Bangladesh

কঠিন পরীক্ষা মোকাবিলার পথ খুঁজছে বিএনপি

সরকার পতনের এক দফার ‘চূড়ান্ত আন্দোলন’ করতে গিয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ‘নাশকতার’ মামলায় দলের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই কারাগারে; কেউ আত্মগোপনে, আবার কেউবা নিশ্চুপ। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঝুলছে তালা। গণগ্রেপ্তারের পাশাপাশি পুরোনো মামলার সাজা পেয়েছে তুমুল গতি।

হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়ে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীতেই নেতাকর্মী ‘ঢিলেঢালা’। পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ‘লোভের টোপ’ গিলছেন সমমনা দলের কেউ কেউ। এরই মধ্যে দলের বেশ কয়েকজন বিক্ষুব্ধ নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য ও সমমনা দল নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কেউ কেউ যোগ দিয়েছেন বিএনপির সাবেক নেতাদের নিয়ে ‘সরকারের সহযোগিতা’য় গঠিত কিংস পার্টি উপাধি পাওয়া সংগঠনে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত সংলাপের প্রস্তাব নাকচ করে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দাবি আদায়ে সরকারকে ‘চাপে’ ফেলতে গিয়ে এখন নিজেরাই উল্টো গাড্ডায় পড়েছে বিএনপি।

কঠিন প্রতিকূল পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করবে দলটি– এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে রাজনৈতিক সচেতন মহল। বর্তমান পরিস্থিতিতে ধৈর্য ও সততার সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের ঐক্য ধরে রাখাই বিএনপির সামনে বড় পরীক্ষা বলে মনে করেন অনেকে। একই সঙ্গে নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ধরে রাখা, আন্দোলনের কর্মসূচি সফল করতে রাজপথে সাহস নিয়ে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে নামানো, সাধারণ জনগণ ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে থাকা বহির্বিশ্বের শক্তিকে কাজে লাগানোও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

তবে বিরোধী দলের নীতিনির্ধারক নেতাদের মতে, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে নেতাকর্মীর গণগ্রেপ্তার; মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের মাধ্যমে বিরোধী নেতাকর্মী তুলে নেওয়া তথা সন্ত্রাসের রাজত্ব ও সরকারি বাহিনীগুলোকে দলীয় বাহিনী হিসেবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে নৈতিক সমর্থন থাকলেও সুশীল সমাজ তথা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সংগঠিত করে রাস্তায় নামানোই তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ।

বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএনপিকে ভাঙতে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সব ষড়যন্ত্রই ব্যর্থ হয়েছে। এবারও অত্যাচার-নির্যাতন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনকে ব্যর্থ করা যাবে না। সব বাধা মোকাবিলা করতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারেও প্রস্তুত নেতাকর্মী। 

টানা কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করার পরিকল্পনা করেছিল বিএনপি। লক্ষ্য অর্জনে ইতোমধ্যে দুই দফা হরতাল ও ছয় দফা সারাদেশে অবরোধের মতো কর্মসূচিও পালন করে যাচ্ছে সরকারবিরোধী দলগুলো। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল প্রত্যাখ্যান করে চলমান এ আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সফল করতে নানামুখী পরিকল্পনা নিচ্ছে তারা।

এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনের সময় যেখানে প্রচার-প্রচারণাসহ নানা কর্মযজ্ঞে সারাদেশে সাজসাজ রব হওয়ার কথা, সেখানে এখন এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ বিরাজ করছে। এর পরিণতি সবার জন্য অমঙ্গলজনক হবে। দ্রুত সংঘাত ও সংকটময় পরিস্থিতি উত্তরণের পথ বের করা প্রয়োজন। এটি শুধু আওয়ামী লীগ আর বিএনপির জন্য নয়; দেশবাসী এবং আগামী প্রজন্মের স্বার্থে প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডই কাম্য নয়। বিএনপি নেতাকর্মীর প্রতি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন। সরকার বা আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত থাকলেও তাদের নিবৃত্ত করা প্রয়োজন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, দেশের জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করতে সব বিরোধী দল গণতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ক্ষমতাসীন দল যত অত্যাচার-নির্যাতন করবে, তাদের পতন ততই ত্বরান্বিত হবে। ইতোমধ্যে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। গণআন্দোলনের মুখে শিগগির অবৈধ সরকারের পতন ঘটবে। তড়িঘড়ি করে তপশিল ঘোষণা করে এবার আর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো একতরফা ভোট দেশের মানুষ হতে দেবে না।

মোকাবিলার কৌশল

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সূত্র জানায়, পরবর্তী কর্মসূচি ও বাস্তবায়নের কৌশল নিতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ নেতারা ঘন ঘন ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে সমমনা দল ও জোটগুলোর শীর্ষ নেতারাও নিয়মিত ভার্চুয়াল বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থান নিয়মিত পর্যালোচনা করে করণীয় নির্ধারণ করা হচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। একই সঙ্গে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও ভার্চুয়াল বৈঠক করে আন্দোলন সফল করার পাশাপাশি গ্রেপ্তার এড়াতে নানা কলাকৌশল ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। 

