Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Bangladesh

কড়াকড়ির মধ্যেও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে থেমে নেই নারী পাচার

যত দূর দৃষ্টি যায়, শুধু সবুজ আর সবুজ। গাছপালা, শস্যের মাঠের সমান্তরালে বয়ে যাচ্ছে ইছামতী নদী। নদীর অপর প্রান্তের কাঁটাতারের বেড়া জানান দিচ্ছে সেটি ভারত সীমান্ত।

যশোরের শার্শা উপজেলার দৌলতপুরের সীমান্তে দাঁড়ালে মৃদু বাতাসের সঙ্গে এই দৃশ্য চোখে আরাম দেয়, মনে প্রশান্তি আনে। এমন এক ভূদৃশ্যের কাছে বসবাস ২২ বছরের মেয়েটির। গত ২২ ফেব্রুয়ারি যশোর শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্তান কোলে নিয়ে এই প্রতিবেদকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। বাড়ির কাছের সীমান্ত দিয়ে দুই বছর আগে তিনি পাচার হয়েছিলেন। উদ্ধারের পর তাঁকে পুনর্বাসন করে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (বিএনডব্লিউএলএ)।

ওই নারী বললেন, কাজ দেওয়ার কথা বলে তাঁকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। দুই বছর পর ভারতীয় পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। এরপর বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। ভারতের যৌনপল্লিতে তিনি তিনজন বাংলাদেশি মেয়েকে দেখেছেন।

যশোরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত

যশোরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত

বাংলাদেশ থেকে নারী ও শিশুদের ভারতে পাচারের এই প্রবণতা থেমে নেই। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সীমান্তে কড়াকড়ি বেড়েছে। তবে পাচারকারীরা ফাঁকফোকর ঠিকই খুঁজে নিচ্ছে। মানব পাচার প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা সংগঠন জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার জানিয়েছে, গত বছরের আগস্ট থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে সীমান্ত দিয়ে পাচার হওয়া অন্তত ১০ নারী ও কিশোরীকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। তাঁদের ভারতের হায়দরাবাদ, মহারাষ্ট্র ও বেঙ্গালুরুর যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করে সে দেশের পুলিশ। পাচারের সময় অনেককে সীমান্ত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) হিসাবে, গত আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত অবৈধভাবে পাচারের সময় পাচারকারীসহ আটক ব্যক্তির সংখ্যা ১৪৫। এর মধ্যে নারী ও শিশু ৫৫ জন। একই সময়ে ভারত থেকে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে ১৬২ জনকে। প্রত্যাবাসিত নারী ও শিশুর তথ্য আলাদা করা নেই। জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের কান্ট্রি ডিরেক্টর তারিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অপরাধী চক্র সব সময় অস্থিরতার সুযোগ নেয়; এখনো নিচ্ছে।

ওই নারী বললেন, কাজ দেওয়ার কথা বলে তাঁকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। দুই বছর পর ভারতীয় পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। এরপর বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। ভারতের যৌনপল্লিতে তিনি তিনজন বাংলাদেশি মেয়েকে দেখেছেন।

পাচারের ঘটনা

নারী পাচার

নারী পাচারপ্রতীকী ছবি

মানব পাচারসংক্রান্ত আইন অনুসারে, কাজের নামে প্রতারণার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে দেশের ভেতরে বা বাইরে পাঠানো হলে, তা মানব পাচার। নারীর প্রতি সহিংসতার যত ধরন আছে, তার মধ্যে পাচার অন্যতম। সরেজমিনে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কক্সবাজার ও যশোরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে নারী ও শিশু পাচারের কিছু ঘটনার কথা জানা যায়।

যশোরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কথা হয় তিন কিশোরীর সঙ্গে, যাদের গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে পাচার করা হচ্ছিল। তারা ঢাকার একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিন কিশোরী জানিয়েছে, গত জানুয়ারিতে ‘ইন্ডিয়া যাবি নাচ শিখতে? মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন’; ‘নীল পাখি’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে তাদের একজনের কাছে বার্তা আসে। সেটিই তাদের ফাঁদে পড়া শুরু।

