এবার এমটিএফই প্রতারণা: পঞ্জি স্কিমে নিঃস্ব গ্রাহক
৪০০ জনের অধিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)
৪০০ জনের অধিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। রাজধানী ঢাকায় এই সিইওদের সংখ্যা আড়াইশ’র মতো। কোম্পানির কোনো লাইসেন্স নেই, নিবন্ধনও নেই। অফিস নেই, কোনো কর্তৃপক্ষও নেই। ছিল শুধুমাত্র দেশের বাইরে থেকেই নিয়ন্ত্রিত একটা অ্যাপস ও ওয়েবসাইট। মূলত এর মাধ্যমেই অবৈধ অনলাইন গ্যাম্বলিং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করে লেনদেন করতেন শহর কিংবা গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। শুধু দেশেই নয়, প্রবাসী বাংলাদেশীরাও এই অবৈধ লেনদেনে বিনিয়োগ করেছেন। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম পঞ্জি মডেলে ব্যবসা করা এই প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘এমটিএফই’ বা মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ।
গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় অ্যাপসটি। শনিবার সকাল থেকে ওয়েবসাইটটিও বন্ধ হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে এক বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে দুবাই ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি। ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিনিয়োগকারী ছিল। তবে এই এক বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থই বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীদের বলে সাইবার বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, কোম্পানিটি এমএলএম ব্যবসার ছদ্মবেশে অনলাইন গ্যাম্বলিং ও ক্রিপ্টো ট্রেডিং করত। ফোরেক্সও হতো এখানে। এটির ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ছিল। লেনদেনও হতো ওয়েবসাইট বা অ্যাপেই। এই ব্যবসায় জড়িত প্রতারক চক্র বিভিন্ন নামিদামি হোটেলে মিটিং করে বিনিয়োগকারী ধরার ফাঁদ পাততো। স্বল্প বিনিয়োগে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখাত তারা। আর এই ফাঁদে পড়েই অর্ধলক্ষাধিক মানুষ নিঃস্ব। শনিবার কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেছে, বিনিয়োগ ও অর্থ উত্তোলনসহ কোনো প্রক্রিয়া কাজ করছে না। আর বিনিয়োগকারীরাও নিশ্চিত হয়েছেন যে, তাদের অর্থ আত্মসাৎ করে উধাও হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ধারণা করা হচ্ছে- বিটকয়েনে লেনদেনের নামে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত একজন বিনিয়োগকারী জনকণ্ঠকে বলেন, কোম্পানিটির বাংলাদেশে সিইও পদমর্যাদার ব্যক্তি ছিলেন ৪০০ জনের অধিক। শুধু রাজধানীতেই এই সিইওদের সংখ্যা আড়াইশ। আর সিইও হওয়ার তালিকায় ছিলেন আরও এক হাজার ব্যক্তি। একেকজন সিইওর অধীনে ছিল অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ জন সাধারণ বিনিয়োগকারী। প্রায় দুই বছর ধরে এই কোম্পানির সঙ্গে থাকা এক বিনিয়োগকারী জানান, দুবাইভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম পঞ্জি মডেলে ব্যবসা করত। তিনি নিজেও একজন সিইও জানিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, ৯৩০ ডলার বা এক লাখ ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে মাসে ৪৫ হাজার টাকা লাভ দিত কোম্পানিটি।
৫০০ ডলার বা ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে ২২ হাজার টাকা লাভ দিত। এ ছাড়া কেউ যদি তিন হাজার ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করে এবং ১৫ জন ব্যক্তিকে কোম্পানিতে যুক্ত করে আর এই ১৫ জন মিলে যদি ৯ হাজার ডলার বিনিয়োগ করে তাহলে তিন হাজার ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করা ব্যক্তি প্রতি মাসে অন্তত চার লাখ টাকা করে লাভ পেয়ে থাকে। এভাবেই শত শত যুবককে কোটিপতি বানিয়েছে এই কোম্পানি। তবে হঠাৎ করে কোম্পানিটি উধাও হয়ে যাবে তিনি তা বিশ্বাস করতে পারছেন না। গত ১৫ দিন ধরে টেকনিক্যাল সমস্যার কথা জানিয়ে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কমিশন প্রদান বন্ধ রাখে। এখানে যারা টাকা রেখেছেন- তারা টাকা উত্তোলন করতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার থেকে কোনো লেনদেনই করা যাচ্ছিল না।
আর গত শুক্রবার পুরোপুরিভাবে এমটিএফই তাদের অর্থ লেনদেনের সিস্টেমই বন্ধ করে দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা জানান, কমপক্ষে ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করলে দিন শেষে পাঁচ হাজার টাকা লাভ আসবে। এই কল্পিত মুনাফার লোভে শত শত মানুষ বিনিয়োগ করেছিলেন। অনেকে গয়না এবং মূল্যবান সামগ্রী বন্ধক রেখেও বিনিয়োগ করেছিলেন। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেসবুকের নিউজ ফিডে বিভিন্ন বিদেশী অ্যাপের লোভনীয় মুনাফার বিজ্ঞাপন প্রচারের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অনলাইন প্রচার চালায় কিছু যুবক। এই অ্যাপসের একাধিক হেল্প অফিসও খোলা হয়েছে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে।
