Hot

এখনো স্বস্তি ফেরেনি দেশের অর্থনীতিতে

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ দেশের অর্থনীতিতে যে শঙ্কা ও উদ্বেগ তৈরি করেছে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে সেই শঙ্কা কাটিয়ে স্বস্তির পরিবেশ ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ ও জ্বালানির দাম নিয়ে এখনো শঙ্কা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে যুদ্ধ বিরতির কথা বলা হচ্ছে- সেটি নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রকৃতভাবে ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি কার্যকর করলে শঙ্কা কাটিয়ে দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)-এর প্রেসিডেন্ট আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার পরপরই তা কার্যকর করা যাবে- এমন নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দেশের অর্থনীতিতে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে- তা স্বস্তিতে পরিণত করার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল হামলা-পাল্টা হামলা শুরুর পর সবচেয়ে বড় উদ্বেগ ছিল জ্বালানির দাম ও সরবরাহ নিয়ে। বিশেষ করে হরমুজ প্রণালি যদি বন্ধ হয়ে যেত, তবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তা ভয়াবহ প্রভাব ফেলত। কারণ, বাংলাদেশের তেল-গ্যাসের সিংহভাগ আসে ওই পথে। যুদ্ধ বিরতির ঘোষণায় আপাতত হরমুজ প্রণালি বন্ধ হবে না বলেই মনে হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের দুর্বল অর্থনীতির জন্য কিছুটা স্বস্তির।

জুনের প্রথম সপ্তাহে বাজেট ঘোষণায় আগামী অর্থবছরে যেসব চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল বহির্মুখী চাপ। বিশেষ করে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পাশাপাশি ফিলিস্তিন ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার বিষয়গুলো দেশের অর্থনীতিতে এই চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। বৈশ্বিক পর্যায়ে বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বাংলাদেশকে আগামী অর্থবছরেও সতর্ক থাকতে হবে বলে খোদ অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এমন অবস্থায় জুনের মাঝামাঝি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ দেশের অর্থনীতিতে বহির্মুখী চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়।

যুদ্ধ শুরুর পর সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছিলেন, সামগ্রিকভাবে, যুদ্ধ পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তাৎক্ষণিক প্রভাব হতে পারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং এর ফলে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতির চাপ। হরমুজ প্রণালি বন্ধের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ওই করিডরটি দিয়ে বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জ্বালানি পণ্য পরিবাহিত হয়। এটি যদি সাময়িক সময়ের জন্যও বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম দ্রুতগতিতে বেড়ে যেতে পারে। তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাবে, যার প্রভাব শিল্প উৎপাদন, পরিবহন, কৃষি এবং ভোক্তা পর্যায়ের ওপর এসে পড়বে। একই সঙ্গে জ্বালানি আমদানির ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি হবে এবং টাকার মান দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। এ বিষয়ে আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ব্যবসায়ীদের বড় উদ্বেগ ছিল হরমুজ প্রণালি নিয়েই। ওই করিডরটি বন্ধ হলে শুধু যে দাম বাড়ত তাই নয়, জ্বালানি আমদানিই বন্ধ হয়ে যেত।

এর ফলে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা ছিল। এখন ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বিরতির ঘোষণা সেই উদ্বেগ কিছুটা প্রশমিত করলেও অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। যুযুধান দুই দেশ ইরান ও ইসরায়েল সরকার প্রকৃতভাবে যুদ্ধ বিরতি কার্যকর করলেই কেবল সেই অনিশ্চয়তার বদলে দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তির পরিবেশ ফিরে আসতে পারে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto