International

এরদোগানের প্রশংসা ট্রাম্পের সিরিয়ার চাবি তুরস্কের হাতে

অবশেষে মুখ খুললেন ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার আসাদ : জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদে জায়গা চান সিরিয়ার নতুন নেতা


সিরিয়াতে ভবিষ্যতে কী হতে যাচ্ছে, সেটার অনেক কিছু তুরস্কের ওপর নির্ভর করছে। দেশটির ভবিষ্যতের ‘চাবি’ তুরস্কের হাতে। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় সোমবার এ কথা বলেন।

সিরিয়ায় বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের ঘটনাকে একটি বন্ধুবিহীন দখল বলে মন্তব্য করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে নিয়মিতভাবে আসাদবিরোধীদের সমর্থন দিয়ে আসছিল আঙ্কারা। অন্যদিকে আসাদের পক্ষে শুরু থেকেই মাঠে লড়াই করে যাচ্ছিল ইরান ও রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। ফলে আসাদের পতনে তুরস্কের কাছে একপ্রকার বড় ধরণের হারের মুখে পড়েছে মস্কো ও তেহরান।

ফ্লোরিডাতে অবস্থিত বাসভবন মার-ই-লাগোতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প তুরস্কের প্রশংসা করে জানান, আঙ্কারা খুবই চালাক। বিপুল প্রাণহানি ছাড়াই তারা সিরিয়াতে একটি বন্ধুত্ববিহীন ক্ষমতার দখল সম্পন্ন করেছে। এ সময় আসাদকে কসাই বলেও মন্তব্য করেন নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জানান, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে শিশুদের ওপরও নির্যাতন চালিয়েছে সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত এই স্বৈরাশাসক। ট্রাম্পকে সিরিয়ায় মোতায়েন থাকা মার্কিন সেনাদের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, কেউ জানে না সিরিয়ায় কী হবে। তবে তিনি মনে করেন তুরস্ক আগামী দিনে রাষ্ট্রটির নীতিমালা ঠিক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে। নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের ফলে মনে করা হচ্ছে সামনের দিনগুলোতে তুরস্কের মাধ্যমেই মার্কিন স্বার্থ সংরক্ষণে সক্রিয় হবে ওয়াশিংটন। ট্রাম্পের এমন মন্তব্য ক্ষমতা গ্রহণের আগে তার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতির একটি ইঙ্গিত প্রদান করে। এরআগে সিরিয়ার এই সংঘাত নিয়ে রিপাবলিকান এই নেতা জানিয়েছিলেন সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু করার নেই, যাদের লড়াই তাদেরকেই লড়তে দিতে হবে।

সিরিয়াতে আসাদ ও তুরস্ক বিরোধী কুর্দি সশস্ত্র গ্রæপগুলোকে সামরিক পরামর্শ দেয়ার জন্য প্রায় হাজার খানেক সেনা মোতায়েন করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব মার্কিন সেনারা অঞ্চলটিতে আইএস এর বিরুদ্ধেও লড়াই করতে সহায়তা করছে কুর্দি ও অন্যান্য বাহিনীকে। তবে ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে সিরিয়া থেকে ৯০০ সেনা প্রত্যাহার করতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প, যদিও পরে মিত্রদের চাপে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি।

অবশেষে মুখ খুললেন ক্ষমতাচ‚্যত স্বৈরাচার আসাদ : বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও জনতার কাছে ক্ষমতা হারাতে হয়েছিল সিরিয়ার দেশত্যাগী প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে। প্রাণ বাঁচাতে সপরিবারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষমতা হারানোর আটদিন বাদে মুখ খুললেন সিরিয়ার দেশত্যাগী প্রেসিডেন্ট। আর মুখ খুলেই জানালেন, ‘দেশ ছাড়ার কথা কখনই চিন্তা করেননি বা বিকল্প হিসাবে ভাবেননি। বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরম মিত্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের পরামর্শেই দেশ ছেড়েছেন।’

ক্ষমতাচ‚্যত হওয়ার আট দিন বাদে এক বিবৃতিতে আসাদ বলেন, ‘সিরিয়াকে ‘জঙ্গি’মুক্ত রাখার জন্য বরাবর চেষ্টা চালিয়েছি। গত ৭ ডিসেম্বর ‘জঙ্গি’রা রাজধানী দামেস্কে-তে পৌঁছনোর পরেও প্রেসিডেন্ট পদ কিংবা দেশ ছাড়ার চিন্তা এক মুহুর্তের জন্য মাথায় আসেনি। কিন্তু মস্কোর পক্ষ থেকে আমাকে দেশ ছাড়ার অনুরোধ করা হয়। পরম বন্ধু দেশের অনুরোধ ফেলতে পারিনি।’ দেশান্তরি হলেও সিরিয়ার সাধারণ মানুষের জন্য এখনও তিনি চিন্তিত বলেও জানিয়েছেন আসাদ।

জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদে জায়গা চান সিরিয়ার নতুন নেতা : সিরিয়ার নতুন সরকার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) ‘জায়গা পেতে’ চায়, দেশটির নতুন শাসক আহমেদ হুসাইন আল-শারার (যিনি আল-জোলানি নামে বেশি পরিচিত) এ কথা বলেছেন। ‘আমরা নিরাপত্তা পরিষদে জায়গা পেতে চাই, কথা বলতে চাই,’ আল-শারার আশর্ক টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন। তিনি ইউএনএসসিতে সিরিয়ার নতুন সরকার ও নিজের জন্য কী ভ‚মিকা দেখছে তা ঠিক বলেননি। তার মতে, সিরিয়া সংক্রান্ত জাতিসংঘের কিছু প্রস্তাব সংশোধনের প্রয়োজন।

আল-শারার সিরিয়া বিষয়ক আলোচনার প্রেক্ষিতে এ মন্তব্য করেছে, যা ১৪ ডিসেম্বর জর্ডানের শহর আকাবায় বাহরাইন, মিশর, ইরাক, জর্ডান, কাতার, লেবানন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সউদী আরব এবং তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পাশাপাশি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ ক‚টনীতিকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি বৈঠকে সিরিয়ার প্রতিনিধিত্ব করা হয়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সিরিয়ার সশস্ত্র বিরোধী ইউনিট ২৭ নভেম্বর আলেপ্পো এবং ইদলিব গভর্নরেটে সরকারী সৈন্যদের উপর একটি বড় আক্রমণ শুরু করে। ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যার মধ্যে, তারা আলেপ্পো, হামা, দারা এবং হোমস সহ বেশ কয়েকটি বড় শহর দখল করে। ৮ ডিসেম্বর, তারা দামেস্কে প্রবেশ করে যখন সরকারী সৈন্যরা শহর থেকে পালিয়ে যায়। বাশার আসাদ প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন। মোহাম্মদ আল-বশির ১০ ডিসেম্বর ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সিরিয়ায় একটি অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভার নেতৃত্ব দেবেন। তিনি এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ইদলিবে বিরোধীদের মুক্ত সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button