Bangladesh

এবারও কি ২০১৪ হবে!

সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো, জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। সরকার সেসব আমলে নিয়েছে বলে মনে হয় না। দৃশ্যত সরকার একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটছে। এমনটা মনে করছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

গতকাল বুধবার তারা বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) তফসিল ঘোষণার করেছে। সরকার একতরফা নির্বাচনের পথে যে হাঁটছে এটা স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি জনসভায় বলেছিলেন, দুই-এক দিনের মধ্যে ইসি তফসিল ঘোষণা করবে। তার এমন বক্তব্যের পর আজ (গতকাল) ইসি তফসিল ঘোষণা করেছে। এখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। সরকার প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে হয়তো আরেকটি একতরফা নির্বাচন করতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশ গভীর সংকটে পড়বে।

তারা বলেন, তফসিল ঘোষণা করলেই যে সরকার ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন করতে পারবে তার শতভাগ নিশ্চয়তা নেই। তফসিল ঘোষণা করেও ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচন করা যায়নি। বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সেনাসমর্থিত সরকার এসেছিল।

সরকার ২০১৪ সালের মতো একতরফা নির্বাচন করতে চাইছে কি না, জানতে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই সরকার তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তফসিল ঘোষণার পর এখন মনে হচ্ছে দেশ আরেকটি একতরফা নির্বাচনের পথে যাচ্ছে। তবে তা করা যাবে কি না সন্দেহ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ গতকাল বলেন, বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। সরকারকে একতরফা তফসিল ঘোষণা না করার দাবি জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছে। সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপিকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু একটি চিঠি দিয়েছেন। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভায় বলেছেন, আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে ইসি তফসিল ঘোষণা করবে। ইসি তফসিল ঘোষণা করেছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছিল, কে নির্বাচনে আসবে আর কে আসবে না সেদিকে তাদের নজর নেই। তারা একতরফা নির্বাচনের দিকেই যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক দলগুলোর বাইরে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কখন কী করবে সেটাই দেখার বিষয়। নির্বাচনের পথে হাঁটবে, নাকি নির্বাচন বর্জনের দিকে হাঁটবে, তা দুই-এক দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হবে।’

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো বারবার সরকারকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছে। ইতিমধ্যে তফসিল হয়েছে। দেশে কি আরেকটি একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিপপ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, ‘প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করেছে। এখন আরও কঠোর কর্মসূচি তারা ঘোষণা করতে পারে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার ব্যবস্থা করতে বলছে, সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। সুষ্ঠু নির্বাচন যারা ব্যাহত করবে তাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগের কথাও বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছে, সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশনে তফসিল ঘোষণার পর মনে হচ্ছে, সরকার একতরফা নির্বাচন করতে যাচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এখন জনমনে নানা প্রশ্ন, কৌতূহল ও আশঙ্কা।’

তিনি বলেন, ‘সরকার ও প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করবে নির্বাচন করার। বিএনপিও তাদের চেষ্টা করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিকেই দৃষ্টি থাকবে সবার। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পরও নির্বাচন হয়ে যাওয়ার গ্যারান্টি নেই। বিএনপি তফসিল করেও ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচন করতে পারেনি। বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সেনাসমর্থিত সরকার এসেছিল।’

একতরফা তফসিল ঘোষণা করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর অনুরোধ উপেক্ষা করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা প্রমাণ করে সরকার হার্ডলাইনে। সরকার তার প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে হয়তো নির্বাচন করতে পারবে। কিন্তু এতে দেশের কোনো লাভ হবে না। সামনে বাংলাদেশের জন্য কঠিন সময়। বাংলাদেশকে বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d