এক কিশোরী বলছিল, নীল পাখি আইডি (ফেসবুক প্রোফাইল) তার পূর্বপরিচিত ও সমবয়সী একটি মেয়ের। মেয়েটির মা একই আইডি ব্যবহার করেন। ওই আইডি থেকে যোগাযোগ করার পর ভারতে নাচ শিখতে যাওয়া এবং বড় অঙ্কের বেতন পাওয়ার কথা সে তার দুই সহপাঠীকে জানায়। তারাও যেতে রাজি হয়। নীল পাখি আইডি থেকে যোগাযোগ করা মেয়েটির মা তাদের ভারতের উদ্দেশে রওনা দিতে সহায়তা করেন।

তিন কিশোরী জানায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে তারা ঢাকা থেকে ঝিনাইদহের বাসে ওঠে। বাসের কন্ডাক্টর তাদের ঝিনাইদহে এক লোকের হাতে তুলে দেন। সেই লোক এক নারীর বাসায় নিয়ে যান। সেখান থেকে সন্ধ্যায় তাদের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় তুলে দেওয়া হয়। অটোরিকশাচালক তাদের সীমান্ত এলাকা মহেশপুরে এক লোকের হাতে তুলে দেন। ওই লোকের সঙ্গে সীমান্ত পাড়ি দিতে যাওয়ার সময় বিজিবির সদস্যরা তাদের ধাওয়া করেন। দৌড়ে পালানোর সময় এক কিশোরী হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। অন্যরাও আর এগোতে পারেনি। তখন তিন কিশোরীকে উদ্ধার করে বিজিবি। মুখে গামছা বাঁধা লোকটি পালিয়ে যান।

বাংলাদেশ থেকে নারী ও শিশুদের ভারতে পাচারের এই প্রবণতা থেমে নেই। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সীমান্তে কড়াকড়ি বেড়েছে। তবে পাচারকারীরা ফাঁকফোকর ঠিকই খুঁজে নিচ্ছে।

সীমান্ত থেকে উদ্ধার করা তিন কিশোরীর একজন বাদী হয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মহেশপুর থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২–এ মামলা করেছে। মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তিন কিশোরীই নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য। তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, তারা কেন কারও কথামতো ভারতে যেতে রাজি হলো। জবাবে এক কিশোরী বলছিল, তারা বুঝতে পারেনি তাদের পাচার করা হবে। বুঝতে পারলে কখনোই যেত না।

তিন কিশোরী ভাগ্যবতী। পাচার হওয়ার আগেই তাদের উদ্ধার করা গেছে। তারা তাদের মা-বাবার কাছে ফিরতে পেরেছে। কিন্তু সবার এমন সৌভাগ্য হয় না। অনেকেই পাচারের শিকার হন। ভারতে নিয়ে তাঁদের বিক্রি করে দেওয়া হয়। বাধ্য করা হয় যৌনকাজে।

পাচারকারীরা সাধারণত নিম্নবিত্ত আর্থিক সংকটে থাকা নারীদের লক্ষ্যবস্তু বানায়। যেমন ঢাকার বাসিন্দা ক্যানসার আক্রান্ত একটি মেয়ের (২২) চিকিৎসায় অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছিল। মেয়েটির বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। প্রতিবেশী এক নারী তাঁকে জানান, ভারতে চিকিৎসা খরচ কম। সেখানে গিয়ে কাজ করে তিনি নিজেই চিকিৎসা করাতে পারবেন। তাঁর ফাঁদে পড়ে গত বছরের ১০ অক্টোবর মেয়েটি ভারতে পাচারের শিকার হন। ২১ নভেম্বর হায়দরাবাদের পুলিশ তাঁকে যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করে।

খালাতো বোন ভারতের মহারাষ্ট্রে গৃহকর্মীর কাজ করে বলে জানেন স্বজনেরা। তাঁর কথাতেই দরিদ্র পরিবারের ১৫ বছরের আরেকটি মেয়ে ভারতে কাজের আশায় যেতে চায়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি তাকে ভারতে পাচার করা হয়। মহারাষ্ট্রের পুলিশ কিশোরীকে উদ্ধার করে ২৩ ফেব্রুয়ারি। তাঁকে উদ্ধারের কথা জানিয়ে জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের ঢাকা কার্যালয়ের কর্মসূচি কর্মকর্তা আফসানা হোসাইনী প্রথম আলোকে বলেন, যৌনকাজে ব্যবহৃত হওয়া কিশোরীটি কান্নার তোড়ে কোনো কথা বলতে পারছিল না।

প্রেমের ফাঁদে ফেলে, বিয়ে করে সন্তানসহ নিয়ে গিয়ে যৌনকাজে বাধ্য করার ঘটনাও রয়েছে। এক নারী বলেছিলেন, তাঁর ছয় মাসের সন্তানকে জিম্মি করে তাঁকে যৌনকাজে বাধ্য করা হতো। বারান্দা থেকে শিশুসন্তানকে ঝুলিয়ে ধরে বলা হতো, কথা না শুনলে ওপর থেকে ফেলে দেবে।

শুধু ভারতে নয়, মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক পাঠানোর কথা বলেও নানা প্রতারণার ঘটনা ঘটে, যা আইনের দৃষ্টিতে পাচার। যেমন সাতক্ষীরার এক নারী গত ২১ নভেম্বর সৌদি আরবে গিয়েছিলেন কাজের উদ্দেশ্যে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজের কথা বলে তাঁকে দেওয়া হয় একটি বাসায় গৃহকর্মের কাজ। সেখানে তিনি যৌন নির্যাতনের শিকার হন। জানুয়ারি মাসে তিনি ফেরত আসেন।

ওই নারী গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার আদালতে মামলা করেছেন। মামলায় সাতক্ষীরার লামিম ভিসা কেয়ারের মালিক মনিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মামলার অপর আসামি রাজধানীর মেসার্স সিয়াম ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. রফিকুল ইসলাম ৪ মার্চ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ওই নারী আগে থেকেই অসুস্থ থাকায় কাজ করতে না পেরে জানুয়ারি মাসে ফেরত আসেন।

অবশ্য প্রথম আলোকে ওই নারী বলেন, সেখানে তিনি ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

এক নারী বলেছিলেন, তাঁর ছয় মাসের সন্তানকে জিম্মি করে তাঁকে যৌনকাজে বাধ্য করা হতো। বারান্দা থেকে শিশুসন্তানকে ঝুলিয়ে ধরে বলা হতো, কথা না শুনলে ওপর থেকে ফেলে দেবে।

কোন সীমান্ত দিয়ে পাচার বেশি

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যশোরের বেনাপোল ঘিরে পুটখালী, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, সাদীপুর, রুদ্রপুর, ঝিনাইদহের মহেশপুর এবং সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে পাচারের ঘটনা ঘটছে। সিলেটের তামাবিল ও কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা দিয়েও বিচ্ছিন্নভাবে পাচারের কিছু ঘটনার কথা জানা যাচ্ছে।

মানব পাচার নিয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করা সংগঠন রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) কর্মসূচি কর্মকর্তা রেখা বিশ্বাস বলছেন, এখন সীমান্তে কড়াকড়ি আছে। তবে কিছু অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে মানব পাচার হচ্ছে।

বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, এখন শুধু সীমান্ত পার করে দিতেই জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নেয় পাচারকারী, যা আগে অনেক কম ছিল। কড়াকড়ি বেড়েছে বলে পাচারের বিনিময়ে টাকাও বেশি দেওয়া হচ্ছে। উদ্ধারের পর ভুক্তভোগী নারীরা জানিয়েছেন, যৌনপল্লিতে নারীদের বলা হতো, তাঁদের দুই লাখ-তিন লাখ টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের বেনাপোল সীমান্তে দুটি বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের ২০টি সীমান্তচৌকি রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া কাউকে উদ্ধার করা হলে বেনাপোল সীমান্তের ‘জিরো লাইন’ থেকে বিজিবি ও ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।

যশোর ৪৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ্‌ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, পাচারের পুরো প্রক্রিয়ায় একেকজন একেক দায়িত্বে থাকে। ভুক্তভোগীও বলতে পারে না কে তাদের কোন জায়গা থেকে নিয়ে যায়।

এখন শুধু সীমান্ত পার করে দিতেই জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নেয় পাচারকারী, যা আগে অনেক কম ছিল। কড়াকড়ি বেড়েছে বলে পাচারের বিনিময়ে টাকাও বেশি দেওয়া হচ্ছে।

রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক

কত নারী পাচারের শিকার

কত সংখ্যক নারী ও মেয়েশিশু পাচার হচ্ছে, সে তথ্য সরকারি পর্যায়ে সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ নেই। বিজিবি উদ্ধারের পর যতজন ভুক্তভোগীকে জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের হেফাজতে দিয়েছে, তার একটি হিসাব দিয়েছে সংগঠনটি। সে হিসাব বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ মাসে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে ১৮৬ জন নারী ও শিশুকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সীমান্ত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১৩৩ জনকে। এর মধ্যে গত আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে ভারত থেকে ফেরত আনা হয়েছে ৮৭ জনকে। পাচারের সময় উদ্ধার করা হয়েছে ৮৮ জনকে। এটা শুধু ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর এলাকার তথ্য।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদন ট্রাফিকিং ইন পারসন্স: বাংলাদেশ-২০২৪ অনুসারে, বাংলাদেশ সরকার নিয়মিতভাবে পাচারবিরোধী উপাত্ত প্রকাশ করে না। ফলে দেশটিতে পাচার পরিস্থিতি, পাচারের প্রবণতা জানা ও আগের বছরগুলোর সঙ্গে উপাত্তের তুলনা করা যায় না।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সরকার ২০২৩ সালে ১ হাজার ২১০ জনকে পাচারের শিকার বলে শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে ২১০ জন যৌন পাচার, ৭৯৫ জন জোরপূর্বক শ্রম পাচার এবং ২০৫ জন অন্যান্য পাচারের শিকার। তবে নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুসারে, গত বছর কমপক্ষে ১০ হাজার ১৩৫ জন পাচারের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৮৪ জন যৌন পাচারের শিকার।

মানব পাচার বিষয়ে জাতিসংঘের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে গত বছর বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪৫২ জন (২২৮ জন বিদেশে পাচার) নারী ও ৬৩টি মেয়েশিশু পাচারের শিকার হয়েছে। আগের বছরগুলোর তুলনায় এ সংখ্যা বেশি।

হিসাব না থাকার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (জননিরাপত্তা বিভাগ) উপসচিব মো. আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব জায়গায় নতুন জনবল হওয়ায় একটু গুছিয়ে উঠতে সময় লাগছে। আইওএমের (আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা) সহযোগিতায় একটি ওয়েব পেজের কাজ শুরু হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে ফল পাব আশা করি।’

মানব পাচার বিষয়ে জাতিসংঘের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে গত বছর বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪৫২ জন (২২৮ জন বিদেশে পাচার) নারী ও ৬৩টি মেয়েশিশু পাচারের শিকার হয়েছে। আগের বছরগুলোর তুলনায় এ সংখ্যা বেশি।

আসামি গ্রেপ্তার কম, বেশির ভাগই খালাস

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে থানাগুলোতে মানব পাচারের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১৩৫টি মামলা হয়েছে। বিচারাধীন মোট মামলা ৪ হাজার ২৯১টি। এর মধ্যে তদন্তাধীন ১ হাজার ৩১০টি। মোট আসামির এক-তৃতীয়াংশকে গ্রেপ্তার করা গেছে। বাকিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত বছর (আগের মামলার বিচারকাজ শেষে) ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫৫ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। খালাস পেয়েছেন ১ হাজার ২৫০ জন।

বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে লাগাতার অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির উপদেষ্টা সালমা আলী প্রথম আলোকে বলেন, মামলার চাপ কমাতে সরকারি কৌঁসুলিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সক্ষমতা বাড়ানো এবং ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিতে তহবিলে বরাদ্দ বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।

আমার সঙ্গে যা ঘটেছে, তা নিয়ে বসে থাকলে এগোতে পারতাম না। আমি বসে থাকিনি।

ভারতের যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার হওয়া যশোরের এক কিশোরী

দেশে ফিরে

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে প্রতারণার মাধ্যমে যৌন ও শ্রম শোষণের শিকার এই নারী ও কিশোরীদের কথাও আরও জোরেশোরে উচ্চারিত হোক, এমনটা চান অধিকারকর্মীরা। সব নারীর অধিকারের কথা বলার লক্ষ্য নিয়ে আজ ৮ মার্চ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন/ নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।

প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে এগিয়ে যেতে পারাই সফলতা। সেটার উদাহরণ ২০১৬ সালে ভারতের যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার হওয়া যশোরের এক কিশোরী। মানসিক ধকল কাটিয়ে পরে তিনি পড়াশোনা শুরু করেন। এখন পড়ছেন ডিগ্রি শেষ বর্ষে। পাশাপাশি চাকরিও করছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto