Hot

কমিশন পুনর্গঠনের অপেক্ষা দুর্নীতি দমন কমিশন ৭ সমস্যায় স্থবির

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজের গতি অনেকটাই থেমে গেছে। কমিশন শূন্যতায় মোটা দাগে সাত সমস্যার মুখে স্থবির হয়ে পড়েছে সংস্থাটি। কর্মকর্তারা সময় পার করছেন ‘রুটিন ওয়ার্কে’। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমিশনের হাতে থাকায় নতুন কোনো কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন- নামে স্বাধীন সংস্থা হলেও; কার্যত ‘পরাধীন’ দুদকের কমিশন বারবার গঠিত হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। ফলে বিভিন্ন সময় পটপরিবর্তনের পরই কমিশনের কর্তাদের আকস্মিক বিদায় নিতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গঠিত ছয়টি কমিশনের তিনটিই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি।

সবশেষ ২৯ অক্টোবর মেয়াদপূর্তির আগেই বিদায় নিতে হয়েছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ কমিশনকে। এতে প্রায় এক মাস ধরে কমিশন শূন্যতায় দুদকের কাজে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কমিশন শূন্যতায় কাজ কিভাবে চলবে তার কোনো নির্দেশনা দুদক আইন বা বিধিতে না থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দুদককে কার্যত স্বাধীন করতে হবে। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে কমিশন গঠন করতে হবে যাতে তারা কারও আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ না করে। এটা করতে পারলে রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটলেও মেয়াদপূর্তির আগে কমিশনকে বিদায় নিতে হবে না। এক্ষেত্রে কমিশন নিয়োগের জন্য গঠিত বাছাই কমিটিকে রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে দেশপ্রেমে জাগ্রত হতে হবে। তারা এমন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করবেন যাতে কোনো বিতর্কের সুযোগ না থাকে।

জানতে চাইলে দুদকের সাবেক পরিচালক নাসিম আনোয়ার যুগান্তরকে বলেন, নতুন কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত বিদায়ি কমিশনকে দায়িত্ব পালনের জন্য রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করতে পারতেন। তাতে তারা সম্মত হলে দুদকের কাজে স্থবিরতার সুযোগ সৃষ্টি হতো না। তাছাড়া পদত্যাগের ৩০ দিনের মধ্যে কমিশন গঠনের বিধান থাকায় এখনো সব কিছু আইনের মধ্যেই হচ্ছে-তাই কিছু বলাও যাচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরোনো তদন্ত ও অনুসন্ধান কাজ চলমান। অন্যান্য রুটিন ওয়ার্ক চলছে। শুধু নতুন অনুসন্ধান, মামলা, চার্জশিট অনুমোদনসহ কিছু সিদ্ধান্ত আটকে আছে। এসব কাজে গতি ফেরাতে ৩০ দিনের মধ্যে কমিশন নিয়োগ দেওয়া না হলে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। বিভিন্ন মহল থেকে দুদক সংস্কারসহ চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনারকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি ওঠে। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে প্রধান করে দুদক সংস্কারে কমিশন গঠন করে। এই কমিশন কাজ শুরুর কিছু দিন পর ২৯ অক্টোবর দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ, কমিশনার জহুরুল হক ও আছিয়া খাতুন পদত্যাগ করলে কমিশন শূন্য হয়ে যায়।

দুদকের ঊর্ধ্বতন অভিজ্ঞ একজন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্তে আলাপকালে বলেন, প্রতিবারই কমিশনের পদত্যাগ অথবা অপসারণের ক্ষেত্রে দুদক আইন ২০০৪ এর ১০ ধারা উপেক্ষিত হয়েছে। এই আইনে কমিশনের পদত্যাগ বা অপসারণের আগে ৩০ দিনের নোটিশ দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তিনটি কমিশন বিদায় নেয়। সবশেষ ২৯ নভেম্বর মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ কমিশন পদত্যাগ করে। ৩১ নভেম্বর তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। বিধি মেনে কমিশন পদত্যাগ বা অপসারণ করা হলে দুদকের কাজে অচলাবস্থার সৃষ্টি হতো না।

জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭ এ ২৬টি বিধি রয়েছে। আর দুদক আইন ২০০৪-এ ধারা আছে ৩৮টি। এসব বিধি বা ধারার কোথাও কমিশনের অবর্তমানে দুদকের কাজ কিভাবে চলবে তার কোনো নির্দেশনা নেই। ফলে বর্তমানে মোটা দাগে অন্তত সাতটি সমস্যায় দুদকের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সমস্যাগুলো হচ্ছে-যাচাই-বাছাই কমিটি থেকে প্রাপ্ত নতুন অভিযোগ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না, অনেক অভিযোগের অনুসন্ধান শেষ হলেও সংশ্লিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা করা যাচ্ছে না, চলমান অনেক মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট বা এফআরটি দাখিলের অনুমোদন পাওয়া যাচ্ছে না, অভিযুক্ত ব্যক্তি/আসামিদের সম্পদ ক্রোক/ফ্রিজ করার অনুমোদন এবং ৫৪ ধারায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমোদন পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া কমিশনের অধীনে কর্মরত কর্মচারীদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের অনুমোদন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দুর্নীতি দমন কমিশনের অধীনে প্রাপ্ত বাজেট বরাদ্দ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ক্রয়ের অনুমোদন পাওয়া যাচ্ছে না। একই সঙ্গে ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২৪ উদ্যাপনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিবসের কার্যক্রম গ্রহণে সিদ্ধান্ত আটকে আছে।

আরও জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে যথাক্রমে বিচারপতি সুলতান হোসেন খান, লে. জে. হাসান মশহুদ চৌধরী, গোলাম রহমান, মো. বদিউজ্জামান, ইকবাল মাহমুদ ও মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ কমিশন দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ শাসনামলে গোলাম রহমান, বদিউজ্জামান ও ইকবাল মাহমুদের কমিশন মেয়াদপূর্তি করে বিদায় নেয়। বাকি তিনটির মধ্যে প্রথম কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। কমিশনার ছিলেন প্রফেসর মনিরুজ্জামান মিয়া ও মনির উদ্দিন আহমেদ। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে ২০০৪ সালের ২২ নভেম্বর এই কমিশন দায়িত্ব নিয়েছিল। ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন এ কমিশনকে বঙ্গভবনে চায়ের দাওয়াত দেন। দাওয়াত থেকে ফিরে ৬ ফেব্রুয়ারি এই কমিশন বিদায় নেয়। মেয়াদপূর্তির আগেই আকস্মিক বিদায়ের ফলে ৭ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কমিশন শূন্য ছিল। ১/১১ এর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর লে. জে. হাসান মশহুদ চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে নতুন কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনার হিসাবে নিয়োগ পান আবুল হাসান মঞ্জুর মান্নান ও মো. হাবিবুর রহমান। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসলে পদত্যাগ করেন হাসান মশহুদ চৌধুরী। ২৪ মাস দায়িত্ব পালন করে হাসান মশহুদ পদত্যাগ করলেও ২ কমিশনার তখন পদত্যাগ করেননি। ২০১৯ সালের ২০ মার্চ ষষ্ঠ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসাবে যোগ দেন মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ। ৫ বছরের জন্য নিয়োগ পেলেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন ৩ বছর ৭ মাস। দুই কমিশনারসহ তিনি ২৯ অক্টোবর পদত্যাগ করেন। ৩১ অক্টোবর তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার পর গেজেট প্রকাশ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন কমিশন নিয়োগের জন্য সম্প্রতি বাছাই কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই কমিটি চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করে সুপারিশ করবে। কিন্তু ইতোমধ্যে কমিশন শূন্য দুদকের প্রায় এক মাস হতে চলেছে। এ অবস্থায় বাছাই কমিটির সুপারিশের দিকে তাকিয়ে আছেন দুদক কর্মকর্তারা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor