Hot

এডিপির লক্ষ্য পূরণে সংশয়

অর্থসংকটে এগোচ্ছে না বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন। অর্থবছরের আট মাসে অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩১.১৭ শতাংশ। বাকি সময়ে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত অর্থবছরেও শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি।

গত অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির মাত্র ৮৪.১৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল।

সর্বশেষ এডিপির অগ্রগতি তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে মোট বরাদ্দের মাত্র ৩১.১৭ শতাংশ। অর্থবছরের বাকি আছে আর মাত্র চার মাস। এই সময় বরাদ্দের বাকি ৬৮.৮৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করতে হবে।

বরাদ্দের হিসাবে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ছাড়া বেশির ভাগই তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না। অর্থবছর শেষে বাস্তবায়ন হারের এমন বেহাল দশা এডিপি লক্ষ্য পূরণে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) প্রথম আট মাসের এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদনে এমন চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। গতকাল বুধবার এডিপির অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইএমইডি।

ধীরগতির বিষয়ে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, এডিপি বাস্তবায়ন হার কম হওযার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ঠিকমতো অর্থছাড় না হওয়া। কারণ বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে।

আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এক হাজার ৩৯২টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ রয়েছে দুই লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। প্রথম আট মাসে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তত্ত্বাবধানে থাকা এসব প্রকল্পের বিপরীতে খরচ হয়েছে মাত্র ৮৫ হাজার ৬০২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের মাত্র ৩১.১৭ শতাংশ।

অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩১.১৭ শতাংশ। গত ১৪ বছরের মধ্যে চলতি অর্থবছরের মতো কখনো এত কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি। এর আগের সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০২২-২৩ অর্থবছরে, সেটাও চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১ শতাংশ বেশি ছিল।

বিভিন্ন অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০১২-১৩ অর্থবছরে। সেই সময় এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল মোট বরাদ্দের ৪৪ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৩৯.১৩ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৩৮.০১ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৫-১৬ এবং ২০২০-২১ সালে ছিল ৩২ শতাংশের ওপরে। এই তিন অর্থবছর ছাড়া বাকি বছরগুলোতে ৩৭ শতাংশের ওপরে ছিল এডিপি বাস্তবায়নের হার।

এদিকে, চলতি অর্থবছরের আট মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়নের হার কমলেও ফেব্রুয়ারি মাসে এসে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে এডিপি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১১ হাজার ১৩৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অর্থাৎ সেই মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে ৪.০৬ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই মাসে খরচ হয়েছিল ১০ হাজার ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ৩.৯৪ শতাংশ। অর্থাৎ মাসের হিসাবে চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হার গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি হলেও অন্য অর্থবছরেও এর থেকে বেশি ছিল।

বরাদ্দের তুলনায় বাস্তবায়ন অগ্রগতিতে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে আইএমইডি। বিভাগটি বাস্তবায়ন করেছে ৯৪.৪৫ শতাংশ। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে ৭৭.৪৭ শতাংশ। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন করেছে ৭১.০৩ শতাংশ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বাস্তবায়ন করছে ৭০.৫৪ শতাংশ।

অন্যদিকে অর্থবছরের আট মাস পার হলেও ১০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। বিভাগটির ছয়টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ রয়েছে ৩১৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আট মাসে তারা খরচ করেছে মাত্র ২২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাত্র ৭ শতাংশ বাস্তবায়ন করতেই অর্থবছরের আট মাস শেষ। আগামী চার মাসে এই বিভাগের বাকি প্রায় ৯৩ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ ছাড়া এডিপির ৩০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি ২০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এডিপিতে তাদের জন্য বরাদ্দ ৯ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। কিন্তু আট মাসে খরচ করতে পেরেছে মাত্র এক হাজার ৩৭৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট বরাদ্দের মাত্র ১৩.৮৮ শতাংশ। এর পরই আছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। আট মাসে এই বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে ১৪.৭১ শতাংশ। 

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিভাগটি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে খরচ করেছে ১৭ হাজার ৭৮৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ৪৪.৪৬ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম খরচ করেছে বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়। তারা খরচ করেছে মাত্র ২৪ লাখ টাকা। যদিও তাদের জন্য এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র এক কোটি টাকা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d