দলীয় নেতারা জানান, ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করতে আন্দোলন ছাড়া বিএনপি ও সমমনাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনের আগে আরও কঠিন কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা নিচ্ছেন তারা। গণগ্রেপ্তার ও অভিযানের মধ্যেও কর্মসূচিতে আরও বেশিসংখ্যক নেতাকর্মীকে রাজপথে নামানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ২৬ থেকে ৩০ নভেম্বর রাজপথে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতির মাধ্যমে সরকারকে একতরফা নির্বাচন বাতিলের কড়া সতর্কবার্তা দেওয়া হবে। অন্যথায় পরবর্তী যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করবে বিরোধী দলগুলো। একই সঙ্গে সারাদেশের নেতাকর্মীকে সর্বোচ্চ শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই যাতে জ্বালাও-পোড়াও করে আন্দোলনের ব্যাপারে দেশের মানুষ ও বিদেশিদের সমর্থন নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সম্ভব হলে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলোর সচিত্র ভিডিও এবং ছবি সংগ্রহ করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

বিএনপি ও জোট নেতারা জানান, হরতাল-অবরোধকে অভ্যাসে পরিণত করবে না তারা। আন্দোলন কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনা হবে। জনগণের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টি মাথায় নিয়েই বিকল্প কর্মসূচি দেবেন তারা। পর্যায়ক্রমে আন্দোলন-কর্মসূচির ধরনও বদল হবে। সামনে হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে ঘেরাও, বিক্ষোভ ও সমাবেশের কর্মসূচির চিন্তাও করছে বিরোধী দলগুলো। 

বিএনপি নেতারা জানান, দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না। যুগপৎ আন্দোলনে সমমনা দলগুলোর বাইরেও তপশিল প্রত্যাখ্যান করেছে অনেক দল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দলের মধ্যে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ইসলামী দল রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন (চরমোনাই পীর), এবি পার্টিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দল আছে। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আন্দোলনকে সহিংসতার দিকে নেওয়ার সরকারি অপচেষ্টাকে তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের উদ্যোগ অব্যাহত রাখা হবে। একই সঙ্গে বিক্ষুব্ধ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকেও রাস্তার নামানোর চেষ্টা থাকবে। 

সমমনা দল ও নেতাদের বিষয়ে ‘সতর্কতা’

এদিকে বিদেশিদের কাছে নির্বাচনে বেশিসংখ্যক দল ও প্রার্থীর অংশগ্রহণ দেখাতে বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর বঞ্চিত ও সুবিধাবাদী নেতাদের ‘টার্গেট’ করেছে সরকার। এ জন্য কিংস পার্টিগুলোকে কাজে লাগানোর তৎপরতা চলছে। 

সূত্র বলছে, প্রকাশ্যে বিষয়টি আমলে না নিলেও ভেতরে ভেতরে চিন্তিত ও সতর্ক হয়ে উঠেছে বিএনপি। সর্বশেষ গতকাল বুধবার মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘটনায় বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ দলটির নেতারা। আরও বেশ কয়েকটি দলকে নানা লোভনীয় প্রস্তাব ও মামলার চাপ দেওয়ার খবরে তৎপর হয়ে উঠেছেন তারা। 
এরই মধ্যে ওই সব দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে কোনো হঠকারী লোভ-লালসার কাছে মাথা নত না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। নীতিনির্ধারক নেতাদের পরামর্শে বিএনপি ও সমমনা দলের নেতারা এরই মধ্যে অনেকে লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। এমনকি কেউ কেউ চাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে মোবাইল ফোন বন্ধ ও আত্মগোপনে চলে গেছেন। 

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, আন্দোলন আরও বেগবান করার নানা প্রস্তুতি চলছে। সরকার যতই চেষ্টা করুক– এখন পর্যন্ত প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং গুরুত্বপূর্ণ সমমনা দলে ভাঙন বা নেতাকে টানতে সফল হয়নি। আগামী দিনেও সফল হবে না। দু-একজন সুবিধাবাদী লোককে ভোটে নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন বানচাল করার অপচেষ্টা অচিরেই ব্যর্থ হবে।

বিদেশিদের সমর্থন 

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণ নির্বাচনের ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থান কাজে লাগানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে আন্দোলন কর্মসূচিতেও শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখার চেষ্টা করছে তারা। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারাও আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিভাবে কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠক করে দলীয় অবস্থান অবহিত করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দলের সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা গতকাল ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে মার্কিন দূতাবাসের চিফ পলিটিক্যাল কাউন্সিলর ও ফার্স্ট সেক্রেটারির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

বিএনপি ও বিরোধী নেতারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অনেক দেশ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেকেই তাদের অবস্থান প্রকাশ্যে জানিয়েছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারও হুমকি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত সংলাপের আহ্বানকে তারা ইতিবাচক হিসেবে দেখেছে। চলমান আন্দোলনে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিভিন্ন দূতাবাসে চিঠিও দিয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের জন্য সরকারি দল ও এজেন্সিকে দায়ী করে সচিত্র ভিডিও চিত্রও দিয়েছে তারা। 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ পরিবহনে অগ্নিসংযোগ করছে। তবে এসব করে শেষ রক্ষা হবে না। সরকার পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor