USA

কমলা হ্যারিসের ঐতিহাসিক ভাষণ, এগিয়ে যাওয়ার নতুন পথ মার্কিনিদের সামনে

প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ এবং এশীয়-আমেরিকান হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছেন কমলা হ্যারিস। মনোনয়ন গ্রহণের ঐতিহাসিক ভাষণে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস সব আমেরিকানের ‘এগিয়ে যাওয়ার নতুন পথ’ তৈরির প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, তিনি সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হবেন। একই সঙ্গে তিনি গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি বলেছেন, তিনি বিশ্বজুড়ে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়বেন।

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় ডেমোক্রেটিক পার্টির চার দিনের জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার রাতে কমলা দলীয় মনোনয়ন গ্রহণ করেন। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তে সম্মেলনের মঞ্চে দেওয়া ভাষণে কমলা হ্যারিস বলেন, ‘জনগণের পক্ষ থেকে, প্রত্যেক আমেরিকানের পক্ষ থেকে, দল, জাতি, জেন্ডার বা আপনার দাদি যে ভাষায় কথা বলেন– সবকিছু নির্বিশেষে… আমি আপনাদের মনোনয়ন গ্রহণ করছি।’
৪৫ মিনিটের ভাষণে ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নতুন পথে হাঁটার সুযোগ এসেছে। অতীতের তিক্ততা ভুলে, হতাশা মুছে এগোনোর সুযোগ এসেছে। কোনো দল বা একক গোষ্ঠী হিসেবে নয়, আমেরিকার মানুষ হিসেবে এগোনোর সুযোগ এসেছে। আমাদের এখন আর পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

আমেরিকানরা এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেন কমলা। তিনি বলেন, ‘আমি আমাদের দেশকে আমার পুরো হৃদয় দিয়ে ভালোবাসি। আমি যেখানেই যাই, যাদের সঙ্গেই আমার দেখা হয়। আমি এমন একটি জাতি দেখতে পাই, যে জাতি এগিয়ে যেতে প্রস্তুত, পরবর্তী পদক্ষেপ ও অবিশ্বাস্য যাত্রার জন্য প্রস্তুত। এটাই আমেরিকা।’

আগামী ৫ নভেম্বর  অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলার প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভাষণে ট্রাম্পের সমালোচনা করেন কমলা। বলেন, নানাভাবেই ট্রাম্প একজন অবিবেচক মানুষ।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেন কমলা। এ প্রসঙ্গে কমলা বলেন, ট্রাম্প মার্কিন ভোটারদের রায় ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। তা করতে ব্যর্থ হলে তিনি একটি সশস্ত্র উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ক্যাপিটলে পাঠান, যেখানে তারা আইনপ্রয়োগকারীদের ওপর হামলা চালায়।

জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন কমলা। তবে যথারীতি আগামী নির্বাচনেও  প্রধান দুই প্রার্থীর মধ্যে তীব্র লড়াই হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে মার্কিন জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করবেন বলে জানান ৫৯ বছর বয়সী কমলা। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারানোটা একটা জরুরি অপরিহার্য বিষয়।
কমলা তাঁর ভাষণে ইসরায়েল নিয়েও কথা বলেন। বলেন, তিনি সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলকে রক্ষা করবেন। তবে একই সঙ্গে তিনি চলমান গাজা যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানান। বলেন, এখন জিম্মিদের ফেরানোর চুক্তি ও একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার সময়। গত ১০ মাস ধরে গাজায় যা ঘটেছে, তা ধ্বংসাত্মক। কমলা বলেন, বহু নিরীহ মানুষ মরেছে। ক্ষুধার্ত, সাহায্যের জন্য মরিয়া মানুষকে বারবার এখান থেকে ওখানে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। গাজার মানুষের এই দুর্ভোগ হৃদয়বিদারক।

কমলা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং আমি এই যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করছি, যাতে ইসরায়েল সুরক্ষিত থাকে এবং বন্দিরা মুক্তি পায়, গাজায় মানুষের দুর্ভোগ শেষ হয় এবং ফিলিস্তিনিরা যাতে মর্যাদা, সুরক্ষা, স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে।’

কমলার ভাষণে ইউক্রেন প্রসঙ্গও আসে। বলেন, তিনি ইউক্রেন ও ন্যাটো মিত্রদের পাশে দৃঢ়ভাবে থাকবেন।
স্বৈরশাসকদের কাছে ট্রাম্পের মাথা নত করার অভিযোগ করে কমলা বিশ্বজুড়ে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার অঙ্গীকার করেন। বলেন, গণতন্ত্র ও স্বৈরাচারের মধ্যকার স্থায়ী সংগ্রামে, তাঁর অবস্থান কোথায়, তা তিনি জানেন। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কোথায়, তাও তিনি জানেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button