International

এবার খাদ্য ও ওষুধে ভারত-নির্ভরতা এড়ানোর সিদ্ধান্ত মালদ্বীপের!

মালদ্বীপ-ভারত টানাপোড়েন বেড়েই চলেছে। এমনকি পর্যটন-নির্ভর মালদ্বীপকে বয়কটের অনেক ভারতীয়ের বয়কটের ডাককেও আমলে না নিয়ে নিজেদের অবস্থানে অটল থাকছে মালদ্বীপ। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু দমতেও রাজি নন তিনি। বরং, সম্প্রতি নিজেদের দেশ থেকে ভারতীয় সেনাসদস্যদের সরানোর বার্তা দিয়ে ভারতের সাথে তারা সরাসরি ‘টক্কর’ নিয়েছে বলে মত কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

পাশাপাশি, ভারতের ‘ছায়া’ থেকে বেরিয়ে আসতে নতুন নতুন সিদ্ধান্তও নিতে শুরু করেছে মালদ্বীপের মুইজ্জু সরকার।

সূত্রের খবর, মালদ্বীপে খাদ্য এবং ওষুধের জোগান অব্যাহত রাখতে এখন থেকে কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশের ওপর নির্ভর করতে রাজি নয় ওই দেশের সরকার। একটি নির্দিষ্ট দেশের বদলে আলাদা আলাদা দেশ থেকে খাদ্যসামগ্রী এবং ওষুধ আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে মালদ্বীপ।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমদানি শিল্পে বৈচিত্র আনতে এবং কোনো একটি দেশের উপর নির্ভরতা কমানোর জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে মালদ্বীপ।

যদিও মালদ্বীপ কোন ‘নির্দিষ্ট’ দেশ থেকে আমদানি বন্ধ করতে চাইছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বিশেষজ্ঞাদের মতে, মুইজ্জু সরকার পরোক্ষভাবে নিশানা করছে ভারতকেই।

মালদ্বীপ সরকার ওষুধ এবং খাদ্যসামগ্রীর আমদানি নিয়ে নতুন এমন সিদ্ধান্ত নিলে, তা আবারো ভারতের সাথ সরাসরি ‘বৈরিতা’র ইঙ্গিত হবে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

খাদ্য, ওষুধ এবং চিকিৎসা-সংক্রান্ত সরঞ্জামের জন্য এত দিন মূলত ভারতের ওপরই নির্ভর করত মালদ্বীপ। কোভিড আবহে মালদ্বীপকে টিকাও সরবরাহ করেছিল ভারত।

কিন্তু এখন দু’দেশের সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কের আবহে খাদ্য এবং ওষুধের জন্য মালদ্বীপ আর ভারতের ওপর নির্ভর করতে রাজি নয় বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

তবে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এ-ও মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের জেরে নিজের দেশেই ক্ষোভের মুখে পড়তে পারে মইজ্জু সরকার। রোষ তৈরি হতে পারে মলদ্বীপবাসীর মনে।

কূটনীতিক বিশেষজ্ঞদের মত, এক দেশ থেকে না আমদানি করে আলাদা আলাদা দেশ থেকে ওষুধ এবং খাদ্য আমদানি করলে খরচ বাড়বে। ফলে দেশের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

ইতিমধ্যেই ভারত এবং প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মলদ্বীপের তিন মন্ত্রী (বর্তমানে নিলম্বিত) কুমন্তব্য করার পরে দেশবাসীর একাংশের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সে দেশের সরকারকে।

এখন যদি ওই দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি পায়, তা হলে আবার নতুন করে দেশবাসীর সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে মালদ্বীপ সরকারকে। মুইজ্জু সরকারের জনপ্রিয়তা কমতে পারে আরো।

আমদানিতে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি, বিমা পরিষেবা নিয়েও মুইজ্জু সরকার বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। শোনা যাচ্ছে, অন্যান্য দেশের হাসপাতালগুলোকেও মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন স্বাস্থ্য বীমা পরিষেবার আওতায় আনতে চাইছে সে দেশের সরকার।

বেইজিং-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মুইজ্জু সম্প্রতি চীন সফরে গিয়েছিলেন। শনিবারই দেশে ফিরেছেন তিনি। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে মুইজ্জু বলেন, ‘হতে পারি আমরা ক্ষুদ্র। তাই বলে কাউকে চমকানোর ছাড়পত্র দিয়ে দিইনি আমরা।’ এর পরেই নতুন মাত্রা পেয়েছে ভারত-মালদ্বীপ বিতর্ক।

চীন থেকে ফিরে মালদ্বীপ থেকে সেনা সরিয়ে নেয়ার জন্য ভারতকে অনুরোধও করেছে সে দেশের সরকার। সেনাসদস্যদের সরানোর জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

মালদ্বীপ থেকে ভারতের সেনাসদস্যদের সরানোর বিষয়ে নয়াদিল্লির সাথে আলোচনা করতে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে মোহম্মদ মুইজ্জুর সরকার। এই বিষয়ে ভারতও সম্মতি জানিয়েছিল বলে জানা যায়। মালদ্বীপ সরকারের একটি সূত্র মারফত জানা গেছে, সম্প্রতি এই কমিটির দ্বাদশ বৈঠকে ১৫ মার্চের মধ্যে সেনাসদস্যদের সরানোর জন্য ভারতকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। মুইজ্জুর সচিবালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা আবদুল্লা নাজিম ইব্রাহিম সে দেশের একটি সংবাদপত্রকে বলেছেন, ‘ভারতীয় সেনারা মালদ্বীপে থাকতে পারবেন না। কারণ এটাই প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু এবং তার সরকারের সিদ্ধান্ত।’

উল্লেখযোগ্য, এর আগে নভেম্বর মাসে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মুইজ্জু বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের মাটি থেকে সমস্ত বিদেশী সেনাকে আমরা ফেরত পাঠাব।’

এ ক্ষেত্রে মুইজ্জু নাম না-করলেও স্পষ্টভাবেই ভারতকে নিশানা করেছিলেন। কারণ, ভারত মহাসাগরের ওই দ্বীপরাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এবং শিল্পক্ষেত্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। তবে চলতি বিতর্কের আবহে মালদ্বীপের এই সময় বেঁধে দিয়ে সেনাসদস্যদের সরাতে বলার ‘আর্জি’কে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

মালদ্বীপের সেনা সরানোর অনুরোধের পর বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে নয়াদিল্লিও। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, মালদ্বীপে বিমান চলাচল করতে পারে এমন পরিস্থিতি বজায় রাখতে পারস্পরিক সমাধানসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছে ভারত।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘মালদ্বীপের মানুষের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দিতে ভারতীয় বিমানগুলোর চলাচল জারি রাখা জরুরি। এবং এই কাজের পরিবেশ বজায় রাখতে উভয় পক্ষই একটি সমাধানসূত্রে পৌঁছনোর চেষ্টা করছে।’ মালদ্বীপ এবং ভারতের সম্মতিক্রমে একটি নির্দিষ্ট দিন বেছে নিয়ে পরবর্তী আলোচনা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d