Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

ওরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

বিতর্কিত এস আলম গ্রুপ নিয়ে কঠোর অবস্থানে গভর্নর সামিট, ওরিয়ন, বসুন্ধরা, নাসা, থার্মেক্স, গাজী গ্রুপসহ পতিত সরকারের অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেয়া এবং টাকা পাচারকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ‘পরিবর্তনের বাতাস’ লাগেনি

পলাতক শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার হচ্ছে ব্যবসাবান্ধব সরকার’। কথায় নয় কাজেও তিনি দেশ ও জনগণের চেয়ে হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ীর স্বার্থ দেখেছেন। যা কিছু সিদ্ধান্ত এবং কর্মকাণ্ড করেছেন সবকিছুই কিছু ব্যবসায়ীকে সুযোগ করে দিতে। রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবসা দিয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ীকে। এ সেক্টরে দুর্নীতি হলে যাতে বিচার করা না যায় সে লক্ষ্যে সংসদে ইনডেমনিটি আইন পাস করেছিলেন। ব্যাংক-বীমা, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সেক্টরে হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ীকে সুযোগ করে দিয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে এস আলম, বসুন্ধরা, সামিট, ওরিয়ন, নাসা, থার্মেক্স গ্রুপ, গাজী গ্রুপসহ প্রায় দুই ডজন। এরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বৃদ্ধিসহ হেন অপকর্ম নেই যা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় করেননি। এমনকি এই ব্যবসায়ীরা মহাসম্মেলন করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখা এবং আনার অঙ্গীকার করেছিলেন। এ কারণে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনসি সংসদে বলেছিলেন, ‘সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের ধরতে গেলে অসুবিধায় পড়তে হবে’। শেখ হাসিনা পালানোর পর রাজনীতির পাশা উল্টে গেছে। কিন্তু এই কর্পোরেট হাউজ নামের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। দু-একটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও অন্যগুলো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। বরং তারা নতুন সরকারের সমর্থন পেতে বিভিন্ন ব্যক্তিকে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে নিচ্ছেন।

রাজনীতিবিদ নন, তারপরও এমপি-মন্ত্রী হওয়ার বাসনা, অবৈধ সম্পদ অর্জন, ঋণ জালিয়াতি, ব্যাংক লুট, অর্থপাচার, পণ্যের সিন্ডিকেট বাণিজ্যসহ নানাবিধ সুবিধা নিতে গত ১৫ বছর ভারতে পলায়নকারী হাসিনা সরকারকে অন্ধের মতো সহায়তা করেছেন। স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে উসকে দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে নির্বিচারে গুম, খুন ও অর্থপাচারে সহযোগিতা করে আরো স্বৈরাচার বানিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় মদদে পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কামিয়ে নিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। কেউ কেউ আবার সরকারের মধ্যে আরেক সরকার তৈরি করেছেন। যেমনÑ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জমি ক্রয়-বিক্রয়ে আলাদা করে ৫ লাখ টাকা ফি দিতে হয় বসুন্ধরা গ্রুপকে। এভাবে গত ১৫ বছর স্বৈরাচার সরকারকে সহযোগিতা করে নৈরাজ্য চালিয়েছেন দেশের সাধারণ অসহায় মানুষের ওপর। পতিত হাসিনা সরকারের প্রতিটি ভোটবিহীন নির্বাচনের আগে এই ব্যবসায়ী দালালচক্র নিজেদের সুবিধার জন্য তেল মর্দন ও হাসিনা সরকারকে অকুন্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। গুম, খুন, নিপীড়নকে নির্বিঘ্নে মেনে নিয়ে হাসিনার দালালি করে গেছেন। কেউ কেউ আবার এমপি-মন্ত্রী বনে গেছেন। রাজনীতিবিদরা মানুষের সেবা করেন। তাই তাদের ভুলত্রুটি সাধারণ মানুষ ক্ষমা করতে পারে। ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করেন না। ব্যবসার জন্য তারা নিরপেক্ষ থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গত ১৫ বছর এই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটটি হাসিনাকে আরো স্বৈরাচার হতে সহযোগিতা করেছেন।

বাংলাদেশে সম্প্রতি অর্ধ-শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ঘুস বাণিজ্য, ঋণ জালিয়াতি, অর্থপাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী থেকে শুরু করে বড় বড় আমলারা যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছে একাধিক ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর নামও। সর্বশেষ গত ২১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে আন্দোলন দমাতে পরামর্শ দিয়েছেন এই অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এমনকি এই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আমৃত্যু হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে যাবেন বলেও উল্লেখ করেছেন। অথচ হাসিনা ভারতে পলায়নের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এসে আবার সেই চক্রটি উঠেপড়ে লেগেছেন সরকারের কাছের মানুষ হওয়ার। দেশটাকে আবারও ধ্বংস করতে চায়। যদিও বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, গত ১৫ বছর দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের জন্য এই দালাল ব্যবসায়ীরাই দায়ী। হাসিনা সরকারের দালালি করে এ ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়েছেন। হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন, যা পরবর্তীতে পাচার করেছেন। কেউ কেউ আবার মন্ত্রী-এমপি বনে গেছেন। তাই এসব দালাল সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের বিশেষ করে এস আলম, বসুন্ধরা, সামিট, ওরিয়ন, নাসা, থার্মেক্স গ্রুপের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে হাসিনার ভঙ্গুর অর্থনীতিকে গড়তে এই সম্পদ কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ‘ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ’ হওয়ায় গত ১৫ বছর তাদের বিরুদ্ধে সেভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি, বরং অনেক ক্ষেত্রে ‘সরকারি মদদে লুটপাটে’র সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর অবশ্য জানিয়েছেন, এস আলম গ্রুপ তাদের নামে-বেনামে থাকা বিভিন্ন জমি-সম্পদ বিক্রির চেষ্টা করছে। এগুলো ঠেকাতে আইনি প্রক্রিয়া দরকার। তাই রাষ্ট্রীয় স্বার্থে এ মুহূর্তে এস আলম গ্রুপের জমি ও সম্পদ না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন। গভর্নর বলেন, আমরা আহ্বান করব এস আলম গ্রুপের সম্পদ যেন দেশের স্বার্থে কেউ কিনতে না চায়। আমরা এটি আইনিভাবে দেশের জন্য ব্যবহার করব। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে এভাবে কেউ ব্যাংক দখল করতে পারে তার নজির কোথাও নেই। পুরনো পরিচালনা পরিষদ দিয়ে ব্যাংকগুলোতে ভালো কিছু হবে না বলে মনে করছেন ড. আহসান মনসুর। তাই বোর্ডগুলো ভেঙে দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা আপাতত সরকার তথা জনগণের উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে বোর্ড দেয়া হয়েছে তারা যেন সঠিকভাবে কাজ করে। কোনো অনিয়ম হলে কাউকে ছাড় দেবো না। প্রয়োজনে বোর্ড পরিবর্তন করা হবে। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে; এরপরও রাজনৈতিক সংস্কার না হলে ব্যাংক খাতেও সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর।

দীর্ঘদিন আওয়ামী সরকারের নির্যাতন ও দালাল ব্যবসায়ীদের কারণে বিপাকে পড়া ব্যবসায়ীরা জানান, এস আলম গ্রুপকেই নয়; এতদিন যারা হাসিনা সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থপাচারকে অন্ধের মতো সমর্থন জানিয়ে সুবিধা নিয়ে আরো স্বৈরাচার করেছেন সে ব্যবসায়ীদের সকল অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ভঙ্গুর অর্থনীতিতে কাজে লাগাতে হবে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, যারা অন্যায়ভাবে সম্পদ লুট করেছে, অন্যায়ভাবে সম্পদ অর্জন করেছে এবং ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ফেরত দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ভালো ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারবে না বলে উল্লেখ করেন দীর্ঘদিন নির্যাতনের স্বীকার এই ব্যবসায়ী।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগী শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নামে-বেনামে কত টাকা ঋণ আত্মসাত করেছেন তার হিসাব করা হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও প্রতারণার মাধ্যমে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণের অর্থ আত্মসাত করেছেন এবং তা বিদেশে পাচার করেছেন, যার সঠিক পরিমাণ নির্ণয়ের কাজ চলমান। এই আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ লক্ষাধিক কোটি টাকার ওপরে। এ ধরনের দুর্নীতি ও অর্থপাচারের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে ইতোমধ্যে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এস আলম গ্রুপ : বাংলাদেশে গত ১৫ বছর যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ঘুস বাণিজ্য, ঋণ জালিয়াতি, অর্থপাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছে দেশের অন্যতম বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী ‘এস আলম গ্রুপ’। এই সময়ে প্রায় ১০টি ব্যাংক দখল করে নিয়েছে। গত কয়েক বছরে এস আলম গ্রুপ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার মতো ঋণ নিয়েছে, যার একটি বড় অংশই অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অর্থের বেশিরভাগই আবার বিদেশে পাচার করা হয়েছে। গড়া হয়েছে সিঙ্গাপুরে বিলাসবহুল মার্কেট। এছাড়া টাকা পাচার করে দুবাই, কানাডা ও আমেরিকায় গড়ে তোলা হয়েছে সম্পদের পাহাড়।

বাংলাদেশের একাধিক ব্যাংকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার মতো ঋণ রয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের। এর মধ্যে কেবল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছ থেকেই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার বড় একটি অংশই নেওয়া হয়েছে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংককে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় এবং লাভজনক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিবেচনা করা হতো।

২০১৭ সালে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। এরপর গত প্রায় সাত বছরে নিয়ম-নীতির বাইরে গিয়ে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়েছে গোষ্ঠীটি। এর ফলে রীতিমতো তারল্য, তথা নগদ টাকার সংকটে পড়ে যায় ব্যাংকটি।
ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও গ্রুপটির মালিকানা আরও একাধিক ব্যাংক রয়েছে। সেগুলো হলো : সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং কমার্স ব্যাংক। অনিয়ম ও ঋণ জালিয়াতির কারণে এসব ব্যাংকগুলোতেও তীব্র তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এসব ব্যাংকের বাইরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক থেকেও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে এস আলম পরিবার। অথচ এক্ষেত্রে একক কোনো ঋণগ্রহীতাকে ব্যাংকের মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ না দেওয়ার বিধান থাকলেও সেটি মানা হয়নি। নিয়ম ভেঙে গ্রুপটিকে যে ঋণ দেওয়া হয়েছে, সেটি ব্যাংকের মোট মূলধনের প্রায় ৪২০ শতাংশ। গত দেড় দশকে নামে-বেনামে এস আলম ঋণ হিসেবে যত টাকা ব্যাংক থেকে নিয়েছে, সেটার বেশিরভাগই বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু দেশের বাইরে বিনিয়োগের জন্য অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর যে তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রয়েছে, সেখানে এস আলম গ্রুপের নাম নেই। বিদেশের পাশাপাশি দেশেও গত কয়েক বছরে একাধিক বাড়ি ও জমি কিনেছে গ্রুপটি। শিল্প কারখানার নামে ঋণ নিয়ে সেই টাকা ব্যবহার করে ওই সব সম্পত্তি গড়ে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, এস আলমসহ অভিযুক্ত অন্যদের সম্পত্তিও একইভাবে দ্রুত জব্দ করা উচিত। এছাড়া দুর্নীতি করার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুরু করে অন্যান্য ব্যাংক যারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও গ্রুপকে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দিয়েছে এবং অর্থপাচারে সহযোগিতা করেছে, তদন্ত করে তাদের সবার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে বলে উল্লেখ করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। সেই সঙ্গে অভিযুক্তদের মধ্যে যারা দেশে রয়েছেন, তারা যেন পালিয়ে যেতে না পারেন, সেজন্য বিমানবন্দরসহ সারা দেশের সীমান্তে কড়া নজরদারির পরামর্শ দিয়েছে টিআইবি। দুর্নীতিতে জড়িতদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যেই বিদেশে পালিয়ে গেছেন, তাদেরও দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বানও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক।

