Bangladesh

এতিমের সম্পত্তি আত্মসাৎ ও অর্থ পাচার: পপুলার জুট এক্সচেঞ্জের ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

অর্থ আত্মসাৎ, জাল-জালিয়াতি, সম্পত্তি দখল ও অর্থ পাচারের অভিযোগে পপুলার গ্রুপের ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস (৪৩) নামের ভুক্তভোগী এক বিধবা। মামলা নং ০২, ০৩/০৭/২০২৪, ধারা ৪০৬/৪২০/৫০৬/১০৯ পেনাল কোড।

মতিঝিল থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহার থেকে জানা যায় ভুক্তভোগী জান্নাতুল ফেরদৌসের স্বামী জীবিত থাকাকালে বিদ্যুৎ ঘোষ (৪৯) নামে তাদের এক কর্মচারী সম্পত্তি দেখাশোনার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। ২৮ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকার ৮ম তলার ফ্ল্যাট, গুলশান-২ এর ফ্ল্যাট নং- ৩/সি, নারায়ণগঞ্জ জেলার গোপনগরের বাড়ি, গুলশান ৭১নং রোডের বাড়ি, গুলশান ৭নং রোডের বাড়ি, গুলশান ১৩৭নং রোডের বাড়ি, গুলশান ৬নং রোডের ন্যাম ভবনের ফ্ল্যাট ও অন্যান্য সম্পত্তি দেখাশোনা ও ভাড়ার টাকা আদায়ের দায়িত্ব ছিল ম্যানেজার বিদ্যুৎ ঘোষের।

ভুক্তভোগীর স্বামী মরহুম হাসান আহমেদ ২০২০ সালে অসুস্থ হয়ে পড়লে অনিয়ম শুরু করেন বিদ্যুৎ ঘোষ। আর তাকে এই কাজে প্ররোচনা, ইন্ধন ও আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া শুরু করে মামলার অন্যান্য আসামি যথাক্রমে কবির আহমেদ (৫০), মুসা আহমেদ (৫৪), আরিফ আহমেদ (৫২), নূর জাহান আহমেদ (৪৬), ফারজানা জাহান (৪৪) এবং আঁখি সিকদার (৩৭)। এই আসামিদের প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ কোম্পানির সঙ্গে জড়িত। মূলত এ গ্রুপেরই চেয়ারম্যান ছিলেন ভুক্তভোগীর স্বামী।

আর তার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে এসব আসামি একত্রে যোগসাজশে ভুক্তভোগীর স্বামীর ব্যক্তিগত সম্পত্তির আদায়কৃত ভাড়ার টাকা ও অন্যান্য টাকা আদায় করেও সেই টাকা তার স্বামীকে দেওয়া বন্ধ করে দেন। তাদের এই আচরণের ব্যাপারে ভুক্তভোগীর স্বামী জীবিত অবস্থায় ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। যার নাম্বার-১৩৪। এর মধ্যেই আসামিদের মানসিক ও অন্যান্য অত্যাচার ও অবহেলায় দিন দিন স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে ও মৃত্যুবরণ করেন। আর এই সুযোগে উল্লেখিত ৭ জন মিলে ভুক্তভোগী নারীর সম্পত্তি দখল ও আত্মসাতের নীল নকশা বাস্তবায়ন শুরু করে। সেজন্য জান্নাতুল ফেরদৌসকে পল্টন থানায় মিথ্যা হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এরপর নানাভাবে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনও শুরু করে। এর মধ্যেই সম্পত্তি দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত বিদ্যুৎ ঘোষের সহযোগিতায় কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তির দলিল, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি-দলিল দস্তাবেজ, মৃত হাসান আহমেদের চেকবই, নিজস্ব কোম্পানির শেয়ারসংক্রান্ত কাগজ, ব্যাংকিং ডকুমেন্ট সব সরিয়ে ফেলে এবং হাসান আহমেদের ব্যাংক থেকে অনেক টাকা তার পরিবারের অনুমতি না নিয়ে তুলে ফেলে। এমনকি সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত দিলকুশার অফিসটিও তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।

অভিযোগ রয়েছে, মূলত কোম্পানিতে উত্তরাধিকার শেয়ার না দেওয়া ও হাসান আহমেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির লোভে অভিযুক্তরা জান্নাতুল ফেরদৌসকে তাদের নিশানা বানিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে আসামিরা এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণ টাকা আমেরিকা ও কানাডায় পাচার করেছেন। এর বাইরে জান্নাতুল ফেরদৌসের অজ্ঞাতসারে থাকা নানা সম্পত্তি ও দলিল দস্তাবেজের অপব্যবহার করে সবকিছুই আত্মসাতের পরিকল্পনা করেছে অভিযুক্তরা। মামলার মূল আসামি বিদ্যুৎ ঘোষ এরই মধ্যে স্বীকারোক্তিসহ আদালতে সার্বিক সহযোগিতার মুচলেকা দিয়ে বাদীর জিম্মায় ২০ দিনের জামিনে রয়েছেন। কিন্তু বাকি আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ তাদের ব্যাপারে রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে।

অভিযোগকারী জান্নাতুল ফেরদৌস স্বামীকে হারিয়ে ৩ সন্তানকে নিয়ে উলটো প্রাণনাশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। চরম নিরাপত্তাহীনতা আর স্বামীর সম্পত্তি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ ব্যাপারে বাদী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমার দাবি দ্রুত আসামিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমার তিনটি সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়েও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় না আনলে আমি শিগগিরই এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীর সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে চাই। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাচ্ছি। প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক, বিএফআইইউসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে অভিযোগ জানাব। আমি তাদেরকে বারবার বলেছি, আমার স্বামীর সব সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে। আরও অনেকেই তাদের বুঝিয়েছে- কিন্তু সবাইকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা আমার এতিম বাচ্চাদের হক নষ্টের জঘন্য খেলায় মেতেছে। আমি এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসামি মুসা এবং আরিফ আমার স্বামীর সম্পত্তি আত্মসাৎ করে বিদ্যুৎ ও কবিরের সহায়তায় আমেরিকা ও কানাডায় টাকা পাচার করে সেখানে বাড়ি-গাড়ি করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। অথচ আমরা এখানে অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছি।’

এ ব্যাপারে মতিঝিল থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, আমরা মামলার প্রাথমিক আলামত জব্দ করেছি এবং ১নং আসামি বিদ্যুৎ ঘোষের মোবাইল থেকে অর্থনৈতিক লেনদেন ও ষড়যন্ত্রের নানা রকম তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। মামলার তদন্ত চলমান এবং বাকি আসামিদেরকেও শিগগিরই গ্রেফতার করতে পারব বলে আশা করছি। আসামিদের মন্তব্য জানার জন্য তাদের মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor