এফবিআইপ্রধান ক্যাশ প্যাটেল কি পদত্যাগ করতে পারেন

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) পরিচালক ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ক্যাশ প্যাটেল পদত্যাগের কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে। সংস্থাটির উপপরিচালক ড্যান বংগিনোর প্রতি সংহতি জানিয়ে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বংগিনোর সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে। নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে এসব বলা হয়েছে।
যৌন অপরাধী হিসেবে অভিযোগ উঠা জেফরি এপস্টিনের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের (ডিওজে) তদন্ত এবং তাঁর কথিত ‘মক্কেলদের তালিকা’ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক থেকে এই মতবিরোধ শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি বংগিনো ও বন্ডির মধ্যে এই ইস্যুতে তীব্র বাগ্বিতণ্ডা হয়। এপস্টিনের মামলা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা ও তাঁর ‘মক্কেলদের তালিকা’ আবার খতিয়ে দেখার বিষয়ে দুজনের বাগ্বিতণ্ডা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। সরকারি কর্মকর্তারা অবশ্য বার বার বলছেন, তেমন কোনো তালিকা ছিলই না। ওই ঘটনার পর থেকে বংগিনো পদত্যাগের কথা ভাবছেন। মাত্র চার মাস আগে তাঁকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নিউইয়র্ক পোস্টকে একটি সূত্র জানায়, পাম বন্ডি থাকলে বংগিনো আর ফিরবেন না বলেই মনে হচ্ছে।
সূত্রটি আরও জানায়, দুই কর্মকর্তার মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে। যদিও দুজনই প্রকাশ্যে বলেছেন, এপস্টিনের ফাইলে তাঁর মৃত্যু বা তাঁর চক্র নিয়ে কোনো বিস্ফোরক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ভেতরে ভেতরে দুজনের মতপার্থক্য এখনো রয়ে গেছে।
বিচার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বংগিনোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এফবিআইয়ের পরিচালক ক্যাশ প্যাটেলও পদত্যাগ করতে পারেন। ক্যাশ আর বংগিনো সবসময় একসঙ্গে থেকেছেন। তাঁরা স্বচ্ছতার পক্ষে লড়েছেন। এখন যেভাবে সব কিছু চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, এতে তাঁরা যদি প্রতিবাদ জানিয়ে সরে দাঁড়ান, তা অবাক হওয়ার কিছু নেই।
ডিওজের সেই পর্যালোচনার পর ট্রাম্প প্রশাসনের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালে কারাগারে এপস্টিনের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে বলা হয়, ‘মক্কেলদের তালিকা’ পাওয়া যায়নি। বিখ্যাত ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল করার মতো কোনো প্রমাণও নেই।
৮ জুলাই মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে পাম বন্ডি আগের বক্তব্য স্পষ্ট করে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে আমি ফক্স-এ একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম। সেখানে আমি বলেছিলাম, ‘মক্কেলদের তালিকা’ পর্যালোচনার জন্য আমার ডেস্কে আছে। আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম এপস্টিন, জেফএকে আর এমএলকের ফাইলের কথা।’
অভ্যন্তরীণ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অ্যাটর্নি জেনারেল বন্ডিকে বরখাস্ত করতে ইতস্তত করছেন। তবে বিচার বিভাগের মধ্যে এই মতবিরোধ প্রশাসনের বিচার বিভাগ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
পাম বন্ডির বিভাগ থেকে সদ্য প্রকাশিত দুই পৃষ্ঠার একটি স্মারকে বলা হয়েছে, কোনো অভিযুক্ত তালিকা বা বিখ্যাত ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল করার মতো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
একই বৈঠকে বির্তকিত এপস্টিনের সেলের সিসিটিভি ফুটেজ নিখোঁজ থাকার প্রশ্নের জবাবে বন্ডি বলেন, এটি পুরোনো রেকর্ডিং সিস্টেমের কারণে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভিডিও প্রকাশের চেষ্টা করছি যাতে দেখা যাবে, প্রতিরাতেই এক মিনিটের ফুটেজ নেই।’
এক সময় ফক্স নিউজের উপস্থাপক বংগিনো বিতর্কিত এপস্টিনের তদন্ত নিয়ে নানা রহস্যের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তাঁর (এপস্টিনের) ‘ব্ল্যাক বুক’ খুবই বিস্ফোরক হতে যাচ্ছে। আমি জানি, অনেকেই অনেক কিছু জানেন।’
কিন্তু গত জুন মাসে ফক্স নিউজে বংগিনো কিছুটা সুর নরম করেন। বলেন, মামলার কাগজপত্র আত্মহত্যার দিকেই ইঙ্গিত করছে, যদিও ভিডিওর মান খারাপ।
হোয়াইট হাউস অবশ্য বন্ডি ও বংগিনোর মধ্যে দ্বন্দ্বের গুজব উড়িয়ে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি হ্যারিসন ফিল্ডস নিউইয়র্ক পোস্টকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি অভিজ্ঞ ও দক্ষ আইনশৃঙ্খলা টিম গঠন করেছেন, যারা মার্কিনদের নিরাপত্তা দেওয়া, অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। এই টিমের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা ভিত্তিহীন এবং প্রকৃত উন্নয়ন থেকে মনোযোগ সরানোর চেষ্টা।