Hot

এত দুধ ডিম মাংস যায় কোথায়

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। কোরবানির সময় গবাদিপশুর জোগান দিতে হতো আমদানি করে। নানা অনিশ্চয়তা, অরাজকতা ছিল সে সময়। প্রায় এক যুগের ব্যবধানে গবাদিপশুর আমদানিনির্ভরতা তো কমছেই; বরং উল্টো চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি! কিন্তু সময় যত যাচ্ছে, উৎপাদন তত বাড়ছে। একই সঙ্গে মাথায় হাত উৎপাদনকারী ও ভোক্তা উভয়েরই। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের হিসাবে উপচে পড়া এত উৎপাদন যায় কোথায়, উৎপাদন বেশি থাকলে সংকট হয় কেন?

অর্থনীতির স্বাভাবিক হিসাব, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হলে দাম কমে। কিন্তু প্রাণিসম্পদের যে সরকারি হিসাব তা অর্থনীতির চিরায়ত সূত্রকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে দেশের গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ বিভিন্ন প্রাণীর উৎপাদন বেড়েছে ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। কিন্তু মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার প্রতি বছর যেভাবে বাড়ছে, ঠিক সে হারে বাড়ছে না প্রাণিসম্পদের উৎপাদন; বরং জিডিপিতে প্রতি বছরই এর অংশগ্রহণ কমছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর তো বটেই; বরং বিশ্লেষকরাও একবাক্যে বলছেন, উৎপাদনের কমতি নেই, সমস্যা বেধেছে উৎপাদন খরচে। দেশের বেশিরভাগ পশু ও পোলট্রি খাদ্য আমদানিনির্ভর। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় মাংসের দাম বেড়েছে। দ্বিতীয় সমস্যাটা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই জানে। দেশের সিন্ডিকেটের খপ্পর। এক মাংস ব্যবসায়ী খলিল তো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েই দিলেন ৫০০ টাকায় গরুর মাংস কেনা সম্ভব! কিন্তু বাদ সাধলেন ‘স্বনামধন্য’ সিন্ডিকেটরাই! শেষতক ইস্তফা দিলেন খলিল। বাজারে বিজয়ী সিন্ডিকেটই।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব ঘেঁটে দেখা যাক। অধিদপ্তরের ২০২২-২৩ অর্থবছরের হিসাবে দেখা যায়, আগের বছরের তুলনায় পশু উৎপাদন (গরু, ছাগল, ভেড়া) বেড়েছে ৪ লাখ ৯ হাজারের বেশি। মুরগি উৎপাদন বেড়েছে ৭৮ লাখ ৮৯ হাজার, হাঁস উৎপাদন বেড়েছে ২১ লাখ ৭১ হাজার।

এবার চাহিদা ও জোগানে নজর দেওয়া যাক। একই দপ্তরের হিসাবে বলা হচ্ছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুধের চাহিদা ছিল ১ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন; অর্থাৎ দুধের ক্ষেত্রে চাহিদার তুলনায় জোগান কম হয়েছে ১৭ লাখ ৮২ হাজার মেট্রিক টন। দেশের প্রতিটি মানুষের দিনে দুধের চাহিদা রয়েছে ২৫০ মিলি লিটার, সেখানে গত অর্থবছরে জোগান দেওয়া সম্ভব হয়েছে ২২১ দশমিক ৮৯ মিলি লিটার।

এ তো গেল দুধের হিসাব। মূল চাহিদা মাংস ও ডিমের দিকে নজর দেওয়া যাক। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাংসের চাহিদা ছিল ৭৬ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। সেখানে উৎপাদন ছাড়িয়ে গেছে ৮৭ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টনের ওপরে; অর্থাৎ চাহিদার চেয়েও ১১ লাখ মেট্রিক টনের বেশি মাংসের উৎপাদন হয়েছে! অধিদপ্তর এ হিসাব দিয়ে বলছে, জনপ্রতি দিনে মাংসের চাহিদা ছিল ১২০ গ্রাম করে। সেখানে জোগান দেওয়া সম্ভব হয়েছে ১৩৭ গ্রামের বেশি!

