এবার যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ভার্সিটিতে সমাবর্তন বর্জন, ইসরাইলপন্থি অভিনেতাকে ডিগ্রি দেওয়ার প্রতিবাদ
গাজায় ইসরাইলি বর্বরতা বন্ধ ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রবিবার দেশটির প্রখ্যাত ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইসরাইলপন্থি কৌতুক অভিনেতা জেরি শেনফিল্ডকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। বিষয়টি শিক্ষার্থীরা শোনামাত্র সমাবর্তন অনুষ্ঠান ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়। শিক্ষার্থীরা তৎক্ষণাৎ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে স্লোগান দিতে দিতে সমাবর্তনস্থল ত্যাগ করেন।
শিক্ষকরা আন্দোলনরতদের শান্ত করার চেষ্টার পরও কাজ হয়নি। কৌতুক অভিনেতা জেরি শেনফিল্ড ও তার স্ত্রী গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতা শুরুর পর থেকেই তেলআবিবের পক্ষে সামাজিক মাধ্যমে বেশ সরব। শনিবারও যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক ডজন শিক্ষার্থী সমাবর্তন অনুষ্ঠান ত্যাগ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলের গভর্নর গ্লেন ইয়ংকিন তখন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
ইয়ংকিনকে সমাবর্তন বক্তা করার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। কারণ তিনি গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ডাকা প্রতিবাদ কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া অনুচিত বলে মন্তব্য করেন। ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যখন বর্ণবাদবিষয়ক একটি পাঠক্রম চালুর কথা ভাবছিল, তখন সেটির বিরোধিতা করার কারণেও ইয়ংকিন সমালোচিত হন।
ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী সমাবর্তন বর্জন করেছেন, তাদের একজন শিরিন হাদাদ। তিনি বলেন, সমাবর্তনে স্বাগত বক্তব্য শুরু করার পর বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা এত জোরে তালি বাজাতে শুরু করেন যে, অন্যরা ইয়ংকিনের কোনো কথাই শুনতে পাচ্ছিলেন না।
এরপর অন্তত ১৫০ শিক্ষার্থী একসঙ্গে সমাবর্তন কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। তাতে অবশ্য ইয়ংকিন তার স্বাগত বক্তব্য থামাননি। অনুষ্ঠান শেষে তিনি সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান। খবর আলজাজিরা, এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের।
গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতার প্রতিবাদে শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বিক্ষোভ থেকে অন্তত ৫০ অধ্যাপককে আটক করে পুলিশ।
আটককৃতদের মধ্যে কেউ সরাসরি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেন, আবার কেউ তাদের প্রতি সংহতি জানান। বিক্ষোভ সম্পর্কিত সংবাদ ও আদালতের নথি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বিক্ষোভের চিত্র ধারণ করার কারণে অধ্যাপকদের আটক করার ঘটনা ঘটে। এসব অধ্যাপকের কেউ কেউ পুলিশের মারধর, হয়রানি ও হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
মার্কিন অধ্যাপকদের একটি সংগঠন আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রফেসরস। সংগঠনটির সেন্টার ফর দ্য ডিফেন্স অব একাডেমিক ফ্রিডমের পরিচালক আইজ্যাক কামোলা বলেন, অধ্যাপকদের হাতকড়া পরিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বিক্ষোভ থেকে অন্তত ৫০ অধ্যাপককে আটক করেছে পুলিশ।
যুক্তরাষ্ট্রের পর গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং স্পেন ও ইসরাইলের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিতে শনিবার হাজার হাজার ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী মাদ্রিদে বিক্ষোভ করেন। এতে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন। বিক্ষোভকারীদের ব্যানারে গাজায় ‘গণহত্যার’ নিন্দা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ‘প্রতিরোধের’ প্রশংসা করা হয়।
একই দিন মাদ্রিদের পাশাপাশি বার্সিলোনা ও ভ্যালেন্সিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়-গুলোতেও বিক্ষোভ হয়েছে। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৫৭ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে প্রায় দুই হাজার ৯০০ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। গাজাযুদ্ধ বন্ধ ও ইসরাইলকে সহায়তা বন্ধের দাবিতে ১৭ এপ্রিল ক্যাম্পাসে তাঁবু গেঁড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
পরে দেশটির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আচমকা পুলিশ প্রবেশ করে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের তাঁবু ভেঙে দেয়। এ সময় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ।
এদিন পেনসিলভানিয়া, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হয় পুলিশ। এর কয়েক ঘণ্টা আগে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়েও পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয় এবং তাঁবুগুলো ভেঙে দেয়। শনিবার স্পেনের মাদ্রিদে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামেন।
তবে এ সময় কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। বিক্ষোভকারীরা মাদ্রিদের প্রধান সড়ক দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে হেঁটে যান। এ সময় সাধারণ পথচারীরা তাদের হাত নেড়ে স্বাগত জানায়।