USA

কমলাকে প্রেসিডেন্ট পদে দেখতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র, ট্রাম্প ‘বিপজ্জনক’ ব্যক্তি ॥ বারাক ওবামা

আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রতি আবেগপূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও মিশেল ওবামা। মঙ্গলবার শিকাগোতে দলটির জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় রাতে ওবামা দম্পতি তাদের দেওয়া বক্তৃতায় এ সমর্থন জানান। ওবামা বলেন, এই নারীকে (কমলাকে) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ‘নতুন অধ্যায়’ শুরুর জন্য আমি ভোটারদের আহ্বান জানাই। বারাক ওবামা ডেমোক্রেটদের উদ্দেশে বলেন, ‘আলোর মশালটি কমলা হ্যারিসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখার জন্য প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। ওবামা সম্মেলন কেন্দ্রের মঞ্চে ওঠার পর উচ্ছ্বসিত জনতা করতালির মধ্য দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়। তিনি বলেন, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস মার্কিন নাগরিকদের জন্য লড়াই করবেন। এ সময় কমলার প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দেন তিনি। খবর আলজাজিরা,  এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের। 
ওবামা বলেন, কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত। তিনি এমন একজন মানুষ, যিনি সারা জীবন সেসব মানুষের জন্য লড়াই করেছেন, যাদের একটি কণ্ঠস্বর প্রয়োজন। তিনি এমন একজন, যিনি আপনাদের দেখাশোনা করবেন, আপনাদের কথা শুনবেন এবং আপনাদের জন্য প্রতিদিন উঠে দাঁড়াবেন, লড়াই করবেন। এ সময় উচ্ছ্বসিত জনতার উদ্দেশে কমলা সম্পর্কে বারাক ওবামা বলেন, ‘হ্যাঁ, তিনি পারবেন। কয়েকবার তিনি এই বাক্য উচ্চারণ করেন।

ওবামার নির্বাচনী প্রচারাভিযানের স্লেøাগান ছিল ‘হ্যাঁ, আমরা পারব’। এ সময় ওবামা স্ত্রী মিশেলও কমলার সমর্থনে দীর্ঘ বক্তৃতা করেন। চার দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন স্থানীয় সময় সোমবার শুরু হয়। ওইদিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আবেগময় ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা, আমি তোমাকে আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়েছি।’  
শিকাগোর ইউনাইটেড সেন্টার অ্যারেনায় শুরু হওয়া এই সম্মেলন শেষ হবে বৃহস্পতিবার।

নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের এই জমায়েত এখন আগ্রহের কেন্দ্রে। সম্মেলনের শেষদিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিস ডেমোক্রেটিক পার্টির আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন গ্রহণ করবেন। এদিকে শিকাগোয় ইসরাইলি দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করেছে। মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে এগিয়ে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনী দৌড়ে দেশজুড়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এখন কিছুটা এগিয়ে আছেন কমলা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে গোনা কিছু অঙ্গরাজ্যের ওপর নির্ভর করছে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের ভাগ্য। এদিকে প্রায় এক মাস পর ফের খোলা আকাশের নিচে নির্বাচনী সমাবেশে আসেন রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার নর্থ ক্যারোলাইনায় সমাবেশটি হয়। সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। 
ট্রাম্প যেখানে দাঁড়িয়ে ভাষণ দেবেন, সেই পোডিয়ামের চারপাশ বুলেটপ্রুফ কাঁচ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প শিবিরের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন গণমাধ্যম এ খবর জানায়। ১৩ জুলাই পেনসিলভানিয়ায় খোলা জায়গায় এক নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় কাছেই আরেকটি বাড়ির ছাদ থেকে ট্রাম্পকে গুলি করা হয়। গুলি ট্রাম্পের কানে লাগে। সমাবেশে অংশ নিতে আসা ট্রাম্পের সমর্থক গুলিবদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই ঘটনার পর সিক্রেট সার্ভিস ট্রাম্পকে নিরাপত্তার কারণে বাইরে নির্বাচনী সমাবেশ আয়োজন বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয়।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ট্রাম্প আরও প্রায় এক ডজন নির্বাচনী সমাবেশ করেছেন। কিন্তু সবই বদ্ধ জায়গায়। তবে ট্রাম্প প্রকাশ্যে বারবার বলেছেন, তিনি খোলা জায়গায় সমাবেশ আয়োজন করতে চান। ৩১ জুলাই পেনসিলভানিয়ার হ্যারিসবার্গে এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা বাইরে খোলা আকাশের নিচে নির্বাচনী সমাবেশ আয়োজনের আশা এখনো ছাড়িনি। ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প এবার তার দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন। শিকাগোয় ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে দলটির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি কয়েক হাজার আমন্ত্রিত অতিথি অংশ নিয়েছেন।

