Bangladesh

এলএনজির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছে সরকার

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি আরো বাড়াতে কাতার ও ওমানের পর মার্কিন কম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। চুক্তির আওতায় ২০২৬ সাল থেকে ১৫ বছর তারা এলএনজি সরবরাহ করবে। প্রতিবছর এর পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টন।

বর্তমানে শুধু কাতার ও ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি হয়।

তৃতীয় দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সই করল সরকার। এই চুক্তির খসড়া গত মাসে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন করা হয়। গত বুধবার রাতে হওয়া তিন চুক্তির বাকি দুটি হলো মহেশখালী এলএনজি টার্মিনালের সম্প্রসারণ এবং পায়রা টার্ম শিট চুক্তি।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে স্পট মার্কেটের (খোলাবাজার) চেয়ে কম দামে এলএনজি পাওয়া যাবে।

জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কম্পানির সঙ্গে এই চুক্তি ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে। চুক্তির আওতায় ২০২৬-২৭ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর সাড়ে আট লাখ টন এলএনজি সরবরাহ করা হবে। ২০২৮ থেকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত বছরে এলএনজি সরবরাহ হবে ১০ লাখ টন করে।

এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামের ১৩.৩৫ শতাংশের সঙ্গে ৩০ সেন্ট যোগ করে এলএনজির দাম নির্ধারণ করা হবে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, ‘আমাদের এলএনজি আমদানির জন্য আরেকটি স্থায়ী সূত্র তৈরি হলো। কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়াই যখন এলএনজির প্রয়োজন হবে তখনই আমরা তাদের কাছ থেকে আমদানি করতে পারব। খোলাবাজারের তুলনায় অনেক কম দামে এলএনজি পাওয়া যাবে।’

কামরুজ্জামান খান জানান, বর্তমানে কক্সবাজারের মহেশখালীতে এক্সিলারেট এনার্জির এলএনজি টার্মিনালের সক্ষমতা ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই সক্ষমতা আরো ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়িয়ে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করবে প্রতিষ্ঠানটি।

কাতার-ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আসছে এলএনজি

দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আনতে ২০১৭ সালে কাতার এবং ২০১৮ সালে ওমানের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। এর বাইরে খোলাবাজার থেকে তাৎক্ষণিক দামে এলএনজি কেনা হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর খোলাবাজারে এলএনজির দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এ অবস্থায় গত বছর জুলাই থেকে টানা সাত মাস খোলাবাজার থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ রাখে সরকার। তখন থেকে সরকার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি বাড়াতে উৎস খুঁজতে থাকে।

দেশে গ্যাসের চাহিদা বিবেচনা করে এলএনজির আমদানি আরো বাড়াতে কাতার ও ওমানের সঙ্গে চলতি বছর নতুন করে আরো দুটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছে সরকার। নতুন চুক্তির আওতায় ওমান ২০২৬ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছর পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহ করবে। কাতারও নতুন আরেকটি চুক্তির আওতায় ২০২৬ সাল থেকে পরবর্তী ১৫ বছর পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহ করবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, ‘দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমার কারণে পেট্রোবাংলা এখন এলএনজি আমদানিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। স্পট মার্কেটের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানি অনেক সাশ্রয়ী হবে। তবে লক্ষ রাখতে হবে, আমরা যেন এলএনজি আমদানিতে গা ভাসিয়ে বসে না থাকি। দেশি-বিদেশি কম্পানির মাধ্যমে স্থলভাগে ও সমুদ্রে জোরালোভাবে গ্যাস অনুসন্ধান চালাতে হবে। কারণ দেশীয় গ্যাসের চেয়ে এলএনজি আমদানি অনেক ব্যয়বহুল। এটা দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button