কমলার জনপ্রিয়তায় ‘ভীত’ রিপাবলিকান শিবির, বিপুল অর্থ ঢালছেন ট্রাম্প
আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান শিবিরে কথার লড়াই আরও জমে উঠেছে। পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী কমলা হ্যারিসের জনপ্রিয়তার পারদও বাড়ছে। জনপ্রিয়তায় তিনি এখন ট্রাম্পের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছেন। ফলে ‘ভীত’ হয়ে উঠেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই কমলাকে ঠেকাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢালার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে এক কোটি ডলারের বিজ্ঞাপন প্রচার করতে যাচ্ছেন রিপাবলিকান পার্টির এই প্রার্থী। রিপাবলিকান শিবিরের কয়েকটি সূত্র বিষয়টি স্বীকারও করেছেন।
গত সপ্তাহে নির্বাচনী দৌড় থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরপর থেকেই ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও বড় বড় দাতাদের সমর্থন পাচ্ছেন কমলা হ্যারিস। কম বয়সী ডেমোক্র্যাট সমর্থকরা বাইডেনের প্রতি বিমুখ হলেও তরুণ-তরুণীদের কাছে কমলা হ্যারিস অল্প সময়ের মাঝেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। এক সপ্তাহেই কমলার নির্বাচনী তহবিলে জমা পড়েছে ২০ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে খানিকটা বিপাকেই পড়েছেন ট্রাম্প।
বেশ কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প ও তার প্রচার শিবিরের মূল কৌশল ছিল ‘বুড়ো’ বাইডেনের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার ওপর আক্রমণ। বাইডেনের বদলে দৃশ্যপটে অপেক্ষাকৃত কম বয়সী কমলার আগমনে নতুন কৌশল নির্ধারণে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাম্পের প্রচার দল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একশ’ দিনেরও কম সময়ের আগে কিছু অনানুষ্ঠানিক মতামত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে ভালো ফল করেছেন ৫৯ বছর বয়সী কমলা। বিশেষত করে তরুণ সমাজ কমলার প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন।
সোমবার ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করেন। এই বিজ্ঞাপনে অতীতের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার, প্রচার সভা ও বিতর্কে কমলা হ্যারিসের বলা কথাগুলোর সমন্বয়ে তাকে একজন জনবিচ্ছিন্ন অতি উদারপন্থি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। খবর ওয়েবসাইট, সিএনএন ও বিবিসি অনলাইনের।
এদিকে নিজেকে দিন দিন বিশ্ব মঞ্চের অন্যতম খেলোয়াড়ে পরিণত করছে ইরান। শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয় দেশটি এবার নিজের গোপন প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে খোদ আমেরিকার মাটিতে। সম্প্রতি এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। বলা হচ্ছে, আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইরানের বিভিন্ন গোপন কার্যক্রম। আগামী নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রার্থিতাকে অবমূল্যায়ন করতে কাজ শুরু করেছে ইরান।
এ লক্ষ্যে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন গোপন কার্যক্রম শুরু করেছে। এ ছাড়া তেহরানের মদদে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপও হাতে নিয়েছে ইরান। সোমবার মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনের সম্ভাব্য হুমকি নিয়ে হালনাগাদকৃত এ পর্যালোচনায় এমনটা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব দ্য ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স তথা ওডিএনএ এক বিবৃতিতে জানায়, মার্কিন গোয়েন্দারা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পায়-তেহরান মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চাইছে।
হয়তো ইরান এমন কাউকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চায় না যার কারণে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যকার সম্পর্ক আরও উত্তেজিত হয়ে উঠবে। ওডিএনএ জানায়, সাম্প্রতিক ইরানি কার্যকলাপগুলো সামাজিক মাধ্যমের গোপন অ্যাকাউন্ট এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। সংস্থাটি জানায়, ২০২০ সাল থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল প্রার্থীর ব্যাপারে ইরান তাদের মত পাল্টায়নি। এমনকি ২০২০ সালের নির্বাচনে তেহরান বহু কার্যক্রম পরিচালনা করে যাতে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নির্বাচিত না হতে পারেন।
জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন এক বিবৃতিতে জানায়, মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার কোনো উদ্দেশ্য বা কর্মকা-ে ইরান জড়িত নয়। মূলত নির্বাচনী প্রচারে একটি মনস্তাত্ত্বিক অভিযানের অংশ হিসেবে এমন প্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করে ইরান। সম্প্রতি ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনায় ইরান যুক্ত ছিল বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়। যদিও এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে তেহরান। মার্কিন গোয়েন্দারা জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী পছন্দের ব্যাপারে রাশিয়ার পছন্দও আগের মতোই আছে।
২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিল রুশ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা মাধ্যম। কমলার প্রচার দলের উপব্যবস্থাপক রব প্ল্যাহার্টি বলেন, ‘আমরা এক সপ্তাহ ধরে প্রচার শুরু করেছি। এর মধ্যে কমলা হ্যারিস ২০ কোটি ডলার তুলে ফেলেছেন। দাতাদের ৬৬ শতাংশই নতুন। আমরা ১৭ হাজার নতুন স্বেচ্ছাসেবীর সই পেয়েছি।
শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও বারাক ওবামা এবং সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির মতো প্রভাবশালী নেতারা কমলা হ্যারিসকে সমর্থনের কথা জানান। রবিবার প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জনপ্রিয়তায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রায় ছুয়ে ফেলেছেন কমলা। ইউরোপেও বেড়েছে তার জনপ্রিয়তা।