প্রথমদিন সপরিবারে যোগ দেন জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় দলের জাতীয় এই সম্মেলনে শেষবারের মতো ভাষণ দেন তিনি। বাইডেন যখন মঞ্চে উঠছিলেন, তখন দর্শক সারির সবাই একসঙ্গে দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান দেখান। একইসঙ্গে, উপস্থিত নেতাকর্মীর সমস্বরে বলে ওঠেন ‘ধন্যবাদ জো’। এ ঘটনার পর বাইডেন বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে আবেগে কেঁদেও ফেলেন। নিজেকে সামলে নিয়ে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘কঠিন সময় শেষ, এখন ভালো সময়।

প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে দেশের জন্য কাজ করেছেন বলে জানান তিনি। মঞ্চে মেয়ে অ্যাশলি বাইডেনকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকেন বাইডেন। এরপর চোখের পানি মুছতে দেখা যায় তাকে। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাইডেনকে চাপ দিয়েছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির বহু নেতা। আসন্ন  নির্বাচনে কমলাকে জয়ী করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান বাইডেন। সমবেত জনতার উদ্দেশে অ্যাশলি বাইডেন বলেন, তার বাবা বাইডেন সত্যিকার অর্থে একজন কন্যা সন্তানের বাবা। তিনি নারীদের সব সময় মূল্যায়ন করেন। তাদের ওপর বিশ্বাস রাখেন।

সম্মেলনে বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার বিভিন্ন কাজের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আরও উন্নত একটি যুক্তরাষ্ট্র তৈরিতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে দলের জাতীয় সম্মেলনে এটাই ছিল তার শেষ ভাষণ। ফলে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড় থেকে হঠাৎ সরে যাওয়া বাইডেন ভাষণে কী বলেন, সেদিকেই নজর ছিল সবার। বাইডেন মঞ্চে ওঠার আগে আকস্মিকভাবে সেখানে হাজির হয়ে নজর কাড়েন কমলা হ্যারিস। প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ দিতেই হঠাৎ এই আগমন বলে জানান তিনি। কমলা বলেন, জো, আপনার ঐতিহাসিক নেতৃত্বের জন্য ধন্যবাদ।

আমরা আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ। কমলা হ্যারিস চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরে মঞ্চে আসেন ডেমোক্রেটিক পার্টির আরেক প্রভাবশালী নেতা হিলারি ক্লিনটন। তিনি যখন মঞ্চে উঠছিলেন, তখন দর্শক সারি থেকে হিলারি, হিলারি আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। কমলা হ্যারিসের মতো তিনিও ভাষণ শুরু করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। বাইডেন হোয়াইট হাউসের মর্যাদা ফিরিয়ে এনেছেন বলেও মন্তব্য হিলারি। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন হিলারি।

কিন্তু সেবার তিনি ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন। কাজেই এবারের নির্বাচনে জিতলে কমলা হ্যারিস প্রথম মার্কিন নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার রেকর্ড গড়বেন। সোমবারের সম্মেলন চলাকালে আশপাশের এলাকায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করেন। সম্মেলন শুরুর আগ থেকেই তারা বিভিন্ন স্থানে সমবেত হতে থাকেন। গাজাযুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভ শেষে পদযাত্রাও করেন তারা। ইসরাইলকে সাহায্য করা বন্ধের পাশাপাশি গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button