এডিপি বাস্তবায়নের ৬ মাস: গত অর্থবছরের চেয়ে ব্যয় কমেছে ১১,৭৩৭ কোটি টাকা
গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ওই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৬১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর সময় ) বাষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন। এই সময় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো মোট ব্যয় করেছে ৫০ হাজার ২ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ওই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৬১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা।
জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য আজ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) প্রকাশ করেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
এতে দেখা যায়, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যয় কমেছে ১১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা।
আইএমইডির তথ্যমতে, এর আগে কোনো অর্থবছরে এক কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি। আইএমইডি ওয়েবসাইটে ২০১১-১২ অর্থবছর পর্যন্ত তথ্য পাওয়া যায়।
আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান , জুলাই-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন করা যায়নি। এবং প্রশাসনের সবক্ষেত্রে অস্থিরতা বিজার করেছে, যা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এ কারণে চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নে এখনো গতি আসেনি।
কর্মকর্তারা জানান, আগের আওয়ামী সরকারের সময়ে নেওয়া চলমান সব প্রকল্পই অন্তর্বর্তী সরকার পর্যালোচনা করেছে। অগুরুত্বপূর্ণ ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া অনেক প্রকল্প বা স্কিম বাদ যাচ্ছে। এর প্রভাবও বাস্তবায়নে পড়েছে।
আবার জুলাই-অভ্যুত্থানের পরে অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক চলে গেছে। অনেক প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ফলে এডিপি বাস্তবায়ন হারও কমে গেছে। অনেক দেশীয় ঠিকাদারও প্রকল্প এরাকায় এখনো ফিরে আসেনি। একইভাবে বৈদেশিক অর্থায়নের বেশকিছু প্রকল্পে বিদেশী ঠিকাদার অনুপস্থিত রয়েছে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নও গতি কমেছে বলে জানা গেছে।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে. মুজেরী টিবিএসকে বলেন, ‘জুলাই পরবর্তী সময়ে সব ক্ষেত্রে অস্থিরতা বিরাজ করছে। পরিস্থতি স্বাভাবিক না। এ কারণে চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন হার গত এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন। আবার পরিস্থিতি কবে পরিস্থিতি হবে, তা-ও বলা যাচ্ছে না। ফলে চলতি অর্থবছরে এডিপির বাস্তবায়ন খুব বেশি সময় পাওয়া যাবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকার রাজস্ব আহরণ করে এডিপির বরাদ্দের যোগান দেয়। বৈদেশিক ঋণ ব্যবহারের জন্য সরকারি তহবিল থেকে একটা অংশ ব্যয় করতে হয়। এ কারণে বৈদেশিক অর্থায়নও আসছে না। উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড়ও কমে গেছে।’
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে সরকারি তহবিল থেকে খরচ হয়েছে ২৬ হাজার ৩১০ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। কিন্তু গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৩৪ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা, যা তহবিলের বরাদ্দের ২০ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
আলোচ্য সময়ে বৈদেশিক তহবিল থেকে ব্যয় হয় ১৯ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা, বা ১৯ দশমিক ৬১ শতাংশ।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, বেশি বরাদ্দ পাওয়া অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এডিপি বাস্তবায়নে অনেক পিছিয়ে আছে। এরমধ্যে ৬ মাসে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। এছাড়া সেতু বিভাগ ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ,সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ, এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ হারে এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।