Trending

কঠিন হবে ব্যবসা-বিনিয়োগ

  • শিল্প-বাণিজ্যে গতি ফেরাতে নেই পথনকশা
  • জ্বালানিতে ভর্তুকি কমানোয় ব্যয় বাড়বে
  • শুল্ক-কর বাড়ানোয় ভুগবে বেসরকারি খাত
  • বিদেশি পণ্য সহজলভ্য হবে, কমবে শিল্পের সুরক্ষা
  • শিল্প খাত চাঙ্গা করতে নেই জুতসই নীতি সহায়তা

আস্থাহীনতায় বিনিয়োগ তলানিতে। উচ্চ সুদের কারণে কাঙ্ক্ষিত ঋণ পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। ডলারের উচ্চ দরে আমদানিতে বাড়তি খরচ। এর মধ্যে করের বোঝা চাপানো হলেও বেসরকারি খাতের জন্য স্বস্তির বার্তা নেই প্রস্তাবিত বাজেটে।

উল্টো আমদানি পণ্যের বাজার বানানো আর স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষার বদলে বরং দেশে উৎপাদিত পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পরও এ রকম বহু পণ্যের শুল্ককর কমিয়ে অসম প্রতিযোগিতা তৈরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে ডলার সংকট আরো জটিল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। কারখানা বন্ধ হচ্ছে একে একে। কিন্তু এসব কারখানা চালু ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর কর্মপরিকল্পনা নেই।

ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে প্রকৃত স্থানীয় শিল্পের উন্নয়নে নীতি সহায়তা দেওয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো দিকনির্দেশনা নেই। অন্যদিকে সরকারের পরিচালনা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। পুঁজিবাজারে আস্থাহীনতা চরমে। এর জন্য নেই কাঙ্ক্ষিত নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা।

https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/06.June/03-06-2025/kalerkantho-ft-1a.jpg

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় স্বীকার করেছেন, বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। এ জন্য বিনিয়োগের পথে বিদ্যমান অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করে তা দ্রুততম সময়ে দূর করার চেষ্টা করবেন। এটি বলে তিনি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলনের সাফল্যের কথা বলেছেন। অথচ এই সম্মেলনে মাত্র ১৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগের সমঝোতা সই হয়েছে। আর স্টার্টআপ শপআপের ১১ কোটি ডলারের বিনিয়োগ এসেছে। যদিও বাংলাদেশের সম্ভাবনার দিক থেকে এটি পরিমাণে কম। তবে তথ্য-উপাত্ত বলছে, দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি খুবই খারাপ। বলতে গেলে বিনিয়োগ এখন প্রায় তলানিতে। দেশের উদ্যোক্তারাই আস্থাহীনতায় বিনিয়োগ করছেন। বিদেশিরা সাধারণত দেশি বিনিয়োগকারীদের দেখে বিনিয়োগে আসেন। সেই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বিদেশি বিনিয়োগ আসার সুযোগ কম। অথচ অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্যে কিভাবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আনা যায়, দেশের বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিভাবে ফেরানো যায়, সে রকম কোনো পথনকশা নেই। এমনকি অনেক ব্যবসায়ী মামলা-হামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার। তাঁদের অভয় দেওয়া, তাঁদের কিভাবে উৎপাদনে আরো বেশি যুক্ত করা যায়, তার কোনো ইঙ্গিত নেই। উল্টো বিদ্যু-জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে বিদ্যুৎ-জ্বালানি ব্যয়বহুল হবে। এতে তাঁদের উৎপাদন খরচ বাড়বে। তখন শিল্পের টিকে থাকা আরো কঠিন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

বাজেটে বেশ কিছু পণ্যের সম্পূরক শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যেমন—বিদেশি মাছ ও মাংস আমদানি সহজ করা হচ্ছে। এতে দেশে উৎপাদিত মাছ ও মাংসের বাজারে প্রভাব পড়বে। উদ্যোক্তারা এসব খাতে যে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। একইভাবে বিদেশি প্লাস্টিকের তৈজসপত্র, বিদেশি পোশাক ও বিদেশি জুতারও সম্পূরক শুল্ক কমানোর কথা বলা হয়েছে। এর ফলে এসব পণ্য সহজলভ্য হবে। অথচ এসব পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। পোশাকে বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ। বাংলাদেশের জুতাও বিদেশে রপ্তানি হয়। প্লাস্টিকে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। এসব পণ্যের আমদানি সহজলভ্য হলে খাতগুলোর প্রসার ঝুঁকিতে পড়বে। শুধু তাই নয়; এসব পণ্য আমদানি সহজ হলে এর পেছনে বিপুল পরিমাণ ডলার খরচ হবে। এমনিতেই ডলারের সংকট রয়েছে। এর দর বেড়েই চলেছে। নতুন করে কম দরকারি পণ্যের পেছনে বাড়তি ডলার খরচ হলে সংকট আরো বাড়বে, যা রিজার্ভের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এসব নীতি বেসরকারি খাতের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।

