এখন পর্যন্ত দেশ ছাড়লেন যেসব এমপি-মন্ত্রী-নেতারা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা সপরিবারে দেশ ছেড়েছেন। একই দৌড়ে আছেন উচ্চপদস্থ সাবেক অনেক আমলা। তারা দেশ ছাড়তে প্রতিদিনই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাচ্ছেন। তাদের কেউ দেশ ছাড়তে পারছেন, আবার অনেকে আটকা পড়ছেন।
তবে সবার প্রথমে দেশ ছাড়া নিয়ে আলোচনায় আসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। পরে দেশ ছাড়েন তার ফুফু সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। তারা আশ্রয় নেন ভারতের দিল্লিতে। এরপরই আওয়ামী লীগ নেতাদের দেশ ছাড়ার হিড়িক পড়ে।
শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্র জানায়, মূলত শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা চলে যাওয়ার পর নিরাপদ আশ্রয় পেতে দিগ্বিদিক ছুটছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। অনেকে আগেই পরিবারের সদস্যদের বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
গত ৩ আগস্ট সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৫৮৪ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরে যান ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। একই দিন পৃথক আরেকটি ফ্লাইটে তার পরিবার লন্ডন যায়।
৪ আগস্ট সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম দেশ ছাড়েন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশ ছাড়েন। এরপরই আওয়ামী লীগ নেতাদের দেশত্যাগের বিষয়টি সামনে আসে।
গতকাল মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুরে দেশ ছাড়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হন সাবেক ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ।
এই তিনজনকে আটকের পর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদকে ফিরিয়ে দেয় শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ। রাতে চিত্রনায়ক রিয়াজকেও ইমিগ্রেশন থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মধ্যরাতে পালাতে গিয়ে বিমানবন্দরে আটক হন সদ্য অব্যাহতি পাওয়া মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। রানওয়েতে যাওয়ার পথে এমিরেটসের ৫৮৫ ফ্লাইটটি আটকে দেয় বিমানবাহিনী। ফ্লাইটটি বোর্ডিং ব্রিজে ফেরত এনে জিয়াউলকে আটক করা হয়।
বুধবার (৭ আগস্ট) সকালে গালফ এয়ারের জিএফ-২৫১ ফ্লাইটে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের দেশ ছাড়ার কথা ছিল। তবে আজিজ বিমানবন্দরে যাননি। পরে তার স্ত্রী-সন্তান বাহরাইন হয়ে দুবাই রওয়ানা দেন।
শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. কামরুল আরেফিন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ মালেক, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, দিনাজপুর-৬ আসনের শিবলী সাদিক, টাঙ্গাইল-৫ আসনের মো. সানোয়ার হোসাইন ও নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল সপরিবারে দেশ ছেড়েছেন।
এসময়ে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মশিউর রহমান মোল্লা সজল, সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, ঢাকা-১৬ আসনের মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের ফায়জুর রহমান, কুমিল্লা-৮ আসনের আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউদ্দিন, ময়মনসিংহ-৮ আসনের মাহমুদুল হাসান সুমন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ এফ এম রুহুল হক, যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন সপরিবারে দেশ ছাড়েন।