ভুক্তভোগী কুমিল্লার মো. মিজান বলেন, আমরা এই অ্যাপ সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আমাদের এই অ্যাপের সঙ্গে পরিচয় করায় টিম লিডার আহম্মেদ বিন শামীম। তখন তিনি বলেন, এখানে বিনিয়োগ করলে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা নেই। এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা লাভ থাকবে। তার কথামতো এই অ্যাপে বিনিয়োগ করি লাখ টাকা। কিন্তু মাস না যেতেই আমার ব্যালেন্স শূন্য হয়ে যায়। খায়ের নামে আরও এক ভুক্তভোগী বলেন, চলতি বছরের শুরুতে এই অ্যাপের সঙ্গে পরিচিত হই। প্রথমে কিছু টাকা লাভ হয়েছিল। তখন আমরা ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করতাম।
টিম লিডার গোলাম মাওলা টিটু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পরামর্শ দেন অটো ট্রেড করার জন্য। এ পদ্ধতিতে ট্রেড করে কয়েক দিনের মধ্যেই আমার ব্যালেন্স শূন্য হয়ে যায়। আমি মনে করছি, এটা তাদের একটি পরিকল্পিত ফাঁদ ছিল। আমার প্রায় তিন লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এখন পরিবারের চাপে আছি। টাকার কোনো হিসাব দিতে পারছি না।
অ্যাপটির টিম লিডার মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর গ্রামের আহম্মেদ বিন শামীম বলেন, আমরা কাউকে লাভের নিশ্চয়তা দিয়ে কিংবা লোভ দেখিয়ে এখানে বিনিয়োগে উৎসাহিত করিনি। আমরা অ্যাপস সম্পর্কে তাদের প্রশিক্ষিত করেছি। সবাই যার যার ইচ্ছামতো এখানে বিনিয়োগ করেছে এবং লাভও পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা কুমিল্লা শহরে বিভিন্ন সেমিনারের মাধ্যমেও বিনিয়োগকারীদের বুঝিয়েছি। এখন আমাদের কোনো দায়ভার নেই। সাইমন সরকার নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, টিম লিডারদের কথা শুনে বিনিয়োগ করেছিলাম। ৫০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করার পর রাতারাতি ব্যালেন্স শূন্য হয়ে যায়। অ্যাপের সঙ্গে জড়িত প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। এ প্রসঙ্গে টিম লিডার গোলাম মাওলা টিটু বলেন, ‘আমি তো আর এই অ্যাপের মালিক না। এই অ্যাপের মালিক একটি বিদেশী কোম্পানি। যারা এখানে ইনভেস্ট করেছে, তারা বুঝে-শুনে করেছে। সব ব্যবসায় লাভ-লস রয়েছে।’
জানা গেছে, অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তারা টাকা নিত। পরে স্থানীয় এজেন্টরা সেটি বাইরে পাচার করত। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এই কোম্পানির লেনদেন বা ট্রেড হতো সপ্তাহে পাঁচদিন বাংলাদেশ সময় রাত ৭টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত। সোমবার থেকে শুক্রবার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ট্রেড হলেও সিইওদের জন্য লেনদেন হতো শনিবারসহ সপ্তাহে ছয়দিন। রবিবার বন্ধ থাকত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ-এমটিএফই’র প্রতারণা নিয়ন্ত্রণ হতো দুবাই থেকে। দুবাইয়ে বসে সারা দেশে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছে মাসুদ আল ইসলাম নামে এক যুবক। তার বাড়ি কুমিল্লায়। বেশিরভাগ সময়ই তিনি দুবাইয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কোনো বিনিয়োগকারী এখনো আইনের আশ্রয় নেননি বা থানায় কোনো অভিযোগ করেননি বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানতে চাইলে সাইবার বিশ্লেষক মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির কোনো অফিস নেই, কোনো নির্দিষ্ট জনকাঠামো নেই। স্থানীয় কিছু এজেন্টকে দিয়ে তারা মানুষের কাছ থেকে টাকা নিত। তারপর তাদেরকে আবার অন্য বিনিয়োগকারীদের আনতে বলত। এটা একটা এমএলএম বা পঞ্জি।
ডেসটিনি যেমন গাছ দেখিয়ে টাকা নিয়েছে, এরা ক্রিপ্টোকারেন্সি বলে সাধারণ মানুষদের থেকে টাকা নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, তাদের ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ছিল। কিন্তু তারা অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং বা বাইন্যানসের মাধ্যমে তারা টাকা নিত। পরে স্থানীয় এজেন্টরা সেটি বাইরে পাচার করত। মূলত দেশের তরুণদের তারা টার্গেট করত বলে তিনি মনে করেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা এবং ক্রিপ্টো কারেন্সিতে লেনদেন অবৈধ এবং নিষিদ্ধ। এর আগে গত ১০ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, অবৈধ অনলাইন গ্যাম্বলিং, গেমিং, বেটিং, ফরেক্স এবং ক্রিপ্টো ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থপাচার হচ্ছে। আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার এক বৈঠকে এই চিত্র উঠে আসে।
