কমিয়ে ২০ ভাগ শুল্ক নির্ধারণ যুক্তরাষ্ট্রের, বাংলাদেশের পোশাক খাতে স্বস্তির খবর

যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা বাংলাদেশের পণ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। সবশেষ বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের কথা জানিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। সে হিসাবে শুল্ক ১৫ শতাংশ কমিয়ে নতুন হার ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে এই শুল্কহার পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসি থেকে পাঠানো এক সরকারি বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রায় ৭০টি দেশের আমদানিযোগ্য পণ্যে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ১ আগস্টকে চূড়ান্ত সময়সীমা ধরে নেয়া দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে এই ঘোষণা দেন তিনি।
নতুন এই শুল্ক কাঠামো কেবল আমদানি শুল্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর আওতায় এসেছে অভ্যন্তরীণ নীতি সংস্কারসহ বাণিজ্য ভারসাম্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ও। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, এসব পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থ ও নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আলোচনায় অংশ নেয়া দেশগুলোকে মার্কিন পণ্য- বিশেষ করে কৃষিপণ্য আমদানির প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ- অশুল্ক বাধা, বাণিজ্য ঘাটতি ও নিরাপত্তা ইস্যু সমাধানে আগ্রহ দেখিয়েছে তাদের ওপর তুলনামূলকভাবে কম শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, প্রতিটি দেশের ওপর শুল্কহার নির্ধারণ হয়েছে এসব বিষয়ে তাদের অঙ্গীকারের গভীরতার ভিত্তিতে।
বাংলাদেশ ২০ শতাংশ শুল্ক সুবিধা পেয়েছে। এই হার শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো পোশাক রপ্তানিকারক প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনীয়। এসব দেশ ১৯ থেকে ২০ শতাংশ হারে শুল্কের আওতায় পড়েছে। ফলে বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তি করতে ব্যর্থ হওয়ায় ভারতকে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং দলের প্রধান আলোচক ড. খলিলুর রহমান বলেন, আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আলোচনা করেছি, যাতে আমাদের প্রতিশ্রুতি জাতীয় স্বার্থ ও সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
তিনি জানান, তৈরি পোশাক খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমদানি প্রতিশ্রুতি কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্যে। এতে একদিকে যেমন আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে মার্কিন কৃষি-প্রধান অঙ্গরাজ্যগুলোর সঙ্গে সম্পর্কও উন্নত হবে।
ড. রহমান আরও বলেন, আজ আমরা সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক এড়াতে সক্ষম হয়েছি। এটি তৈরি পোশাক খাত এবং এ খাতের ওপর নির্ভরশীল লাখো মানুষের জন্য স্বস্তির খবর। আমরা শুধু প্রতিযোগিতার জায়গা ধরে রাখিনি বরং বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে প্রবেশের নতুন সুযোগও সৃষ্টি করেছি।
গত ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পরে ৯ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। এ সময় শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশকে আলোচনার সুযোগ দেয় ওয়াশিংটন।