বাজেটে কর প্রশাসনে কিংবা নীতি কাঠামোতে বড় কোনো সংস্কার করা হয়নি। রাজস্ব আদায়ে সেই গতানুগতিক ধারাই বজায় রাখা হয়েছে। এমন সব কৌশল রাখা হয়েছে, যেখানে যাঁরা কর দেন, এবারও তাঁদের ওপরই চাপ পড়বে। করের জাল বিস্তার করার আমূল পরিবর্তনের কোনো প্রস্তাব করা হয়নি। ফলে যাঁরা নিয়মিত কর দেন, তাঁদেরই কর দিতে হবে। আর নানান উপায়ে করের হার বাড়ানোর ফলে বিভিন্ন খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও উদ্যোগ আরো কঠিন হতে পারে।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এমন বাজেট চায়, যা ব্যবসা-বাণিজ্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। বিনিয়োগের জন্য একটা সুস্থির পরিবেশ দরকার। দেশে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি দিন দিন কমে যাচ্ছে।  প্রস্তাবিত বাজেটেও কাঙ্ক্ষিত কোনো দিকনির্দেশনা নেই। কিন্তু বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, কারণ সঞ্চয় নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কম। দেশের সঞ্চয় যদি না থাকে তাহলে বিনিয়োগ হবে না। এদিকে বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, সঞ্চয় কমে যাচ্ছে, বেসরকারি খাতে ঋণ কমে যাচ্ছে। এখন বিনিয়োগ যদি কমে যায় তাহলে দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়বে।’

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ন্যূনতম করের সমন্বয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুমোদনযোগ্য বিয়োজনের আওতা বৃদ্ধি,  করজাল সম্প্রসারণ এবং অটোমেটেড রিটার্ন ব্যবস্থা চালুর মতো ইতিবাচক পদক্ষেপ থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, সহজে ব্যবসা পরিচালনার পরিবেশ উন্নয়ন, সিএমএসএমই এবং ব্যাংকিং খাত সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় সার্বিক ব্যবসা ও বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে ততটা সহায়ক নয়।’

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থ উপদেষ্টা শুল্ক-কর আরোপের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের ব্যবসা করার সুযোগ আরো কঠিন করেছেন। অটোমোবাইল খাতে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ১০% থেকে বাড়িয়ে ২৫% বৃদ্ধি করায় এ খাতের স্থানীয় উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। কটন সুতার উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট কর প্রতি কেজিতে তিন টাকা থেকে বেড়ে পাঁচ টাকা করা হয়েছে। কৃত্রিম আঁশ ও অন্যান্য আঁশের মিশ্রণে তৈরি সুতার সুনির্দিষ্ট কর একই হারে বাড়ানো হয়েছে।

এ ছাড়া  টার্নওভার কর ০.৬% থেকে বাড়িয়ে ১% করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি করেন ডিসিসিআই সভাপতি। ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ কমলেও স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভ্যাট বাড়ানোয় এ শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিশ্বমানের অর্থনীতিবিদদের নেতৃত্বে দেশ পরিচালনা করা হলেও তাঁদের দেওয়া প্রস্তাবিত এই বাজেটে ইতিবাচক পরিবর্তন নেই। ব্যবসায়ীদের আস্থা নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘এনবিআরের ভ্যাট সংগ্রহ পদ্ধতি  স্বয়ংক্রিয় না করা পর্যন্ত এআইটি বাড়ানো যাবে না। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং স্থানীয় শিল্পের উন্নয়নে এশিয়ার দেশগুলোর মতো সহনশীল কর কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রস্তাবিত বাজেটে প্রকৃত স্থানীয় শিল্পের উন্নয়ন, কর্মস্থানের উল্লেখযোগ্য কোনো দিকনির্দেশনা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতে মূল্যস্ফীতি কমানোর কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য নেই কোনো রূপরেখা।’

মোটাদাগে বাজেটে খাদের কিনারে থাকা বেসরকারি খাতের জন্য যেমন বিশেষ ঘোষণা, পদক্ষেপ বা প্রণোদনার ঘোষণা নেই; তেমনি মন্দার সময় ঋণখেলাপি, বিলখেলাপি বা রাজনৈতিক কারণে ক্ষতির মুখে থাকা ব্যবসা-বাণিজ্যকে ঘুরে দাঁড়াতে কী কী নীতি সহায়তা দেওয়া যায়, কিভাবে দেওয়া যায়, কেমন কৌশল নিলে বেসরকারি খাত আস্থা ফিরে পাবে, বিনিয়োগ ও ব্যবসা প্রসারে আরো উদ্যোগী হবে, এমন কোনো পথনকশা জানাতে পারেননি অর্থ উপদেষ্টা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor