Bangladesh

এগোচ্ছে সংসদ নির্বাচন! চাপ বাড়ছে দলগুলোর, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতও এ বছর ভোট চায়

এ বছরের মধ্যেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সরব হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। ছয়টি সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এখন শুরু হবে সুপারিশ বাছাইপর্ব। সে সঙ্গে সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে হবে সংলাপ। তবে সংলাপ যাতে সময়ক্ষেপণের ইস্যু না হয়, সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলো নজর রাখছে, সেই সঙ্গে নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।

ইতোমধ্যে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণাসহ নানা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী মার্চে পবিত্র রমজান মাসেও ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে ভোটের দাবিতে সক্রিয় থাকবে দলগুলো। এদিকে সংস্কার করেই নির্বাচন- এমন অবস্থান থেকে সরে এসেছে সরকার। চলছে ভোট এগোনোর চিন্তাভাবনা।

জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সঠিক পথে আনতে প্রয়োজনে আবারও রাস্তায় আন্দোলন করতে হতে পারে। সরকারকে আগস্টে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে বিএনপি দ্রুত আন্দোলনের কথা ভাবছে।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হলে আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে কবে ভোট চাই, তা ঠিক করব।’

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শনিবার আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানান, অযথা সময়ক্ষেপণ করে সরকারে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই তাঁদের। তাঁরা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র মেরামতের মৌলিক শর্ত পূরণ করতে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সংস্কারগুলো অতিজরুরি, সেগুলো করার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলে যেতে চান।

দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে আগামীকাল থেকে সারা দেশে জেলা ও মহানগরে পর্যায়ক্রমে সভা-সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে ঐক্য রেখে সমমনা দলগুলো ভোটের দাবিতে নিজেদের মতো কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।

বর্তমান সরকার ছয় মাস অতিক্রম করেছে। সময় যতই গড়াচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের দাবিটি ততই জোরালো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে না থাকা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিনিয়োগে মন্দা, প্রশাসনে অস্থিরতা, পরাজিত শক্তির নানা অপকৌশলসহ বিভিন্ন কারণে সরকারের ওপর দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার চাপ প্রবল হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচনে দেরি হলে বর্তমান সরকার বিতর্কিত হবে। সমস্যা তত বাড়বে। তাই চলতি বছরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে দলগুলো। এমনকি নির্বাচনি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে। এর আগে বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ, কমিউনিস্ট পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্যসহ বেশির ভাগ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। দলগুলোর নেতারা বলছেন, সরকার দেশ চালাতে পারছে না। দ্রুত নির্বাচন না দিলে দেশ আরও বড় সংকটে পড়বে। নির্বাচন যদি আগামী বছর চলে যায়, তা অনেক দেরি হয়ে যাবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে। এদিকে প্রথম দিকে জামায়াতে ইসলামী সব সংস্কার শেষে নির্বাচনের কথা বললেও বর্তমানে দলের প্রায় প্রতিটি সভা-সমাবেশ থেকে দলের দায়িত্বশীল নেতারা প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।

এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের এখন মূল বিষয় একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা হবে।’

বিএনপির মিত্র সংগঠন ১২-দলীয় জোটপ্রধান জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারকে সংস্কার এবং নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করে জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।

দ্রুততম সময়ে নির্বাচন হবে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। ভালো নির্বাচন করার জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার, তা দ্রুততার সঙ্গে শেষ করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা।

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ। পুরো নির্বাচনি প্রস্তুতির কাজটা এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে শেষ করা সম্ভব। সরকার চাইলে বছরের মাঝামাঝিতেই করা সম্ভব।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন চাই। তবে সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণও চাই না।’

ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা চাই জরুরি সংস্কারগুলো সম্পন্ন করার পর যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান। সরকার যদি এটা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরা জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা আরও জোরদার করব। আমরা বর্তমান সরকারকে সমর্থন দিচ্ছি। আশা করি, এই সরকার ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের মতো ক্ষমতা আঁকড়ে বসে থাকবে না।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto