মাস্কের স্টার লিংক-এর স্যাটেলাইটের আলো গুণে প্রশান্তি পেতে হবে। এত কিছুর পরেও যদি ঔপনিবেশিক যুগের বৃটিশদের হাতে সৃষ্টি আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং নিজেদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন না করি, রাষ্ট্রের বিজ্ঞান ব্যবস্থাপনায় তরুণ বিজ্ঞানীদের চিন্তা-চেতনা অবজ্ঞা করি তাহলে এই সব বিজ্ঞান সংস্থা বা বিশ্ববিদ্যালয় এই রাষ্ট্রে না থাকাই ভালো। আমরা সবাই ইন্টারমিডিয়েট পাস আমাদের ভেতরে কোনো বৈষম্য নাই। শুধু গার্মেন্টস দিয়ে বিশ্ব করবো জয় আর প্রবাসী শ্রমিকের ঘামে ঝরা বিদেশি টাকায় করবো এনজয়।  

সর্বহারা এই বিজ্ঞানীরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত হয়ে  জাতির কল্যাণে স্বাধীনভাবে কাজ করে বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক বাংলাদেশ গঠন করতে চায়। এ রাষ্ট্র ইতিমধ্যেই অনুধাবন করতে পেরেছে কমিশনের বিজ্ঞানীরা কতোটা নম্র, ভদ্র ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। বিজ্ঞানীরা এই দেশের তথাকথিত আন্দোলন পদ্ধতির সংস্কৃতি ভঙ্গ করে রাস্তায় না নেমে, একটি প্রাণীকেও কষ্ট না দিয়ে এযাবৎকালের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল ও  নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন। বাংলাদেশে রাস্তায় না নেমেও যে যৌক্তিক দাবি আদায় করা যায় তার উদাহরণ তারা সৃষ্টি করবে। বিজ্ঞানীদের প্রতিপক্ষ না ভেবে, তাদেরকে সহযোগিতা করুন। তাহলেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। এখনই সময় রাষ্ট্রের, নীতিনির্ধারকদের, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের, সাংবাদিকদের এবং সচেতন নাগরিকদের একত্র হয়ে প্রশ্ন তোলা-আমরা কি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সত্যিকার অর্থে গুরুত্ব দিচ্ছি? নাকি আমরা কেবল স্লোগানেই প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি?
রাষ্ট্র যদি এখনই বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের যথাযথ সম্মান ও স্বাধীনতা না দেয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যতে  বিজ্ঞানহীন ও প্রযুক্তিবিমুখ এক জাতিতে পরিণত হবো। আর তখন ঘুরেফিরে বলতে হবে-আমরা সময় থাকতে আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বুঝতে পারিনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d online