ডিমেও উপচে পড়া হিসাব। গেল অর্থবছরে দেশে ডিমের চাহিদা ছিল ১৮ কোটি ৬ লাখের বেশি। সেখানে উৎপাদনের মাধ্যমে জোগান দেওয়া সম্ভব হয়েছে ২৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি; অর্থাৎ চাহিদার চেয়েও ডিমের উৎপাদন বেশি হয়েছে ৫ কোটি ৩১ লাখ।

জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উৎপাদন বিভাগের পরিচালক ড. এ বি এম খালেদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের যে চাহিদা ঠিক করা হয়েছে, সেটি ন্যূনতম বেঞ্চমার্ক হিসেবে ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু দেশ হিসেবে চাহিদার আলাদা প্রক্ষেপণ আছে। যে উৎপাদন হচ্ছে, সেটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন হলো, প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ কত হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে প্রতি কেজি দুধের উৎপাদন খরচ ৩২-৩৫ টাকা। কিন্তু আমাদের দেশে দুধের উৎপাদন খরচ ৪৫ টাকার ওপরে আছে। এই উৎপাদন খরচের ৬৫ থেকে ৭০ ভাগই খরচ হয় গো খাদ্যে।’

তিনি বলেন, দেশে পোলট্রির ক্ষেত্রে অনেক উপাদান আছে, যেগুলো আমদানি করতে হয়। কভিডের পর দেখা গেছে, যেসব খাদ্যসামগ্রী আমদানি করতে হয়, বিশেষ করে সয়াবিন ও ভুট্টা। যদিও দেশে ভুট্টার উৎপাদন চাহিদার ৬০-৬৫ শতাংশ। কিন্তু সয়াবিনের চাহিদার ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। ভিটামিনসহ অন্য খাদ্য সহায়ক উপকরণও আমদানি করতে হয়। ফলে দুই থেকে তিন বছরে দেশে পশু ও পোলট্রি খাদ্যের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে।

বাজার অস্থিরতার কারণ হিসেবে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় খাবারের দাম বেড়ে যায়। উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে যতই প্রাপ্যতা থাকুক না কেন মানুষ তার চাহিদা অনুযায়ী কিনতে পারে না। একটা সময় মানুষ শস্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল, সেখান থেকে তারা আমিষের দিকে আসছে। দাম বাড়ার কারণে মানুষ আবার আগের অবস্থাতেই ফিরে যাবে।

তিনি বলেন, ‘প্রাণিজ খাদ্য নিয়ে কথা হয়। কারণ এগুলো আমাদের নিয়মিত টেবিলে থাকে। ডিম, ব্রয়লার মুরগি নিয়মিত খাদ্য। কিন্তু খামারিরা কিছুতেই এখন উৎপাদন খরচ কমাতে পারছেন না। শ্রমিকের খরচও বাড়ছে। খাদ্যপণ্যের দাম যখন বেশি থাকে, তখন মানুষ স্বাভাবিকভাবেই খাবার বাছাইয়ে সচেতন হবে।’

বাজারের কী চিত্র

সরকারি হিসাবে মাংস ও ডিমের এত এত উৎপাদনের পরও দেশের বাজারে অস্থিরতা কমছে না। প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাংস ও ডিমের দাম। এবার ডিমের বাজারে এত বেশি অস্থিরতা ছিল যে আমদানি করে বাজার সামাল দিতে হয়েছে। মাংসের বাজারেও একই চিত্র। মাংস এই ৬০০ টাকা তো এই ৮০০ টাকা। সর্বশেষ ব্রাজিলের কাছ থেকে কম দামে মাংস আমদানির চিন্তা করছে সরকার।

ব্রাজিলের কাছ থেকে মাংস আমদানি করলেই কি সমাধান আসবে? নাকি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সমাধান আসবে, সরকার শত হাঁকডাক দিয়েও প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। যদিও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই বাজার ও সিন্ডিকেট নিয়ে সব প্রশ্নে সোজাসুজি উত্তর দিয়ে থাকেন। আদতে ফলাফল শূন্য।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি বিভাগের ডিন ড. আব্দুল আউয়ালের মতে, তাদের গবেষণায়ও একই চিত্র; বিশেষ করে খামারিদের বিভিন্ন প্যারামিটার, খাদ্যের দাম ও আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে গেছে। এগুলো সমন্বয় করতে গেলে মাংসের দাম বেড়ে যায়।

দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখি ৫০০ টাকা কেজি দরেও গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। খামারিরাও বলেন, মাংসের দাম ৫০০ টাকার নিচে দেওয়া সম্ভব। একটা চক্র আছে, যারা কিনা চায় না কম দামে বিক্রি হোক। এটিও একটি কারণ।’

ড. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘মাংসের দাম বৃদ্ধির আরেকটি কারণ আমাদের অর্থনীতির সূচক, বিশেষ করে ডলারের দাম বেড়েছে। ফলে এসব কারণে দাম সমন্বয় সম্ভব হয় না। খামারিদের আমরা প্রশ্ন করলে তারা জানিয়েছেন, শুধু খাবারই নয়, আনুষঙ্গিক যেসব বিষয় আছে ওষুধ, টিকা, ভিটামিনসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশু পালন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। যেহেতু বেশিরভাগই আমদানিনির্ভর, আর ডলারের দামের কারণে খামারিরা এখন হতাশ। তাদের রক্ষায় এখন এসব পণ্যে শুল্কছাড় দিতে হবে।’

প্রাণিসম্পদের অবদান অর্থনীতিতে কম নয়। সূত্র বলছে, বছরে এ খাত থেকে ৪৬ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা আয় করছে সরকার। আর শুধু চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে ১১০ কোটি ডলারের বেশি আয়। এ ছাড়া মাংসজাতসহ এ খাতের অন্যান্য দ্রব্য থেকে সরকার বছরে আরও ২ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা আয় করে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই খাতের সব চাহিদা দেশে উৎপাদিত পণ্য দিয়েই পূরণ করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।

এত এত উৎপাদনের সুফল আসলে পাচ্ছে কারা? যারা উৎপাদন করেন, তাদের মুখের হাসি কতটুকু চওড়া? জানতে চাইলে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শাহ ইমরান দেশ রূপান্তরকে বলেন, অর্থনীতির পরিভাষায় চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে বাজারের ভারসাম্য থাকবে তখনই, যখন অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। দুটি কারণে এটি এখন স্বাভাবিক গতিতে নেই। গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেশি। গত তিন বছরে তিন গুণের বেশি দাম বেড়েছে।

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় কারণ হলো মাংস ব্যবসায়ী যারা আছেন, তাদের অনেক বড় সিন্ডিকেট আছে। প্রতি কেজিতে তারা কমপক্ষে ১০০ টাকা লাভ করেন। আমি তা হিসাব করে দেখিয়েছি; বিশেষ করে কম করে হলেও তারা ৬০ টাকা করে লাভ করে কেজিতে, আর যদি পানি যোগ করে তা বেড়ে ১২০ টাকা হয়। মাংস ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করেন। কারণ তারা দিনে একটা কি দুইটা গরু জবাই করেন। তাদের পুঁজি কম তাই অল্প গরুতে বেশি লাভ করতে চান।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, পুরো বছরের মাংসের চাহিদার ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ শুধু কোরবানিতেই থাকে। এবারও অন্য বছরের তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি। ঘাটতি পড়ার শঙ্কাও নেই।’

শঙ্কা তাহলে কোথায়, জানতে চাইলে শাহ ইমরান বলেন, আগে মানুষ অনেকে মিলে শেয়ারে কোরবানি দিত বেশি। এখন মানুষ একা কোরবানি দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এ জন্য ছোট গরুর চাহিদা বেশি, তাই ছোট গরুর দামও বেশি। কিন্তু যে হারে বিদেশি জাতের গরুর শুক্রাণু আমদানি হচ্ছে, সেই হারে দেশের ছোট গরুর উৎপাদন হচ্ছে না। এবারও শঙ্কা থাকবে ছোট গরুর জোগান নিয়ে।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. খালেদুজ্জামান বলেন, ‘কোরবানিতে প্রতি বছরই আমাদের প্রাপ্যতা থাকে ১ কোটি ১৮ কিংবা ২০ লাখ গরুর। জবাই হয় ৯৫ লাখ থেকে ১ কোটির মতো। ২০ লাখের মতো বাড়তি গরু থেকে যায়। আমরা মনে করি, এবারও আমাদের দেশে গরুর জোগান পর্যাপ্ত আছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor