Hot

এত নতুন দল লক্ষ্য কী?

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের হিড়িক পড়েছে। একের পর এক নতুন দলের ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পেতে আবেদন করা হচ্ছে। নতুন এসব দল কারা এবং কী লক্ষ্য নিয়ে গঠন করছেন এ নিয়ে নানা জিজ্ঞাসা আছে জনমনে। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত নয় মাসের ব্যবধানে দেশে ২৪টি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য এখন পর্যন্ত ৬৫টি রাজনৈতিক দল আবেদন করেছে। যাদের মধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই নামসর্বস্ব। এমনো দল রয়েছে, যাদের কোনো কার্যকরী কমিটি নেই। সেইসঙ্গে নেই কোনো কেন্দ্রীয় কার্যালয়। বিশ্লেষকরা বলেছেন, নানারকম আর্থসামাজিক লক্ষ্য এবং সমাজে ব্যক্তিগত প্রভাব বাড়াতে এসব দল গঠন করা হচ্ছে। এ ছাড়া বড় দলের সঙ্গে সমঝোতা করে এমপি ও পদ বাগিয়ে নিতেও অনেকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবে।

নিবন্ধনের আবেদন করা রাজনৈতি দলগুলো যা বলছে: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন দিতে চলতি বছরের ১০ই মার্চ গণ-বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন কমিশন। দলগুলোকে ২০শে এপ্রিলের মধ্যে নিবন্ধনের আবেদন করতে বলা হয়। যদিও পরবর্তীতে বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী জুন পর্যন্ত আবেদনের সময় বাড়ায় ইসি। নির্বাচন কমিশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত ইসিতে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে ৬৫টি রাজনৈতিক দল। এই দলগুলোর একটি বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টি। গত ১৭ই এপ্রিল নিবন্ধনের আবেদন করে দলটি। দলটির চেয়ারম্যান মো. শিপন ভূঁইয়া পেশায় চশমা ব্যবসায়ী। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্দেশ্য জানতে চাইলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, জনগণের খেদমত করতে দল গঠন করেছি। নিবন্ধন পাবো কিনা জানি না। এখন পর্যন্ত দুই জায়গায় অফিস নিতে পেরেছি। ঢাকার প্রধান কার্যালয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্টোর রুমের ঠিকানা প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেছি। এ ছাড়া দলটি কবে গঠন করা হয়েছে-এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দিতে পারেননি। এদিকে গত ২০শে এপ্রিল ইসিতে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আতিকুর রহমান রাজা মানবজমিনকে বলেন, তার নেতৃত্বাধীন দলটির উদ্দেশ্য ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বেকারমুক্ত রাষ্ট্র গঠন করা। আমরা এখন পর্যন্ত ৭টি জেলা ও ৮১টি উপজেলায় কমিটি দিয়েছি। ইসি’র বর্ধিত সময়ের মধ্যেই বাকি শর্তগুলো পূরণ করা হবে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে ১৭ই এপ্রিল নিবন্ধনের আবেদন করা বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদলের সভাপতি মো. নুর ইসলাম শিকদার জানান, তিনি ১৯৯৮ সালে রাজনৈতিক দলটি গঠন করেন। এখন পর্যন্ত নিবন্ধনের জন্য ৩ বার আবেদন করেছেন। কিন্তু তাকে নিবন্ধন দেয়া হয়নি। এবার সকল শর্ত পূরণ করেই আবেদন করা হয়েছে। তিনি আশা করছেন এবার তিনি নিবন্ধন পাবেন। তার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ফরিদপুর বোয়ালমারীর একটি সুপার মার্কেটে। তিনি বলেন, ২৫টি জেলায় এবং ১০০টি উপজেলায় দলের অফিস রয়েছে। 

রাজনৈতিক দল নিবন্ধন দেয়ার প্রক্রিয়া কী: গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেতে চাইলে তিনটি শর্তের যেকোনো একটি পূরণ করতে হবে। প্রথমত, স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত কোনো সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে কমপক্ষে একটি আসনে বিজয়; দ্বিতীয়ত, ওই সব নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা যেসব আসনে অংশ নিয়েছেন, সেসব আসনে মোট ভোটের পাঁচ শতাংশ ভোট প্রাপ্তি; তৃতীয়ত, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস থাকতে হবে। দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় জেলা অফিস থাকতে হবে। আর অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার থানায় অফিস থাকতে হবে, যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ২০০ জন ভোটার থাকবে।

রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্দেশ্য কী: নতুন রাজনৈতি দল গঠনের হিড়িক পড়ার উদ্দেশ্য কী হতে পারে? এমন প্রশ্নে নির্বাচন বিশ্লেষক ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আব্দুল আলীম মানবজমিনকে বলেন, ২০২৪ সালে নির্বাচনের আগেও ৯০টির উপরে নিবন্ধনের আবেদন পড়েছিল। চব্বিশের আগের নির্বাচনের কালচার ছিল, আপস করে যদি দুই-একটা এমপি পদ নেয়া যায়। কেননা, আমাদের দেশে এমপি হওয়া একটি বড় ব্যবসা। তখন ছিল এমন। তবে ৫ই আগস্টের পরের প্রেক্ষাপট আরেক ধরনের জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল আছে যারা এতদিন রাজনীতি চর্চা করতে পরেনি। তারা এখন নিবন্ধন চাচ্ছে। পক্ষান্তরে, এখনো অনেক রাজনৈতিক দলই আছেন যারা নিবন্ধন নিয়ে বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে, জোট করে দুই-একটি সিট নিতে চায়। তিনি জানান, বর্তমানে কোনো একটি রাজনৈতিক দল যদি বড় দলের সঙ্গে আঁতাত করে, তখন ছোট দলের প্রতীক ব্যবহার করে নির্বাচনের প্রয়োজন পড়ে না। বড় দলের প্রতীক ব্যবহার করেই তারা নির্বাচন করে। যেহেতু বড় দলের প্রতীক পরিচিত এবং আমাদের দেশের অনেক জনগণই প্রতীক দেখেই এখনো ভোট দেয়। সেহেতু এই সুযোগটা তারা কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। এজন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন একটি সুপারিশ করেছি যে, দল অ্যালাইন্স করতে পারবে। কিন্তু ছোট দল যখন বড় দলের সঙ্গে যাবে, তখন ছোট দলকে তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের মানুষ রাজনীতি করতে পছন্দ করে। এজন্য হয়তো দল গঠনের আগ্রহ বেশি। এছাড়া একটি দলের নেতা হিসেবে পরিচয় দিতে অনেকে পছন্দ করে। অনেকে বিভিন্ন সুবিধা নিতেও দল গঠন করে থাকে বলে জানান তিনি। 

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক দল গঠনে নিরুৎসাহিত করছি না। তবে এত রাজনৈতিক দল করাও খুব স্বাস্থ্যকর কিছু না। কেননা, অনেক দলেরই মানুষের কাছে যাওয়ার ক্যাপাসিটি নাই। তাহলে দল করছেন কেন? আপনারা তো মানুষের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন। তিনি জানান, যখন কোনো সুযোগ আসে তখন এমন প্রবণতা হয়। ১৯৭৬ সালে যখন নতুন সরকার হলো, সেই সরকার তখন রাজনৈতিক দলের জন্য একটি বিধি করেছিল। তার অধীনে শতাধিক দল নিবন্ধিত হয়েছিল। তবে আল্টিমেটলি কতোটি দল টিকেছে? যখন ক্ষমতার প্রশ্ন আসলো তখন ৩টিরও বেশি দল ছিল না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d