বৈঠকে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রান্সন্যাশনাল অ্যান্ড সাইবার ক্রাইম বিভাগ এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিএফআইইউ প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়, অবৈধ অনলাইন গ্যাম্বলিং, গেমিং, বেটিং, ফরেক্স এবং ক্রিপ্টো ট্রেডিং বেড়ে যাওয়ায় প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে বাংলাদেশ। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে বসে একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধে জিরো টলারেন্সে সরকার উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আর্থিক খাতে ডিজিটাল পেমেন্ট এবং স্মার্ট পেমেন্টের প্রয়োগ বেড়েছে, যার সুফল ভোগ করছে পুরো বাংলাদেশ। তবে সুফল ও সমৃদ্ধির পাশাপাশি এসব ব্যাংকিং ও পেমেন্ট সিস্টেমের অপব্যবহারও বেড়েছে। সম্প্রতি এসব অপরাধের মাধ্যমে সংঘটিত অবৈধ লেনদেন মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে এসব অপরাধ হুন্ডি প্রক্রিয়াকে সহজ ও ত্বরান্বিত করছে। এর ফলে মুদ্রাপাচার বেড়ে যাচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশ প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে।
এতে বলা হয়, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে বিএফআইইউ হুন্ডি তথা অনলাইন গ্যাম্বলিং, গেমিং, বেটিং, ফরেক্স এবং ক্রিপ্টো ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার রোধসহ সব ধরনের অর্থপাচার রোধকল্পে বিএফআইইউ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে অনলাইন বেটিং ও গ্যাম্বলিং সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সভায় বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস এসব অবৈধ মাধ্যমে মুদ্রাপাচার, সামাজিক অবক্ষয় ও যুবসমাজের জন্য ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেন এবং এ ধরনের অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সব সংস্থাকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবে বলে জানায় বিএফআইইউ। এ সময় সংস্থাগুলো আগামীতে এসব অবৈধ মাধ্যম প্রতিরোধে একযোগে কাজ করার কথা জানায়। অন্যদিকে, ইতোমধ্যেই বিষয়টি জানতে পেরেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা তদন্তে নেমেছে বলে সিআইডির একটি সূত্রে জানা গেছে।
দোষীদের গ্রেপ্তার ॥ অনলাইনে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে এমএলএম লেনদেন পরিচালিত হলেও সরকারিভাবে বা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এজন্যই দুবাই ভিত্তিক এমএলএম এমটিএফই এক বিলিয়ন ডলার নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। তাই গ্রাহকদের প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে এমএলএম লেনদেন বন্ধ এবং যোগসাজশে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চক্রকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ লক্ষ্য করেছি যে, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে অনলাইন ভিত্তিক এমএলএম পরিচালিত হয়ে আসছে। আমরা অনেক গ্রাহককে ব্যক্তিগতভাবে লেনদেন না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম এবং বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকও অবগত ছিল বলে আমরা মনে করি। গত ১১ আগস্ট মো. সুমন নামে আমাদের এক সহকর্মী আমাকে জানান, তিনি ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন দুবাই ভিত্তিক এমটিএফই নামে প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু তার জরুরি প্রয়োজনে এখন টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না।
এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, সাইড ডেভেলপমেন্টের কাজ চলছে তাই আপাতত চার থেকে পাঁচদিন লেনদেন করা যাবে না। মহিউদ্দিন আহমেদ আরও জানান, আমরা গতকাল গণমাধ্যমে লক্ষ্য করলাম তাদের সাইট বন্ধ এবং তারা এক বিলিয়ন ডলার নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এই অনৈতিক লেনদেন পরিচালিত হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্স ইন্টেলিজেন্স কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে গ্রাহককে সচেতন বা সতর্ক করা হয়নি যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
উল্টো কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন বৈধ বলে মন্তব্য করেছে। অনলাইনে এ রকম এখনো অসংখ্য লেনদেনকারী এমএলএম প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অনেকে চিকিৎসার নামে গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে এই সকল অনৈতিক লেনদেন বন্ধ এবং প্রতারক চক্রকে গ্রেপ্তার করে অর্থ আদায় করে প্রতারিত গ্রাহকদের মাঝে ফেরত প্রদানের সবিনয়ে অনুরোধ করছি। এ ছাড়াও অনলাইনে আরও বহু স্বাস্থ্যসেবা বা দ্বিগুণ মুনাফার নামে অসংখ্য এমএলএম কোম্পানি জড়িত আছে।