USA

কমলাই যাচ্ছেন হোয়াইট হাউসে, বলছেন রাজনীতির ‘নস্ট্রাডামাস’

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসবিদ অ্যালান লিচম্যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ‘জ্যোতিষী’ হিসেবে পরিচিত। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, হোয়াইট হাউসের দৌড়ে এবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস জয়ী হবেন। এক বিশেষ ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন কমলা হ্যারিস। আপাতত এটাই আমার ভবিষ্যদ্বাণী। এবার বাকিটা আপনাদের ওপর। ঘর থেকে বের হোন এবং ভোট দিন।’ 

নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য বিখ্যাত অ্যালান লিচম্যান। এ কারণে তাঁর বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়। তাঁকে বলা হয়, মার্কিন ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নস্ট্রাডামাস’।

বৃহস্পতিবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে ওই ভিডিও বার্তা প্রকাশ হয়। ১৯৭৩ সালের পর থেকে ওয়াশিংটন ডিসির আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন লিচম্যান। গত ৪০ বছরে ১০টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তিনি। এর মধ্যে ৯টিতেই তিনি সঠিক প্রমাণিত হন। কেবল ২০০০ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ সামান্য ব্যবধানে আল গোরকে যে হারাবেন, সেটা তিনি আগে থেকে বলতে পারেননি। 

লিচম্যান যে পদ্ধতির ভিত্তিতে ভবিষ্যদ্বাণী করেন, তা হোয়াইট হাউসের দৌড়ে অত্যন্ত যথার্থ হিসেবে প্রমাণ হয়ে আসছে। পদ্ধতিটি তিনি ১৯৮১ সালে রুশ গবেষক ভ্লাদিমির কেইলিস-বোরোকের কাছ থেকে আত্মস্থ করেছিলেন। এ পদ্ধতিতে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে ক্ষমতাসীন দলের অবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবেচনায় নেওয়া হয়; দেখা হয় তাদের প্রতিনিধিরা পাস করবেন কিনা। পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে কী কী অসন্তোষ রয়েছে।

অ্যালান লিচম্যান ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে ১৩টি মানদণ্ড আমলে নেন। এ ক্ষেত্রে যদি ক্ষমতাসীন দল ছয় বা তার বেশি মানদণ্ডের পর্যায় পার হতে পারে, তাহলে তাদের বিজয়ী ধরে নেওয়া হয়। এ কারণে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী নিছক অনুমাননির্ভর নয়। ট্রাম্প আর কমলার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্পর্কে ভিডিওতে লিচম্যান বলেন, এবার ১৩টির মধ্যে আটটি মানদণ্ডে কমলা এগিয়ে গেছেন, যা তাঁর বিজয়কে নিশ্চিত করেছে। আগামী চার বছর ডেমোক্র্যাটরাই হোয়াইট হাউসে থাকছেন।

চলতি বছরের ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কার্যত ব্যাকফুটে আছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। আলজাজিরা জানায়, রিপাবলিকান পার্টির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি জানিয়েছেন, নির্বাচনে তিনি ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না; তিনি কমলাকে ভোট দেবেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, সম্ভবত এটা ট্রাম্পকে নিয়ে এ পর্যন্ত কোনো রিপাবলিকানের বলা সবচেয়ে কঠোর মন্তব্য। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৮ বছরের ইতিহাসে ট্রাম্পের মতো আর কেউ গণতন্ত্রের জন্য এত বড় হুমকি ছিলেন না। ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময়কালে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চেনি। 

শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি কমলার প্রতি সমর্থনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পকে ‘আর কখনও ক্ষমতায় বিশ্বাস করা যায় না। ভোটাররা তাঁকে প্রত্যাখ্যানের পর তিনি নিজেকে ক্ষমতায় রাখতে মিথ্যা ও সহিংসতা ব্যবহার করে গত নির্বাচন কারচুপির চেষ্টা করেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, সংবিধান রক্ষার জন্য দেশকে দলাদলির ঊর্ধ্বে রাখা। এ কারণেই আমি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ভোট দেব।’ 

এর আগে গত বুধবার কমলাকে সমর্থন করেন তাঁর মেয়ে লিজ চেনি। তিনি ওয়াইমিং থেকে রিপাবলিকান পার্টির হয়ে মার্কিন কংগ্রেসের সাবেক সদস্য।

এ পরিস্থিতিতে এক মহারণের দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ব। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো টেলিভিশন বিতর্কে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। এপি জানায়, স্থানীয় সময় আগামী মঙ্গলবার এ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে জো বাইডেনের সঙ্গে বিতর্ক করেন ট্রাম্প। ওই বিতর্কে ধরাশায়ী হয়েছিলেন বাইডেন। এর জেরে পরবর্তী সময়ে তিনি প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ান। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button