Uncategorized

কয়রায় সুপারফুড ‘কিনোয়া’ চাষে সাফল্য

কিনোয়া হলো শস্যদানা। সারা বিশ্বে এটি সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। এর পুষ্টিমানও বেশ ভালো। বাংলাদেশে এটি তেমন পরিচিত নয়। তবে এবার খুলনার সুন্দরবন-সংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় কিনোয়ার চাষ হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সার্বিক সহযোগিতায় কয়রার উত্তর বেদকাশী এলাকায় অপ্রচলিত এ ফসলের আবাদে সফলতা পেয়েছেন কৃষক নওশের সরদার (৪০)। ফলে এই শস্যদানা নিয়ে এ অঞ্চলের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

নওশের সরদার বলেন, ‘কিনোয়া সম্পর্কে আমার আগে কোনো ধারণা ছিল না। এবারই প্রথম উত্তর বেদকাশী এলাকার বিলে আমার ১৬ শতাংশ জমিতে কিনোয়া চাষ করেছি। বিলটিতে লবণাক্ততা ও পানির সমস্যার কারণে আমন ধানের বাইরে কখনো কোনো ফসলের চাষ করেন না কেউ। গবেষণা বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কিনোয়া লাভজনক ফসল। তাদের পরামর্শে ও সহযোগিতায় কিনোয়া চাষ করেছি। তারা আমাকে বিনা মূল্যে বীজ, সার, প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রথম দিকে অনিশ্চয়তা থাকলেও এখন ফলন ভালো দেখে আনন্দ লাগছে। আমার দেখাদেখি ইতিমধ্যে নতুন এই ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেক কৃষক। কিনোয়ার বীজ রেখে দিতে বলেছেন স্থানীয় কৃষকেরা।’

লবণাক্ত অঞ্চলে কিনোয়া চাষের সম্ভাবনা সম্পর্কে কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের উপকূলের কৃষিকে খাপ খাইয়ে নিতে প্রচলিত কৃষি থেকে কৃষকদের নির্ভরতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিনোয়া লবণ ও খরা সহনশীল ফসল। অনুর্বর জমিতে খুবই স্বল্প খরচে কিনোয়া আবাদ করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক বাজারে কিনোয়ার ব্যাপক চাহিদা আছে। বিকল্প ফসল হিসেবে কিনোয়া চাষে কৃষকদের সম্পৃক্ত করা গেলে তা এ অঞ্চলের কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন, ‘২০২২ সাল থেকে আমরা কয়রা উপজেলায় কিনোয়া চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই করছি। কয়রার উত্তর বেদকাশী এলাকায় কিনোয়ার জাত উদ্ভাবনে আমাদের গবেষণা চলছে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কিনোয়ার বীজ এনে তিন বছরের একটি গবেষণা চলছে কয়রায়। এর মধ্যে খরা, বন্যা, লবণসহিষ্ণু কিনোয়ার জাত উদ্ভাবনের দ্বারপ্রান্তে আছি আমরা। পরীক্ষামূলকভাবে এবার কিনোয়া চাষে আমরা সফলও হয়েছি।’

কিনোয়ার পুষ্টিগুণ ও সম্ভাবনা সম্পর্কে মতিয়ার রহমান বলেন, কিনোয়া পাতা ও বীজ দেখতে শাকের মতো হলেও এই ফসলে আছে উচ্চমাত্রার হজমযোগ্য প্রোটিন। ধান বা সবজি চাষের চেয়ে এটি লাভজনক। কিনোয়াতে অ্যামিনো অ্যাসিড এবং লাইসিন থাকে, যা স্বাস্থ্যকর টিস্যু বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি খুবই উপকারী। কিনোয়া আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন ই, পটাশিয়াম ও ফাইবারের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। রান্না করা হলে এর দানাগুলো আকারে চার গুণ হয়ে যায়। ভাত, রুটির বিকল্প হিসেবে ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা, চীন ও ভারতের মানুষ কিনোয়া খান।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট খুলনার মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, ‘কিনোয়া উচ্চ আমিষসম্পন্ন বলে এটিকে সুপারফুড বলা হয়। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সে ক্ষেত্রে খরা ও লবণাক্ততা সহনশীল ফসল হিসেবে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠতে পারে নতুন ফসল কিনোয়া। কয়রায় লবণাক্ত পতিত জমিতে এবার শুরু করা হলেও আগামী দিনে আরও অনেক জায়গায় কিনোয়ার চাষাবাদ হবে। এর বাজারব্যবস্থাও আমরা নিশ্চিত করেছি।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor