Bangladesh

এডিপিতে বরাদ্দে জোর বেশি প্লট-ফ্ল্যাটে, কম স্বাস্থ্য, কৃষি ও সেবায়

  • কৃষি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪ দশমিক ০৭ শতাংশ।
  • স্বাস্থ্য খাতে ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
  • সরকারি সেবা খাতে বরাদ্দ ১ শতাংশের নিচে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চলতি অর্থবছরের এডিপি বরাদ্দে গৃহায়ণ খাতে পরিকল্পনার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্লট-ফ্ল্যাটের জন্য এই খাতে বরাদ্দ বেড়েছে। বিপরীতে কৃষি, স্বাস্থ্য ও সাধারণ সরকারি সেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বিনিয়োগ নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের পর্যালোচনা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এডিপি বরাদ্দে অসামঞ্জস্য রয়েছে বলে পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ বুধবার বিশেষ সভায় ওই পর্যালোচনা প্রতিবেদন তুলে ধরার কথা রয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারির পর এই প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠক হতে যাচ্ছে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চলতি অর্থবছরে মোট এডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ গৃহায়ণ খাতে দেওয়ার কথা। দেওয়া হয়েছে ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুশি রাখতে গৃহায়ণ খাতে বেশি বিনিয়োগ করা হচ্ছে। সরকারের উচিত এসব অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ কমিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিনিয়োগ বাড়ানো।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এই অর্থবছরে ‘গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলি’ খাতে মোট এডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। অথচ এ খাতে বিনিয়োগ করা হয় মোট এডিপির ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই টাকায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের কাছে বিক্রির জন্যও ফ্ল্যাট–প্লট হচ্ছে।

এ বিষয়ে সদ্য সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের অনিশ্চয়তায় পড়ে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে নতুন নতুন অনেক খাত তৈরি হয়েছে, যেখানে বাড়তি বিনিয়োগ করতে হয়েছে।

সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্লট-ফ্ল্যাট দিতে গৃহায়ণে বেশি বরাদ্দের বিষয়ে শামসুল আলম বলেন, কর্মকর্তাদের প্লট–ফ্ল্যাটের প্রয়োজন ছিল। তাই দেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনে পর্যালোচনা থেকে জানা যায়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চলতি অর্থবছর সাধারণ সরকারি সেবা খাতে মোট এডিপির ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বরাদ্দ রাখার কথা। কিন্তু রাখা হয় ১ শতাংশের নিচে। অথচ সাধারণ সরকারি সেবার আওতায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার কার্যক্রম করার কথা; যাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হয়। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে বিভিন্ন সেবা পায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ না হওয়ায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।

কৃষি খাতে মোট এডিপির ১১ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি থাকলেও দেওয়া হয় ৪ দশমিক ০৭ শতাংশ। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতে ১১ দশমিক ১ শতাংশের বিপরীতে ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এদিকে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে এডিপির ১৭ দশমিক ৪ ভাগ রাখার কথা। কিন্তু বরাদ্দ দেওয়া হয় এডিপির প্রায় ২৯ ভাগ। আর বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে এডিপির ১৪ দশমিক ৮ ভাগ বরাদ্দ রাখার কথা থাকলেও দেওয়া হয় প্রায় ১৭ ভাগ।

পরিকল্পনা কমিশনের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রক্ষেপণ ও এডিপি বরাদ্দের মধ্যে অসামঞ্জস্য রয়েছে। এই পরিকল্পনা শেষ হতে আর দেড় বছর বাকি। যেসব খাতে অসামঞ্জস্য রয়েছে, বাকি সময়ে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

এ ছাড়া বড় ও নতুন প্রকল্প নেওয়ার পরিবর্তে বিদ্যমান প্রকল্পগুলো শেষ করার পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশনের সভা

কমিশনের কর্মকর্তারা নানা কারণে পরিকল্পনা কমিশনের এবারের সভাটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। তাঁরা মনে করছেন, সরকারি বিনিয়োগ পরিবর্তনে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে এ বৈঠক থেকে।

পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারি বিনিয়োগে পরিবর্তন আনা জরুরি। যেসব খাতে বিনিয়োগ কম হয়েছে, সেখানে বিনিয়োগ বাড়াতে জোর দেওয়া হবে। অন্যদিকে যেসব খাতে বিনিয়োগ বেশি হয়ে গেছে, সেখানে লাগাম টানা হবে।

এবার কমিশনের সভায় দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা হবে। এ ছাড়া সরকারি বিনিয়োগের গতিধারাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারি কর্মচারীদের খুশি রাখতে তাঁদের নানা ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে সরকারের কৌশলগত ব্যয়ে উল্লম্ফন হয়েছে। এসব খাতে খরচ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সরকারের অগ্রাধিকার ঠিক করে অপচয়মূলক ব্যয় কমিয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার আনতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button