সামিট গ্রুপ : ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত সামিট গ্রুপকে তেমন কেউ চিনতো না। স্বৈরাচার হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সামিট গ্রুপ রাতারাতি সামনে চলে আসে। সরকারি সুযোগ-সুবিধায় অগ্রাধিকার পেতে থাকে গোপালগঞ্জ জেলার আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র (আইপিপি), এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের ক্ষেত্রে সামিটের প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে বেশি। নানা মাত্রায় দেয়া হয়েছে কর ও শুল্ক সুবিধা। এর ধারাবাহিকতায় খাতটিতে তৈরি হয়েছে সামিট গ্রুপের একক আধিপত্য। যদিও এখন পর্যন্ত দেশের অর্থনীতিতে কোনো ধরনের ভূমিকা নিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ ও আন্তর্জাতিক পরিসরে এখনো বড় মাপের কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রম দাঁড় করাতে পারেনি সামিট গ্রুপ। বরং অনিয়মের মাধ্যমে বা আইনি ইনডেমনিটি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অনুকূল চুক্তির সুবাদে ক্যাপাসিটি চার্জ ও বিক্রয় মূল্যসহ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পাওয়া আয়ই হয়ে উঠেছে তাদের ব্যবসার বড় ভিত্তি।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে প্রতি বছর সরকারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচ্ছে সামিট গ্রুপ। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত সামিট গ্রুপকে ৪ হাজার ৪০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে, যা এ সময়ের মধ্যে পরিশোধিত মোট ক্যাপাসিটি চার্জের প্রায় ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

সামিট গ্রুপ এতদিন ব্যবসা করছে শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে চুক্তি বা অনুমোদনের ভিত্তিতে। এদিকে সামিট গ্রুপের ব্যবসা মূলত বাংলাদেশকেন্দ্রিক হলেও গ্রুপটির বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর হোল্ডিং কোম্পানি সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল নিবন্ধিত হয়েছে সিঙ্গাপুরে। প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের বাজারসংক্রান্ত যেসব ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হয়, সেগুলো সামিটের ক্ষেত্রে নেই।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়েছে আইটি, বন্দর ও রিয়েল এস্টেট খাতেও। সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের (এসএপিএল) মাধ্যমে বন্দর ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে সামিট গ্রুপ। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় অফ-ডক (অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল) ফ্যাসিলিটিগুলোর অন্যতম। তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি দেশের রফতানি পণ্যের কনটেইনারের ২০ শতাংশ এবং আমদানি পণ্যের কনটেইনারের ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ হ্যান্ডলিং করে।

দেশের টাকা পাচার করে বেশ কয়েক বছর ধরেই ফোর্বসের তালিকায় সিঙ্গাপুরের অন্যতম শীর্ষ ধনী হিসেবে নাম আসছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খানের। ইতোমধ্যে ১০০ কোটি ডলারের ক্লাবে প্রবেশ করেছেন তিনি।

ওরিয়ন গ্রুপ : দেশের বিতর্কিত শিল্প গ্রুপের মধ্যে অন্যতম নাম ওরিয়ন গ্রুপ। একাধিক ব্যাংক থেকে ওরিয়ন গ্রুপের নেওয়া বিপুল পরিমাণ ঋণ খেলাপি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের অন্যতম সুবিধাভোগী এই গ্রুপটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বারবার তাগাদা সত্ত্বেও খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধার আওতায় নিয়মিত করা হয়নি। ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের অর্থ লোপাট নিয়ে ২০০৭-০৮ সালের মামলাগুলোর কয়েকটিতে তার সাজা হলেও নানা কৌশলে প্রভাব খাটিয়ে সেই সাজা থেকে বরাবরই পার পেয়ে গেছেন তিনি। এই ‘পার পেয়ে যাওয়া’ তাকে আরও বেপরোয়া করে তোলে। আর এ কারণে বিভিন্ন ব্যাংকে সাধারণ গ্রাহকের গচ্ছিত আমানতের টাকা ঋণ নিয়েও তা পরিশোধে ‘দায়হীন’ মনোভাব নিয়েই তিনি সময় পার করে আসছেন।

সূত্র মতে, রেজিস্ট্রিভুক্ত ওরিয়ন গ্রুপের ৩৩ কোম্পানির মধ্যে ২৪টির নামে ব্যাংকঋণ পাওয়া গেছে ১১ হাজার ৪৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১২টি কোম্পানির নামেই নেওয়া আছে ৭ হাজার ৩৩৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ। যার মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়া এ ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ২৩৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ৪ হাজার ১৩১ কোটি টাকা নিয়মিত ঋণ রয়েছে আরও ১২টি কোম্পানির নামে। এই ঋণও নিয়মিত করা হয়েছে ২০২২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিতর্কিত গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের দেওয়া ‘বিশেষ সুবিধা’র আওতায়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto